আর্থিক অনটন চরমে উঠেছিল, ক্যানসারের চিকিৎসায় সর্বস্বান্ত হয়ে আত্মহত্যা বাঁশদ্রোণীর যুগলের

কলকাতা : সম্প্রতি পুলিশকে আত্মহত্যার কথা ই-মেল করে জানিয়ে আত্মঘাতী হন বাঁশদ্রোণীর যুগল। পুলিশ গেলেও বাঁচানো যায়নি তাঁদের। উদ্ধার হয়েছিল সুইসাইড নোট। তদন্তে সামনে এসেছে যুগলের শেষ মুহূর্তের আর্থিক অনটন, হেরে যাওয়ার কথা। আর তা দেখেই অনুমান, চরম সিদ্ধান্ত তাঁরা পরিকল্পনা করেই নিয়েছিলেন।গত মঙ্গলবার বাঁশদ্রোণীর ফ্ল্যাট থেকে মিলেছিল লিভ-ইন পার্টনার  হৃষীকেশ পাল ও রিয়া সরকারের দেহ।

জানা গিয়েছে, ক্যানসারে ভুগছিলেন তরুণ। তাঁর প্রেমিকা সমস্ত চেষ্টা করেও হার মেনেছিলেন। চিকিত্সার খরচ জোগাতে গিয়ে সর্বস্বান্ত হয়ে গিয়েছিলেন। এদিকে তরুণীর বাড়ির দরজাও বন্ধ ছিল তাঁর জন্য। ক্যানসার-আক্রান্ত প্রেমিকের সঙ্গে সম্পর্ক তাঁরা মেনে নেবেন না বলে জানিয়ে দিয়েছেন। একসময়ে শেষ হয়ে আসে সব টাকা। নিদারুণ অসহায় হয়েই যুগলে আত্মহত্যা (Suicide) করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন বাঁশদ্রোণীর হৃষীকেশ ও রিয়া। পুলিশি তদন্তে এমনই তথ্য সামনে আসছে।

হৃষীকেশ পাল ও রিয়া সরকার পুলিশকে মেল করে লিখে গিয়েছেন, তাঁদের শেষ সম্বল যেন তুলে দেওয়া হয় বন্ধু তাপস দাসের হাতে। ডায়মন্ড হারবারের সেই যুবক পেশায় গাড়ির সার্ভিস সেন্টারের কর্মী। যুগলের মৃতদেহও ময়নাতদন্তের পরে তাঁর হাতেই তুলে দেওয়া হয়েছে, সুইসাইড নোট অনুযায়ী। হৃষীকেশ-রিয়ার শেষ সম্বল হিসেবে যে অর্থ তিনি হাতে পেয়েছেন, তা দিয়ে ক্যানসার আক্রান্ত রোগীদের পাশেই দাঁড়াবেন বলে জানিয়েছেন।

তাপস বলেন, ‘ক্যানসারের চিকিৎসা করাতে ওদের প্রচুর দেনা হয়ে যায়। রিয়ার পরিবারও পাশে ছিল না। তাই এমন চরম কাণ্ড ঘটাল ওরা। হৃষীকেশ-রিয়ার ফ্ল্যাটে আসবাবপত্র ছাড়াও সোফা, ফ্রিজ এবং এসি রয়েছে। আছে একটি স্কুটার এবং সামান্য কিছু সোনার গয়না এ সব কিছু বিক্রি করে সেই টাকা ক্যানসারের জন্যই কাজে লাগাতে চাই।

যাঁরা ক্যানসারকে হারাতে পারল না, তাঁদের শেষটুকু দিয়ে অন্তত ক্যানসারের বিরুদ্ধে লড়াইটা জারি থাকুক।’

জানা গাছে, আগে একটি কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থায় কাজ করতেন হৃষীকেশ কিন্তু পথ দুর্ঘটনায় গুরুতর জখম হওয়ার পরে চাকরি চলে যায়। এর পরে ধরা পড়ে ব্লাড ক্যানসার। প্রেমিকা রিয়া কাজ করতেন একটি পার্লারে। তাঁর বাড়িতে এই সম্পর্ক মেনে নেয়নি, তাই রিয়া বাড়ি ছেড়ে এসে পরিবারের অমতেই হৃষীকেশের সঙ্গে থাকতে শুরু করেন। শুরু করেন চিকিৎসা। জলের মতো টাকা খরচ হতে থাকে। বাজারে প্রায় ২৫ লক্ষ টাকার দেনা হয়ে যায়। শেষে আত্মত্যার মতো পথ বেছে নেন যুগলে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

four × four =