লিওনেল মেসিকে গালাগালি দিতে কিংবা সতীর্থ ও বিপক্ষ দলের ফুটবলারদের সঙ্গে আগ্রাসী মেজাজে কথা বলতে দেখা যায় না। অতীতে অনেক ম্যাচ হেরে মাথা নিচু করে মাঠ ছেড়েছেন আর্জেন্টিনার অধিনায়ক। তবে এবার আর পারলেন না। রুদ্ধশ্বাস ম্যাচ টাইব্রেকারে জিতে, সেমি ফাইনালের টিকিট হাতে পেয়েই সোজা চলে গিয়েছিলেন নেদারল্যান্ডসের কোচ লুইস ভ্যান গালের দিকে। মেসির বডি ল্যাঙ্গুয়েজ দেখে স্পষ্ট যে, ম্যাচের আগে ডাচ কোচের থেকে পাওয়া অপমান তিনি হজম করতে পারেননি। তাই বিপক্ষের কোচকে ঠারেঠোরে বুঝিয়ে দিলেন যে, ‘আপনার অনেক বয়স হল, এবার চুপ করে বিশ্রাম নিন!’ মেসি ও ভ্যান গালের এই ভিডিয়ো সোশ্যাল মিডিয়ায় দাবানলের মতো ছড়িয়ে পড়েছে। এর আগে অবশ্য আর্জেন্টিনার আর তারকা অ্যাঞ্জেল ডি মারিয়াও ডাচ কোচের বিরুদ্ধে মুখ খুলেছিলেন।
টাইব্রেকারে ডাচদের সবে হারিয়েছে আর্জেন্টিনা। উৎসব চলছে গ্যালারিতে, ফুটবলাররা আনন্দ করছেন মাঠে। মেসি এবং গোলকিপার এমিলিয়ানো মার্টিনেজ হঠাৎ ছুটে গেলেন নেদারল্যান্ডস ডাগ আউটর দিকে। কোচ ভ্যান গাল এবং কিছু নেদারল্যান্ডস দলের স্টাফদের সঙ্গে চলল বিতর্ক। তবে এই লড়াইয়ের নেপথ্যে ছিল অন্য এক লড়াই। মেসি বনাম ভ্যান গালের মধ্যে ‘ইগো’-র লড়াই। অবশ্য যুদ্ধের শুরু মোটেও মেসির তরফ থেকে হয়নি। বরং হাই ভোল্টেজ কোয়ার্টার ফাইনালের আগে আগুনে ঘি ঢালার কাজটা করেছিলেন ক্যানসার সারিয়ে মাঠে ফিরে আসা বিপক্ষের ৭১ বছরের কোচ। মেসিকে নিয়ে প্রশ্ন উঠতেই সাংবাদিক বৈঠকে সটান বলে দিয়েছিলেন, ‘মেসি ইজ চিলিং সামহোয়ার’! ও খুবই ভালো ফুটবলার। আক্ষরিক অর্থে বিপজ্জনক স্ট্রাইকার। সঙ্গে অসম্ভব সৃষ্টিশীল। মেসি যেমন গোল করে, তেমনই অনেক গোলের জন্য অ্যাসিস্ট করতে পারে। কিন্তু মেসির একটা দুর্বলতাও আছে। যখন ও পায়ের কাছ থেকে বল হারায়, তখন বল ধরার জন্য চেষ্টা করে না। সেই দুর্বলতা আমাদের কাজে লাগাতে পারে।’
ভ্যান গালের যুক্তি একেবারে উড়িয়ে দেওয়া যায় না। আধুনিক ফুটবলে বল হারানো মাত্র প্রেসিং করাটা যে কোনও ফুটবলারের জন্য অবশ্যপালনীয় এক কর্তব্য। তিনি ডিফেন্ডার না স্ট্রাইকার, তাতে কিছু আসে–যায় না। মেসি এই ক্ষেত্রে আশ্চর্য এক ব্যতিক্রম হয়েই আছেন। প্রতিপক্ষ যখন আক্রমণে ওঠে, বলতে গেলে মাঠে নিশ্চল দাঁড়িয়ে থাকেন! কিন্তু কোন সময় কোন মন্তব্য করা উচিত সেটা হয়তো ভুলে গিয়েছিলেন ভ্যান গাল। তারকা খেলোয়াড়দের এমনিতেই ‘ইগো’ বড্ড বেশি। এরমধ্যে সেই ব্যক্তি মেসি নামক মহাতারকা হলে তিনি তো পালটা দেবেনই। সেটাই দিলেন।
ভ্যান গালের রক্ষণকে ফালাফালা করে নাহুয়েল মোলিনাকে দিয়ে প্রথম গোলটা করিয়ে দিলেন। এরপর পেনাল্টি থেকে করে দিলেন দলের জন্য দ্বিতীয় গোল। আর এই গোলের সুবাদে কাপ যুদ্ধের মঞ্চে ১০টি গোল করে ফেললেন মেসি। কটাক্ষের জবাব দিলেন ভ্যান গাল-কে। মেসি তাঁর প্রতি কটাক্ষের জ্বালা মিটিয়ে ‘টোটাল ফুটবল’-কে একেবারে মাটিতে মিশিয়ে বিশ্বকাপ থেকেই ছিটকে দেবেন সেটা কে জানত!