ভয়াবহ বিপর্যয়ের মুখে উত্তর সিকিম। হড়পা বানে তিস্তার ভয়াল রূপ ধ্বংসলীলা চালাচ্ছে উত্তর সিকিমে। বুধবার ভোরে মেঘভাঙা বৃষ্টির জেরে লোনক হ্রদ ফেটে হুড়মুড়িয়ে জল নেমে আসে তিস্তায়। আচমকাই হড়পা বান আসায় তিস্তার জলস্তর বেড়ে যায়। আর তাতেই ভেসে নিখোঁজ হয়ে যান সেনার ২৩ জওয়ান। জলের তোড়ে ভেসে গিয়েছে সেনার বহু গাড়ি এবং বেশ কয়েকটি সেনা ছাউনিও। যুদ্ধকালীন তৎপরতায় উদ্ধারকাজ শুরু হয়েছে। বেশ কয়েকটি জায়গায় ধসও নেমেছে বলে স্থানীয় প্রশাসন সূত্রে খবর। এই ঘটনার জেরে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে চুংথাম। জওয়ানদের নিখোঁজের খবরে উদ্বেগপ্রকাশ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। রাজ্য সরকারের তরফে সমস্ত সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন তিনি।
https://x.com/MamataOfficial/status/1709442753959231836?s=20
এদিকে বেলা গড়াতে তিস্তায় ভেসে আসতে শুরু করেছে দেহ। জোরকদমে চলছে উদ্ধারকাজ। প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, সিকিমে উদ্ধারকার্যে এনডিআরএফ-এর চারটি টিম কাজ করছে। প্রয়োজনে প্রস্তুত রয়েছে আরও একটি টিম।
তিস্তা নদীর জল অস্বাভাবিকভাবে বাড়তে থাকায় উত্তর ও পূর্ব সিকিমে জারি লাল সতর্কতা। প্রায় একই পরিস্থিতি উত্তরবঙ্গে। মালবাজারের মহকুমার গজলডোবায় তিস্তার একাধিক লকগেট খুলে দেওয়ায় হু হু করে জল ঢুকছে। ডুবেছে বহু রাস্তা। তিস্তার সংরক্ষিত এলাকায় জারি করা হয়েছে হলুদ সতর্কতা।
সেনার ইস্টার্ন কমান্ড জানিয়েছে, মেঘভাঙা বৃষ্টিতে উত্তর সিকিমের লাচেন উপত্যকার লোনক হ্রদ উপচে পড়ে। চুংথাম বাঁধ ভেঙে বিপুল পরিমাণ জল চলে আসে তিস্তা নদীতে। এর ফলে মুহূর্তে তিস্তার জলস্তর প্রায় ১৫ থেকে ২০ ফুট বেড়ে যায়। দু’পাশ ছাপিয়ে পাহাড়ি সিকিমে ধ্বংসলীলা চালাতে থাকে তিস্তা। জলের তোড়ে সিংতামে সেনার একটি ছাউনি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। জানা যাচ্ছে, অন্তত ২৩ জন সেনা জওয়ানের কোনও খোঁজ মিলছে না। ভেসে গিয়েছে ছাউনির প্রায় সমস্ত কিছুই। জলের তলায় চলে গিয়েছে সেনার গাড়ি-সহ গোটা ছাউনি। যুদ্ধকালীন তৎপরতায় উদ্ধারকাজ শুরু হয়েছে। জানা গিয়েছে, সিংতামের কাছে বারদাংয়ে সেনা ছাউনিটি ছিল।
সিকিমের চুংথামে হ্রদ ফেটে পড়ার জেরে তিস্তার জলস্তর বৃদ্ধির প্রভাব ইতিমধ্যেই পড়তে শুরু করেছে তিস্তার উপর তৈরি একাধিক ব্যারাজে। প্রশাসনের আশঙ্কা, জলস্তর ২৫ থেকে ২৬ মিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পেতে পারে। তিস্তার গতিপথের দু’পাশে পড়ছে গাজলডোবা ব্যারাজ, দোমহনি, মেখলিগঞ্জ, হলদিবাড়ি, জলপাইগুড়ি শহর। তিস্তার বৃদ্ধি পাওয়া জলস্তরের জেরে ওই সব এলাকাই প্লাবিত হতে পারে বলে আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে বাংলাদেশের বিস্তীর্ণ এলাকাও।
প্রশাসন সূত্রে খবর, সিংথামে তিস্তার উপর একটি ফুটব্রিজ ছিল। নদীর জলস্তর বৃদ্ধি পাওয়ার জেরে সেই সেতুটি ভেঙে পড়েছে। এ ছাড়াও তিস্তার দাপটে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সিকিমের গোটা লাচেন উপত্যকাই। বহু বাড়ি ভেসে গিয়েছে। বহু মানুষও নিখোঁজ হয়েছেন বলে আশঙ্কা।