আজও সম্প্রীতির ঐক্য বজায় রেখে চলছে কোতুয়ালি সেন বাড়ির দুর্গাপুজো

শতাধী প্রাচীন কোতুয়ালি সেন বাড়ির দুর্গা পুজো আজও সম্প্রীতির ঐক্য বজায় রেখেছে। সপ্তমীর সকালে পালকিতে করে কলা বউকে নিয়ে যাওয়া হয় পার্শ্ববর্তী মহানন্দা নদীর ঘাটে। সেখান থেকে কলা বউকে স্নান করিয়ে ঘটে জল ভরে দেবী মায়ের বেদীতে নিয়ে আসা হয়। আর তারপরেই শুরু হয় ধুমধাম করে দেবী দুর্গার আরাধনা। প্রায় ১৬৮ বছরের পুরনো কোতুয়ালি সেন বাড়ির দুর্গা পুজো আজও নিষ্ঠার সঙ্গে ঐতিহ্য বহন করে আসছে। যদিও এই পুজোর শুরু আরো আগে বলেই সেন বাড়ির সদস্যরা জানিয়েছেন। আগে পুজো হত বর্ধমানের শিখন্ড কাটোয়া এলাকায়। সেন বাড়ির পূর্বপুরুষের হাত ধরেই প্রায় ১৬৮ বছর আগেই বর্ধমান থেকেই দেবী মায়ের বেদী নিয়ে আসা হয় মালদার কোতুয়ালিতেই। তারপর থেকেই কোতুয়ালিতে পুজোর শুরু হয়। পুজোর বিশেষত্ব অষ্টমীতে কুমারী পুজো এবং দশমীতে দেবী দুর্গাকে নৌকোয় বসিয়ে বাইচ প্রতিযোগিতা। যা দেখতে গ্রামের বাসিন্দারা ভিড় করেন মহানন্দা নদীর ঘাটে। বিগত দিনে কোতুয়ালি সেন বাড়ির দুর্গা পুজোয় সামিল হতেন প্রয়াত প্রাক্তন রেলমন্ত্রী গনিখান চৌধুরির এবং তার পূর্বপুরুষেরা। বর্তমানে গনিখান সাহেব নেই। কিন্তু কোতুয়ালির সেন বাড়িতে পুজোর দিন গনিখান সাহেবের ভাই তথা দক্ষিণ মালদার সাংসদ আবু হাসেম খান চৌধুরি (ডালু) সপরিবারে সামিল হন। কোতুয়ালির সেন বাড়ির পুজোকে ঘিরে নানান ধরনের সাংßৃñতিক অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়। এবং এই পুজোকে ঘিরে অনেক গল্প প্রচলিত রয়েছে।
ইংরেজবাজার ব্লকের কোতুয়ালি গ্রাম পঞ্চায়েতের কোতুয়ালি এলাকায় রয়েছে সেন বাড়ি। পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, এই দুর্গা পুজোর প্রতিষ্ঠাতা রঘুনন্দন সেন। বর্তমানে তাঁর চার পুত্রের বংশধরেরা এই পুজোর পরিচালনা করে আসছেন। ব্রিটিশ রাজত্বের আগে থেকে সেন বাড়ির এই পুজোর শুরু হয় বর্ধমানের শিখন্ডী কাটোয়া এলাকায়। পরবর্তীতে সেই পুজো রঘুনন্দনবাবুর উদ্যোগেই মালদার কোতুয়ালিতে নিয়ে আসা হয়। সেন বাড়িতেই দেবী দুর্গার বিশাল একটি মন্দির রয়েছে। অত্যন্ত জাগ্রত দেবী মা বলেই বিশ্বাস রয়েছে স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে। পুজোর কটা দিন পংক্তিভোজনের আয়োজন করা হয়। সেন বাড়ির আত্মীয়-স্বজনেরাও পুজোর দিনগুলিতে দূরদূরান্ত থেকে কোতুয়ালিতে এসে সামিল হন। সেন বাড়ির প্রবীণ কর্তা শরদিন্দু সেন বলেন, আমাদের বাড়ির এই পুজো আজও সম্প্রীতির ঐক্য বহন করে চলেছে। একসময় বন্দুক ফাটিয়ে শুরু হত সন্ধি পুজো। বর্তমানে সপ্তমীর সকালে পালকিতে করে কলা বউকে নিয়ে যাওয়া হয় মহানন্দা নদীর ঘাটে। তার সঙ্গে পরিবার এবং পাড়া-প্রতিবেশীদের নিয়ে একটি বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রাও করা হয়। দশমীতে দেবী দুর্গাকে নৌকোয় চাপিয়ে মহানন্দা নদী ঘোরানো হয়। আর সেই উপলক্ষে চলে বাইচ প্রতিযোগিতা। এটা শতাধী প্রাচীন ঐতিহ্য। যা এখনো নিষ্ঠার সঙ্গেই পালিত হয়ে আসছে। পরিবারের সকল সদস্যদের সহযোগিতায় দেবী দুর্গা ধুমধাম করে পূজিত হন সেন বাড়িতে। যাকে ঘিরে পুজোর উৎসব আজও রয়েছে গোটা গ্রাম জুড়ে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

seven + twenty =