অমিত শাহ আপকে অপ্রাসঙ্গিক দাবি করলেও জটিল অঙ্কের মুখে গুজরাত

শুভাশিস বিশ্বাস

কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের চোখে, ‘আপ শুরু করেছিল ভালই, কিন্তু হঠাৎ তাদের জোশ খতম। অমিত শাহ নিজেই বলেছেন, ‘ওসব আপ টাপ কেউ নেই, সামনে আছে কংগ্রেস, তাকে হারাতে হবে।’ অমিত শাহ স্বয়ং  হঠাৎ-ই আপকে একেবারে বিধানসভা নির্বাচনে অপ্রাসঙ্গিক হিসেবে চিহ্নিত করতে গুজরাত বিধানসভা নির্বাচন নিয়ে প্রশ্ন কিন্তু একটা তৈরি হলই। কারণ, পাশাপাশি মনে করিয়ে দিয়েছেন ২০০২-এর কথা, ওদের এমন শিক্ষা দেওয়া হয়েছে যে, ‘ওরা ঘরে ঢুকে গিয়েছে, অত্যাচার অনাচার করার কথা ভাবতেও পারছে না।’ এই ‘ওদেরকে’ বলতে অমিত শাহ কাদেরকে বোঝাচ্ছেন তা কিন্তু স্পষ্ট। যাঁদেরকে লক্ষ্য করে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে প্রায়ই বলতে শোনা যায়, ‘রেওড়ি কালচার।‘ বিরোধীরা নাকি কিছু টাকা, বিদ্যুৎ ফ্রি, যুবকদের টাকা দেওয়ার, বৃদ্ধদের পেনশন দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে নির্বাচন জেতার চেষ্টা করে। এদিকে উত্তরপ্রদেশেও তো একই কাণ্ড ঘটিয়েছে বিজেপি। এরপরই গুজরাতেও নির্বাচন জিততে কল্পতরু প্রধানমন্ত্রী মোদি স্বয়ং। মুখ্যমন্ত্রীকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের থেকেও আরও এক ধাপ এগিয়ে একের পর এক ঘোষণা হয়েছে। পশ্চিমবঙ্গে ‘সবুজ সাথী’ প্রকল্পে সাইকেল দেওয়া হয়েছিল। আর এখানে দেওয়া হচ্ছে স্কুটি।যে ‘দুয়ারে রেশন’ নিয়ে বাংলা তোলপাড়, গুজরাতে বিজেপি ক্ষমতায় থাকলে এই ‘দুয়ারে রেশন’-এরই  প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন তাঁরা।

আর এখানেই তৈরি হচ্ছে এক জটিল অঙ্ক। বিজেপি যদি তার ভোট ধরে রাখতে পারে আর আপ ১৪ থেকে ১৬ শতাংশ মতো ভোট পায় আর কংগ্রেসের ঝুলিতে যায় ৩০ থেকে ৩২ শতাংশ ভোট, তাহলে বিজেপি সত্যিই ১৫০ বা তার কাছাকাছি আসন পাবে কিনা তা নিয়ে কিন্তু প্রশ্ন থাকছেই। শহরে আর গ্রামের ভোট দু’রকমের হলে অনেকদিন পরে একটা ত্রিশঙ্কু সরকার দেখবে গুজরাত। এদিকে আপ ২ থেকে ৪ শতাংশ ভোট পেলে আবার একটা কংগ্রেস-বিজেপির লড়াই হবে সেয়ানে- সেয়ানে।  সেক্ষেত্রে বিজেপি ১৫০ তো বহু দূর, ৮৫ থেকে ৯০ পেয়ে কোনওরকমে সরকারে আসতে পারে। কাজেই এই নির্বাচনের ফল নিয়ে চিন্তা বিজেপির আছে। আর সেটাই বিজেপির কেন্দ্রীয় স্তরের নেতাদের চিন্তায় ফেলেছে। কারণ, আপ যদি ১৫-১৮-২০ শতাংশ ভোট পেয়ে যায়, তাহলে সমস্যা রয়েছে ২০২৭-এ। উস্কে দিচ্ছে পঞ্জাবের স্মৃতি।

