বাড়িভাড়া নিয়ে জাল ওষুধের ব্যবসা মালদার বাঁশবাড়ি এলাকায়, আটক ৪, তদন্তে পুলিশ

মালদা শহরের অভিজাত এলাকা হিসেবে পরিচিত একটি বাড়িভাড়া নিয়েই চলছিল বেআইনি ওষুধের কারবার। বিষয়টি জানতে পেরে অভিযান চালায় ইংরেজবাজার থানার পুলিশ। ভাড়াটিয়ার ঘরে ঢুকে চক্ষু চড়ক গাছ হয়ে যায় তদন্তকারী পুলিশকর্তাদের। একের পর এক অসংখ্য প্যাকেট ভর্তি উদ্ধার হয় বিভিন্ন ধরনের ওষুধ। যার মধ্যে ঘুমের ওষুধ এবং পেন কিলারের সংখ্যা ছিল বেশি। এত বিপুল পরিমাণ ওষুধ ভাড়া বাড়িতে কেন মজুত রাখা হয়েছে, তা নিয়ে চুলচেরা তদন্ত করতেই বেরিয়ে আসে আসল রহস্য। দীর্ঘ তদন্তের পর পুলিশের হাতে উঠে আসে জাল ওষুধ কারবারের বিশদ তথ্য। আর এই ঘটনাকে ঘিরে ইংরেজবাজার পুরসভার ১৪ নম্বর ওয়ার্ডের বাঁশবাড়ি এলাকায় সাধারণ মানুষের মধ্যে চরম আতঙ্ক ছড়িয়েছে। সংশ্লিষ্ট এলাকার একটি প্রাথমিক বিদ্যালয় সংলগ্ন ভাড়াবাড়িতে চলছিল এই বেআইনি ওষুধের কারবার। আর এই ঘটনায় বাড়ির মালিক-সহ মোট পাঁচজনকে আটক করেছে ইংরেজবাজার থানার পুলিশ। এদিকে জাল ওষুধ কারবারের অভিযোগে মূলত চারজনকে আটক করেছে পুলিশ। তাদের নাম টুলু শেখ, শাহিন শেখ, জাবেদ আখতার। এদের বাড়ি পুরাতন মালদা থানার মঙ্গলবাড়ি এলাকায়। অপর আরেকজনের নাম জিয়াউল শেখ। তার বাড়ি দক্ষিণ দিনাজপুরের হরিরামপুর এলাকায়। পাশাপাশি একইভাবে ওই বাড়ির মালিক আজাদ শেখকেও আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করছে ইংরেজবাজার থানার পুলিশ। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, অভিযুক্তরা আজাদ শেখের বাড়ি দীর্ঘদিন আগেই ভাড়া নিয়েছিল। বাড়ির এক পাশেই মালিক থাকলেও নাকি তিনি এব্যাপারে কিছুই জানতেন না। কলকাতা থেকে মূলত বিভিন্ন ধরনের ঘুমের ওষুধ এবং পেইনকিলার প্যাকেট মালদার এই ভাড়া বাড়িতে নিয়ে আসা হত। তারপরে প্যাকেট খুলে সেই ওষুধগুলি নতুন প্যাকেট করা হত। সেগুলি ওই ভাড়াবাড়িতেই মজুত রাখা হয়েছিল। এই ঘটনার পিছনে জাল ওষুধ তৈরির একটা বড় চক্র যুক্ত রয়েছে বলেই প্রাথমিক তদন্তে অনুমান করছে ইংরেজবাজার থানার পুলিশ। এদিন পুলিশের এই অভিযানের খবর পেয়ে এলাকার বাসিন্দারা অভিযুক্ত ওই বাড়ির সামনে ভিড় জমায়। স্থানীয় বাসিন্দাদের বক্তব্য, দীর্ঘদিন ধরেই চারজন ব্যক্তি আজাদ শেখের বাড়ি ভাড়া নিয়েছিল। তারা বাড়িতে মাঝেমধ্যে বড় বড় পিচবোর্ডের প্যাকেট নিয়ে যাতায়াত করত কিন্তু কে কি কাজ করত, সে সম্পর্কে কারোর কিছু জানা ছিল না। পুলিশ এদিন অভিযান চালাতেই সকলের টনক নড়ে যায়। ১৪ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর শম্পা সাহা বসাকের স্বামী মলয় বসাক বলেন, আমাদের ভাবতেই অবাক লাগছে এই ধরনের কোনও ঘটনা এলাকায় ঘটতে পারে। আজাদ শেখের বাড়ি ভাড়া তো অনেকদিন আগে নিয়েছিল ওরা। কিন্তু এখন জানতে পারছি সেখানে নাকি ওই বাড়ি থেকে নাকি জাল ওষুধের কারবার চলত। ইংরেজবাজার থানার পুলিশ জানিয়েছে, গোপন সূত্রে এদিন অভিযান চালিয়ে আজাদ শেখের বাড়িতে সেই ভাড়াটিয়াদের আটক করা হয়। সকাল ন’টা থেকে দুপুর তিনটে পর্যন্ত চলে তদন্ত এবং তল্লাশি। নানাভাবে আটক ওই চারজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ। কিন্তু অভিযুক্তদের অসংলগ্ন কথাবার্তাতেই পুলিশের সন্দেহ আরো বাড়িয়ে তুলেছে। তবে পুলিশের অনুমান বেনামী এই ওষুধগুলো প্যাকেট বদলে বাজারে চালানোর পরিকল্পনা নিয়েছিল অভিযুক্তরা। এই ঘটনার পিছনে জাল ওষুধ চক্রের বড়সড় চক্র জড়িত রয়েছে বলেও অনুমান পুলিশের। পুরো বিষয়টি নিয়ে তদন্ত চালানোর কথা জানিয়েছে ইংরেজবাজার থানার পুলিশ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

1 + fourteen =