দেশের গোপন নথি শত্রু দেশের হাতে তুলে দেওয়ার অভিযোগে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল ডিআরডিও-র বিজ্ঞানী প্রদীপ কুরুলকরকে। এরপর তার বিরুদ্ধে মহারাষ্ট্রের সন্ত্রাস দমন শাখা বা এটিএস-এর তরফ থেকে জমা দেওয়া হল চার্জশিট। আর তথ্যপাচারের অভিযোগে ধৃত ডিআরডিও-র বিজ্ঞানী প্রদীপ কুরুলকরের বিরুদ্ধে যে চার্জশিট এটিএস আদালতের কাছে পেশ করেছে, তাতে সামনে এসেছে প্রকৃত তথ্য। এটিএস-এর দাবি, প্রদীপের সঙ্গে হোয়াটসঅ্যাপে আলাপ হয় ‘জারা দাশগুপ্ত’ নামে কোনও এক মহিলার। একই সময়ে ‘জুহি আরোরা’র সঙ্গেও ভার্চুয়ালি পরিচয় হয় তাঁর। কিন্তু জারার সঙ্গে তিনি ঘনিষ্ঠ হয়ে পড়েন। সে ‘প্রেম’ এমন জায়গায় পৌঁছয় যে প্রদীপকে জারা জিজ্ঞেস করেন, ‘অগ্নি-৬ লঞ্চারের টেস্ট কি সফল?’ তাতে বিজ্ঞানী উত্তর দেন, ‘বেব, দ্য লঞ্চার ইজ মাই ডিজাইন। ইট ওয়াস গ্রেট সাকসেস!’
এই ‘বেব’ শব্দ নিয়েই রীতিমতো কাটাছেঁড়া শুরু করে এটিএস। এই কাটাছেঁড়া করতে গিয়েই তদন্তকারী অফিসারদের সামনে আসে আরও বেশ কিছু তথ্য। তাতে দেখা যায়, ‘জারাকে কাছে পাওয়ার জন্য তিনি এতটাই উদগ্রীব হয়ে ওঠেন যে, তাঁকে ২০২২ সালের সেপ্টেম্বর থেকে ২০২৩-এর ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত মিসাইল প্রোগ্রামের সব ডিটেল দিয়ে দেন। উদ্দেশ্য ছিল, তাঁর বেব-এর আস্থা অর্জন করা।
জারা নিজের পরিচয় দিয়েছিলেন ব্রিটেনে বসবাসকারী একজন সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে। শুধু তাই নয়, তিনি নিয়মিত অশ্লীল মেসেজ ও ভিডিয়ো পাঠাতেন অভিযুক্ত বিজ্ঞানীকে। পাশাপাশি ভয়েস ও ভিডিয়ো কলেও চলত আলাপ। এই দু’টি ফোনেরই কান্ট্রি কোড হিসেবে দেখাত +৪৪ অর্থাৎ ব্রিটেন। এ ভাবেই প্রেমের ‘টোপ’ দিয়ে ‘বঙ্গকন্যা’ ভূমি থেকে আকাশ ক্ষেপণাস্ত্র, ড্রোন, ব্রাহমোস ও অগ্নি মিসাইল সংক্রান্ত নানা গোপন তথ্যের নথি ও তথ্য পেয়ে যান প্রদীপের থেকে। তারপর তা তুলে দেন তাঁর বস আইএসআই প্রধানের হাতে। আদতে জারা আসলে একজন আইএসআই এজেন্ট। জুহিও তাই। তদন্তকারীদের কাছে প্রদীপ দাবি করেন, তিনি আন্দাজই করতে পারেননি, জারা ও জুহির অ্যাকাউন্ট দু’টির আড়ালে রয়েছে আইএসআই-এর ফাঁদ। তবে এটাও ঠিক জারার পরিকল্পনা ছিল নিখুঁত। তিনি, 26sweetpanda@gmail.com, dreamgirl56@gmail.com, common158@gmail.com এই তিনটি ইমেল আইডি-র পাসওয়ার্ড বিজ্ঞানীর সঙ্গে শেয়ার করেন। লক্ষ্য একটাই ছিল, ‘বিশ্বাস ও ভালোবাসার’ টোপ গেলানো। তার পরে অবশ্য কাজটা আর কঠিন হয়নি। জারার কথামতো দু’টো অ্যাপ বিজ্ঞানী ডাউনলোড করেন। এর ফলে তাঁর হ্যাক করে শত্রুশিবির। ডিআরডিও বিশেষজ্ঞদের নজরে আসে পুরো ঘটনা। এরপরই দ্রুত পুলিশে খবর দেন। ততক্ষণে অবশ্য ‘হ্যাকড ফোন’ থেকে ডিআরডিও-র যাবতীয় গোপন তথ্য আইএসআই-এর হেফাজতে।
১১৮৭ পাতার চার্জশিট অনুযায়ী, ২০২৩ সালে প্রদীপের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করে ডিআরডিও। এই সময়ে বিপদ বুঝে জারার নম্বর ব্লক করে দেন অভিযুক্ত বিজ্ঞানী। যদিও তারপর অন্য নম্বর থেকে তরুণী জানতে চান, তিনি কেন ব্লক করেছেন তাঁকে। ‘বেবকে দুঃখ দিতে না চেয়ে’ তিনি ফের ওই নম্বরে নতুন উদ্যমে কথোপকথন শুরু করেন। পুনের বাসিন্দা প্রদীপ বিবাহিত। তাঁর স্ত্রী পেশায় চিকিৎসক। অভিযুক্ত বিজ্ঞানী এখন পুনের ইয়েরওয়াড়া জেলে বন্দি।