কোটি টাকা দিয়ে রেশম কাটার মেশিন দেওয়া হলেও তা নিষ্প্রয়োজন শিল্পীদের কাছে!

রেশম শিল্পকে দীর্ঘ প্রসারিত করার ক্ষেত্রে জোর দিয়েছে রাজ্য সরকার। এমনকী রেশম শিল্পের মান উন্নয়নের ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিয়েছে মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি। কিন্তু এই রেশম শিল্পের সুতো তৈরির ক্ষেত্রে মাঝপথে কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে রেশম কাটাই মেশিন। যা মালদার কালিয়াচকের চাষি থেকে ব্যবসায়ীদের ক্ষেত্রে চরম সমস্যা তৈরি করেছে। রেশম ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, রাজ্য সরকার কয়েকটি সংস্থাকে আটটি রেশম কাটার মেশিন প্রদান করেছে। যার মূল্য কয়েক কোটি টাকা। কিন্তু সেই রেশম কাঁটাই মেশিনে উন্নতমানের রেশম গুটি প্রয়োজন। যা কালিয়াচকে উৎপাদন হয় না। যে ধরনের রেশম গুটি কালিয়াচকে উৎপাদন হয় তার জন্য প্রয়োজন হচ্ছে ছোটমানের কটেজ মেশিন। এই একেকটি মেশিনের দাম মাত্র দুই লক্ষ টাকা। আর এই মেশিন যদি এলাকার রেশম চাষি বা ব্যবসায়ীদের মধ্যে দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়, তাহলে রেশম সুতো উৎপাদনের ক্ষেত্রে চাষি বা ব্যবসায়ীদের সমস্যায় পড়তে হবে না। কাজেই রাজ্য সরকারের বিগত দিনের প্রজেক্ট বাতিল করে নতুনভাবে কটেজ মেশিন দেওয়ার জন্য মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি এবং মুখ্য সচিবের কাছে গণস্বাক্ষর সম্বলিত কালিয়াচকের শতাধিক রেশম চাষি ও ব্যবসায়ীরা চিঠি লিখে পাঠানোর কথা জানিয়েছেন।
উল্লেখ্য, মালদা জেলায় প্রায় ৬৫ হাজার পরিবার রেশমচাষের সঙ্গে যুক্ত রয়েছে। জেলার ১১ টি ব্লকে রেশম চাষ হয়ে থাকে। প্রায় ৫ লক্ষ মানুষ রেশম শিল্পের সঙ্গে পরোক্ষভাবে যুক্ত থেকে জীবনযাপন করছেন। জেলার অর্থনৈতিক শক্তি অনেকটাই রেশম শিল্পের উপর নির্ভরশীল। কিন্তু রেশম শিল্প আজও চূড়ান্ত অবহেলার শিকার। মালদার প্রায় কয়েক লক্ষ মানুষ আজ রেশম চাষ থেকে মুখ ফিরিয়ে নেওয়ার জন্য অপেক্ষা করছেন। বিকল্পের সন্ধানে তাঁরা মরিয়া হয়ে চেষ্টা চালাচ্ছেন। কিন্তু তাঁদের টিকিয়ে রাখতে প্রকৃত অর্থে কোনো উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে না বলে অভিযোগ। রাজ্য সরকার নিজের সামর্থ্য অনুযায়ী অনুদান দিয়ে মালদা জেলা সহ রাজ্যের রেশম শিল্পকে বাঁচিয়ে রাখার চেষ্টা করছে।
মালদা জেলার কালিয়াচক ১ ব্লকের রেশম সুতোর হাব হিসেবে শেরশাহী এলাকা পরিচিত সেখানকার কিছু গ্রুপকে মাল্টি অ্যান্ড রিলিং মেশিন দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এতে রেশম কাটাই শিল্পের সঙ্গে যুক্তরা প্রচন্ড ক্ষুব্ধ।
রেশম ব্যবসায়ী ইসা শেখ, মইনুদ্দিন শেখদের বক্তব্য, কিছু লোককে এই ধরনের উন্নত মানের মেশিন পাইয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করা হচ্ছে সংশ্লিষ্ট দপ্তরের থেকে। অথচ এই মেশিন দিয়ে কালিয়াচকের উৎপাদিত রেশম থেকে সুতো তৈরি কাজ করা হচ্ছে না। ছোট কটেজ মেশিন যার দাম মাত্র ২ লক্ষ টাকা, সেই মেশিন যদি ব্যবসায়ী বা চাষিদের দেওয়ার ব্যবস্থা করে রাজ্য সরকার। তাহলে এই সমস্যা থাকে না। যে ধরনের রেশম গুটি কালিয়াচকের উৎপাদন হয়, তাতে ছোট মেশিনের মাধ্যমে সুতো তৈরির কাজ করা হয়। ফলে ভিন রাজ্যের উপর নির্ভরশীল হয়ে থাকতে হবে না এলাকার চাষি ও ব্যবসায়ীদের। যদিও এ ব্যাপারে কালিয়াচক ২ কারিগরি সহায়তা কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত অফিসার সালাউদ্দিন শেখ অবশ্য কোনও মন্তব্য করেননি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

4 × 2 =