পিতৃহারা লিয়েন্ডার, প্রয়াত হকি কিংবদন্তি ভেস পেজ

প্রাক্তন অলিম্পিয়ান হকি তারকা এবং খ্যাতনামা স্পোর্টস মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ভেস পেজ বৃহস্পতিবার রাত তিনটেয় কলকাতার এক বেসরকারি হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৮০ বছর। দীর্ঘদিন ধরে বার্ধক্যজনিত অসুস্থতায় ভুগছিলেন তিনি। শেষ কয়েক মাস ধরে বাড়িতেই চিকিৎসা চলছিল, তবে বুধবার সকাল থেকে শারীরিক অবনতি শুরু হয়—দেহের একাধিক অঙ্গ কাজ করা বন্ধ করে দেয় এবং কথা বলাও বন্ধ হয়ে যায়। খবর পেয়ে ছেলে, কিংবদন্তি টেনিস তারকা লিয়েন্ডার পেজ, তড়িঘড়ি কলকাতায় এসে বাবাকে হাসপাতালে ভর্তি করান, কিন্তু শেষ পর্যন্ত তাঁকে আর বাঁচানো যায়নি।

ভেস পেজ ছিলেন ভারতীয় হকির একজন তুখোড় মিডফিল্ডার। ১৯৭২ সালের মিউনিখ অলিম্পিকে ভারতীয় দলের সদস্য হিসেবে তিনি ব্রোঞ্জ পদক জেতেন। এর আগে ১৯৭১ সালে বার্সেলোনায় অনুষ্ঠিত হকি বিশ্বকাপেও ভারতকে ব্রোঞ্জ এনে দেন। মাঠে তাঁর দক্ষতা, দ্রুত সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা এবং লড়াকু মানসিকতার জন্য তিনি সমসাময়িকদের কাছে বিশেষ সম্মানিত ছিলেন।

খেলোয়াড়ি জীবন শেষে ভেস পেজ স্পোর্টস মেডিসিনে বিশেষজ্ঞ হিসেবে নতুন যাত্রা শুরু করেন। এই ক্ষেত্রে তিনি দেশের অন্যতম সেরা চিকিৎসক হিসেবে পরিচিতি পান। ভারতীয় ক্রিকেট দল, ডেভিস কাপ টেনিস দলসহ বহু জাতীয় ও আন্তর্জাতিক খেলোয়াড় তাঁর চিকিৎসা এবং ফিজিও থেরাপি থেকে উপকৃত হয়েছেন। তিনি একাধিক ক্রীড়া সংস্থার সঙ্গে যুক্ত থেকে খেলোয়াড়দের চোটমুক্ত ও সুস্থ রাখার জন্য নিরলস পরিশ্রম করেছেন।

ব্যক্তিগত জীবনে ভেস পেজের স্ত্রী জেনিফার পেজও ক্রীড়াঙ্গনের পরিচিত মুখ—তিনি ছিলেন ভারতীয় মহিলা বাস্কেটবল দলের অধিনায়ক। তাঁদের একমাত্র সন্তান লিয়েন্ডার পেজ ছোটবেলায় বাবার সঙ্গে হকি মাঠে যেতেন, এমনকি কয়েকবার গোলকিপিংও করতেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত হকি নয়, টেনিসকে বেছে নেন এবং বাবার সর্বাত্মক সমর্থনে বিশ্বমানের টেনিস তারকা হয়ে ওঠেন।

ভেস পেজ দীর্ঘদিন কলকাতার সিসিএফসি ক্লাবের সভাপতি ছিলেন। চলতি বছরের শুরুতে লিয়েন্ডার তাঁর সম্মানে একটি প্রদর্শনী ম্যাচের আয়োজন করেন, যেখানে কীর্তি আজাদ, ইরফান পাঠান, অরুণ লাল, মনোজ তিওয়ারির মতো তারকারা অংশ নেন।

তাঁর মৃত্যুতে ক্রীড়াজগতে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি সামাজিক মাধ্যমে শোকপ্রকাশ করে বলেন, হকি ও স্পোর্টস মেডিসিনে ভেস পেজের অবদান ভোলার নয়। ক্রীড়ামন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস তাঁকে ভারতীয় ক্রীড়াক্ষেত্রের এক অপূরণীয় ক্ষতি বলে বর্ণনা করেন এবং তাঁর পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানান।

ভেস পেজ শুধু একজন খেলোয়াড় বা চিকিৎসক ছিলেন না—তিনি ছিলেন একজন প্রেরণাদায়ক ব্যক্তিত্ব, যিনি মাঠে ও মাঠের বাইরে দুই জায়গাতেই সমান মর্যাদার আসন দখল করে রেখেছিলেন। তাঁর অবদান ও স্মৃতি চিরকাল ক্রীড়াপ্রেমীদের হৃদয়ে বেঁচে থাকবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

7 − 4 =