দমদম আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ডিপারচারে রাত ৯টা ২০মিনিট নাগাদ হঠাৎ-ই বিধ্বংসী আগুন। নিরাপত্তার কথা মাথায় রেখে সকলকে দ্রুত বার করে দেওয়া হয় চত্বর থেকে। আগুন লাগার সঙ্গে সঙ্গে বিমানবন্দরের কর্মীরা ফায়ার এক্সটিংগুইশার দিয়ে আগুন নেভানোর চেষ্টা করেন। তড়িঘড়ি খবর দেওয়া হয় দমকলে। প্রথমে দমকলের তিনটি ইঞ্জিন ঘটনাস্থলে পৌঁছায় এবং আগুন নেভানোর কাজ শুরু করে। পরে আরও একটি ইঞ্জিন ঘটনাস্থলে গিয়ে পৌঁছায়। এরপর আসে আরও ৪টি ইঞ্জিন, এমনটাই দমকল সূত্রে খবর। দমকলের চারটি ইঞ্জিন দিয়ে যুদ্ধকালীন তৎপরতায় চলে আগুন নেভানোর কাজ। আধ ঘণ্টার মধ্যে বিমানবন্দরের আগুন পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আসে। আগুন নিয়ন্ত্রণে এলেও এনডিআরএফ টিম ঘটনার ওপর নজর রাখে। ৮টি ইঞ্জিনের সাহায্যে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনার পর শুরু হয় সিকিউরিটি চেকিং। বিমানবন্দরে ঢুকতে পারেন যাত্রীরাও। তবে হতাহতের কোনও খবর মেলেনি।
দমদম বিমানবন্দর সূত্রে খবর, ডিপারচারের ৩ নম্বর গেটের ভিতর সিকিউরিটি চেকিং চলছিল, সেই সময়েই হঠাৎ আগুনের শিখা দেখা যায়। খানিকক্ষণের মধ্যেই ধোঁয়ায় ভরে যায় গোটা এলাকা। তবে এই আগুন লাগার কারণ সম্পর্কে নিশ্চিত নন কেউই। এই অগ্নিকাণ্ডের জেরে বিমান চলাচল ব্যাহত হয়। কলকাতা থেকে বেশ কিছুক্ষণের জন্য় কোনও বিমান রওনা দিতে পারেনি। তবে বিভিন্ন জায়গা থেকে বিমানগুলোর অবতরণ করানো হয়।
কলকাতা বিমানবন্দর হাই সিকিউরিটি জোন। বিমানবন্দরের ভিতরে সব সময়েই নিরাপত্তার কড়াকড়ি থাকে। এই বিমানবন্দরের মাধ্যমে উত্তর পূর্ব ভারত তথা উত্তর পূর্বের বিভিন্ন দেশে যাতায়াত করেন যাত্রীরা। চলে ভিআইপি মুভমেন্ট। কিন্তু তার মধ্যেও কীভাবে এই আগুন লেগে গেল, তা নিয়ে একাধিক প্রশ্ন উঠছে। যদিও বা আগুন লাগল, তবে একেবারে প্রাথমিক স্তরেই তা নেভানো গেল না তা নিয়েও উঠেছে প্রশ্ন। কলকাতা বিমানবন্দরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ কিছু না জানালেও অনুমান করা হচ্ছে, শর্ট সার্কিট থেকেই এই আগুন লেগেছে।
এদিকে দমদম বিমানবন্দর সূত্রে খবর, অগ্নিকাণ্ডের সময় যে সকল বিমান কলকাতা বিমানবন্দরে অবতরণ করেছে, সেই বিমানগুলি থেকে অনেকক্ষণ যাত্রীদের নামানো হয়নি। বিমানগুলি কলকাতা বিমানবন্দরের বে-তে যাত্রী-সহ অপেক্ষা করে। এদিকে যে সিকিউরিটি চেকিং এর জায়গায় আগুন লেগেছে সেই কাউন্টার বন্ধ করা হয়েছে আপাতত।
তবে বিমানবন্দরের কর্মীরা জানান, এরকম আগুন আগে দেখেননি। কর্মীরা জানান, ৯টার পর হঠাৎ ভয়ঙ্কর আওয়াজ শোনা যায়। গোটা লাউঞ্জ জুড়ে তখন এক চরম বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি। এদিকে নিরাপত্তার কথা মাথায় রেখে সকলকে বাইরে বার করে দেন সিআইএসএফ-এর কর্মীরা। এর মধ্যে কয়েকজন জানান, ‘প্রথমে আওয়াজ শুনে চমকে উঠি, বুঝতে পারিনি কিসের শব্দ। এত জোরে আওয়াজ হয়েছে যে মনে হচ্ছিল গুলি চলছে। তার পর কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে গোটা এলাকা ধোঁয়ায় ভরে ওঠে। তখনই বোঝা যায়, ভয়ঙ্কর আগুন লেগেছে।’
রাতে আগুন লাগার ঘটনার পর কলকাতা বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষের তরফে একটি টুইট করে জানানো হয়, রাত ৯ টা ১২ মিনিট নাগাদ বিমানবন্দরের চেক ইন এরিয়ে পোর্টাল ডি-এর কাছে আগুন লাগে। রাত ৯ টা ৪০ মিনিটের মধ্যে আগুন নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসা হয়। সব যাত্রীদের নিরাপদে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল বলেও জানায় বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ।
তবে এদিনের ঘটনায় একটি ব্যাপার কারও নজর এড়ায়নি। তা হল আগুন লাগার সঙ্গে সঙ্গে বিমান বন্দরের কর্মীদের ম্যানুয়ালি আগুন নেভাতে লক্ষ্য করা যায়। সেক্ষেত্রে স্বয়ংক্রিয় অগ্নি নির্বাপক ব্যবস্থা কি ছিল না, উঠছে প্রশ্ন।