আজও বিথারী গ্রামে পাঠা বলি ও খয়রা মাছের ভোগে পুজিত হন খয়রা মা কালী

নিজস্ব প্রতিবেদন, বসিরহাটঃ ৭০০ বছরের প্রাচীন ঐতিহ্য ও পরম্পরা মেনে আজও ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তের সোনাই নদীর ধারে পূজিত হন মা খয়রা কালী। রীতি মেনেই পাঠা বলি ও খয়রা মাছের ভোগ দিয়ে পুজো হয় মায়ের। ১৩৮৪ খ্রিষ্টাব্দের একচালার মাটির দেওয়াল সময়ের সঙ্গে সঙ্গে পরিবর্তন হয়ে পাকা হয়েছে। মাটি থেকে পাথরে রূপান্তরিত হয়েছে মায়ের বিগ্রহ। তবে গোপাল সার্বভৌম’র পরবর্তীকালে পদবী হয় গোপাল চক্রবর্তী। যে ধারায় পুজো শুরু করেছিলেন তিনি, আজও তা মেনে চলা হয়। পারিবারিক ইতিহাস থেকে জানা যায়, রানি রাসমনির জামাতা মথুরাম মোহন বিশ্বাস চক্রবর্তীর বাড়ির প্রাচীন কালী মন্দিরের ইতিহাস সংস্কৃতিতে জড়িয়ে রয়েছে। জানা যায়, যশোরের রাজা প্রতাপাদিত্যের অনুরোধে একটি ধর্মীয় অনুষ্ঠানে যোগ দিতে বারানসির সাধু গোপাল চক্রবর্তী বেত্রাবতী নদী ধরে যশোরে যাচ্ছিলেন। নদীর যাত্রাপথে বিথারীর হাকিমপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের সোনাই নদীর পাড়ে বিথারী গ্রামের একটি শ্মশান ভূমির বিশাল বটগাছের তলায় বিশ্রাম করছিলেন। অমাবস্যার দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ায় সেদিন নিজের হাতে মাটির প্রতিমা তৈরি করে পুজো শুরু করেন। পুজো শেষে বেত্রাবতী নদীতে যান মায়ের বিগ্রহ মাথায় করে নিয়ে নিরঞ্জন দিতে। কিন্তু মাথায় থেকে মাকে নামাতে পারেননি। আদেশ হয় সেখানে মায়ের প্রতিষ্ঠানের। তিনি আপারগ হওয়াতে বিগ্রহ রেখে যশোরের রাজা প্রজাপতিত্বের দরবারে গিয়ে বিস্তারিত ঘটনা বলেন প্রতাপাদিত্যকে। তৎকালীন সময় রানি রাসমনির জামাতা মথুরামন বিশ্বাসকে রাজা প্রজাপতিত্ব সেখানে মন্দির ও বিগ্রহ প্রতিষ্ঠা করার জন্য বার্তা পাঠান। তারপর থেকেই ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তের সোনাই নদীর পাড়ে খয়রা কালী হিসেবে মা পূজিত হন উভয় সম্প্রদায় মানুষের কাছে। সেই প্রাচীনকাল থেকে আজও সম্প্রীতি বার্তা বহন করে আসছে এই পুজো। এখানে মায়ের বিগ্রহ বিসর্জন দেওয়া হয় না, সারা বছর মা এখানে পূজিত হন। মথুরামন বিশ্বাসের বিথারীর পূর্ণভূমিতে সাধক রামকৃষ্ণ দেব দু’বার এই মন্দির পরিদর্শন করেন এবং পুজোও করেন বলে কথিত আছে। বর্তমান প্রজন্মের অমল চক্রবর্তী বলেন, ‘এখনও পুজো হলে ওপার বাংলার মানুষেরা নদীর পাড়ে এসে দূর থেকে মায়ের পূজার্চনা দেখেন। অনেক বাংলাদেশী বৈধ পাসপোর্ট নিয়ে এখনও মায়ের পুজো দেখতে আসেন। কালীপুজোর দিন পাঠা বলি হয়। নিরামিষ রান্না করে সেগুলো গ্রামে প্রসাদ হিসেবে বিতরণ করা হয়। আর এখানের নদীর খয়রা মাছ দিয়ে মাকে ভোগ নিবেদন করা হয়। সেই ভোগও বিতরণ হয় মায়ের ভক্তদের মধ্যে। জাগ্রত মায়ের পুজো ও পুজোর নিষ্ঠাতে কোনও খামতি রাখা হয় না।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

11 − two =