২০১৭তে পঞ্জাব বিধানসভা নির্বাচনে আপ ১১৪টা আসনের মধ্যে মাত্র ২০টা আসন পেয়েছিল। আর শতাংশের বিচারে ভোট পেয়েছিল ২৩.৭ শতাংশ। ৫ বছর পরে এ বছর ফেব্রুয়ারিতে আপ ৪২ শতাংশ ভোট পেয়েছে, ৯২টা আসন পেয়ে ক্লিন সুইপ অর্থাৎ আক্ষরিক অর্থেই ঝাড়ু চালিয়েছে আম আদামি পার্টি। আর সেই কারণেই আপকে পাত্তা না দেওয়ার একটা ভান করছেন বিজেপির চাণক্য। কারণ, বিজেপি একটা নির্বাচন লড়ে, সামনের আরও দুটো নির্বাচনকে মাথায় রাখে। তাদের মাথায় আছে ২০২৪, ২০২৭, কাজেই বিবৃতি যাই আসুক, বিজেপি আপ-এর বিরুদ্ধে জোর লড়াই দিচ্ছে, যদিও সেই লড়াই সেয়ানে সেয়ানে হচ্ছে। ফলে নির্বাচনের আগে চলেছে প্রতিশ্রুতির বন্যা। বিজেপি বলেছে মেরিটের ভিত্তিতে ছাত্রীদের স্কুটি দেওয়া হবে। এদিকে কেজরিওয়াল জানিয়েছেন, প্রত্যেককেই দেওয়া হবে। নার্সিং স্টাফদের বকেয়া টাকা মেটানোর কথা বলেছে বিজেপি, আপ জানিয়েছে তাদের পে-স্কেল বাড়ানো হবে, ইনসিওরেন্স-এর বকেয়া টাকাও দেওয়া হবে। অর্থাৎ দু’ দলই আপাতত কল্পতরু। এর থেকে বাইরে কংগ্রেস এক স্থানীয় লড়াই লড়ছে।

এদিকে অনেকের ধারনা, আপ তো কংগ্রেসের ভোট কেটে বিজেপির রাস্তা সাফ করে দেবে। সেটা হতেই পারে। এরই পাশাপাশি কিন্তু আরও একটা অন্য সম্ভাবনাও সামনে আসছে। আপ তাদের প্রচারে দাগ কেটেছে গুজরাতের শহুরে মানুষের মধ্যে।  আর তারই জেরে বিজেপির পাকাপোক্ত আসনগুলোতে পায়ের তলার মাটি একটু হলেও সরেছে বিজেপির। এদিকে এমনটাও শোনা যাচ্ছে, কংগ্রেস নাকি তাদের গ্রামীণ আসন ধরে রাখবে। পাশাপাশি এটাও ঠিক, শহরের মানুষজন নাকি পরিবর্তনের কথা বলছে। এদিকে আবার গ্রামের মানুষের এখনও পছন্দ হাত চিহ্নই। কাজেই গুজরাত নির্বাচন নিয়ে তৈরি হয়েছে ধোঁয়াশা। একদল বলছেন, আপ আর কংগ্রেস অ্যান্টি ইনকমব্যান্সি ভোট ভাগাভাগি করে বিজেপিকে রেকর্ড আসন দিতে চলেছে। আবার একদলের ধারনা, শাঁখের করাতে বিজেপি। শহরে আপ, তো গ্রামে কংগ্রেস। সব মিলিয়ে মিশিয়ে সাংঘাতিক এক জট পাকিয়েছে ২০২২-এর গুজরাত নির্বাচনে। ফলে আদতে কী হবে কেউ জানে না। কারণ, মানুষের মন পড়া সম্ভব নয় সমীক্ষকদের। ফলে অপেক্ষা করতেই হবে ৮ তারিখের জন্য।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

17 + 19 =