কোভিডের দাপট একটু কমতে না কমতেই এবার চোখ রাঙাচ্ছে অ্যাডিনো ভাইরাস। সবথেকে চিন্তার ব্যাপার যেটা তা হল এই অ্যাডিনো ভাইরাসের শিকার হচ্ছে শিশুরা। স্বাস্থ্য ভবন সূত্রে খবর, ইনস্টিটিউট অব চাইল্ড হেল্থে গত শুক্রবার পাঁচ শিশু মারা যায় এই অ্যাডিনো ভাইরাসের কবলে। এরপর রবিবার সকালে বিসি রায় শিশু হাসপাতালে মৃত্যু হয় আরও এক শিশুর। তবে বিসি রায় হাসপাতাল সূত্রে খবর, এই শিশুটি অ্যাডিনো ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছিল কি না সে ব্যাপারে নিশ্চিত নন চিকিৎসকেরা। এরপরই বিসি রায় হাসপাতালের তরফ থেকে স্বাস্থ্য ভবনের কাছে আর্জি জানানো হয়, এই হাসপাতালে রেফার রোগীর সংখ্যা কমানোর জন্য। এরই পাশাপাশি অঅযাডিনো ভাইরাসের এই বাড়বাড়ন্ত ঠেকাতে বেলেঘাটা আইডি হাসপাতাল শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক দিয়ে পিকু-নিকু খোলার প্রস্তাবও দেওয়া হয়েছে। এদিকে স্বাস্থ্য দপ্তর এও মেনে নিয়েছে , দক্ষিণবঙ্গে অ্যাডিনো ভাইরাসের বাড়বাড়ন্তের কথা। এই প্রসঙ্গে শিশুরোগ বিশেষজ্ঞরা এও জানাচ্ছেন, ‘এটা বহু পুরনো ভাইরাস।কোভিডের আগেও এই ভাইরাসের সংক্রমণ নজরে এসেছিল। এদিকে আবার গত দুপ্তাহ ধরে খুব বেড়েছে। এই ভাইরাসে সকলেই আক্রান্ত হতে পারেন। তবে শিশুদের মধ্যে এই সংক্রমণের হার সবথেকে বেশি।‘
এদিকে স্বাস্থ্য ভবন সূত্রে খবর, কলকাতার সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালগুলিতে শিশু ওয়ার্ডে প্রায় সমস্ত বেড ভর্তি।পরিস্থিতি সামাল দিতে নির্দেশিকা জারি করা হয়েছে স্বাস্থ্য দপ্তরের তরফ থেকে। এদিকে শনিবারের স্বাস্থ্য দপ্তরের তরফ থেকে এক নির্দেশিকায় জারি করা হয়। যেখানে রোগের লক্ষণ মূলত উল্লেখ করা হয়েছে। আর এই নির্দেশিকায় এটাই বলা হয়েছে যে, তিনদিনের বেশি জ্বর, কাশি, নাক থেকে জল পড়া অথবা গলা খুশখুশ, জোরে-জোরে নিশ্বাস নিলে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওযার জন্য। এরই পাশাপাশি নির্দেশিকায় এও জানানো হয়েছে ঠিক কোন পরিস্থিতিতে হাসপাতালে ভর্তির প্রয়োজন রয়েছে রোগীকে সে ব্যাপারেও। এই প্রসঙ্গে স্বাস্থ্য ভবনের তরফ থেকে জানানো হয়েছে, জ্বর যদি তিন থেকে পাঁচ দিন হয়ে যাওয়ার পরও না কমে বা শ্বাসকষ্ট বেড়ে যায়, বাড়িতে থাকাকালীন দেহে অক্সিজেনের মাত্রা ৯২ শতাংশের কম হয়, খাবার খাওয়ার পরিমাণ ৫০ শতাংশ কমে যায় তাহলে বুঝতে হবে আর দেরি না করে হাসপাতালে ভর্তির সময় এসে গিয়েছে।এছাড়াও দিনে পাঁচবারের কম প্রস্রাব হলে হাসপাতালে ভর্তি করতে হবে রোগীকে।
এদিকে সূত্রের খবর, অ্যাডিনো ভাইরাসের বাড়বাড়ন্ত নিয়ে কলকাতার বিভিন্ন সরকারি হাসপাতালের শিশুরোগ বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে বৈঠকে বসেন স্বাস্থ্য দপ্তরের অধিকর্তা।এই বৈঠকে মূলত হাসপাতালগুলিতে অ্যাডিনো ভাইরাসের আক্রান্ত শিশু রোগীর সংখ্যা ও তাদের পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা হয়। শিশু চিকিৎসকেরা কোভিডের মতোই অ্যাডিনো ভাইরাস সংক্রামক জানিয়ে মাস্ক পরা, দূরত্ববিধি মেনে চলা সহ বিশেষ নির্দেশিকা জারি করার প্রস্তাব দেন স্বাস্থ্য আধিকারিকদের।এঁদের এই প্রস্তাব মেনে অবশেষে সরকারি নির্দেশিকা জারি করে রাজ্য স্বাস্থ্য দপ্তর। সেখানে বাবা-মায়ের উদ্দেশ্যে ৫ পরামর্শের পাশাপাশি চিকিৎসক ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকেও অ্যাডিনো ভাইরাস মোকাবিলায় বিশেষ নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।