খাটের মাচা তৈরি করে রোগীকে হাসপাতালে নিয়ে গেলেও হল না শেষ রক্ষা!

খাটে শুয়ে অসুস্থ গৃহবধূ। আর সেই খাট বাঁশ আর দড়ি দিয়ে পালকির মতো বেঁধে বেহাল রাস্তা দিয়ে হেঁটে নিয়ে যাচ্ছেন অসুস্থ গৃহবধূর পরিবারের লোকেরা। যদিও শেষ পথে হাসপাতালে যাওয়ার আগেই মৃত্যু হয় ওই গৃহবধূর। শনিবার সকাল থেকেই সোশ্যাল মিডিয়ায় এমন ভাইরাল ভিডিও ছড়িয়ে পড়তে তুমুল শোরগোল পড়ে গিয়েছে মালদায়।

ঘটনাটি ঘটেছে মালদা জেলার আদিবাসী অধ্যুষিত বামনগোলা ব্লকের গোবিন্দপুর মহেশপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের মালডাঙা গ্রামে। আর এমন মধ্যযুগীয় বর্বরতার ছবি সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হতেই রাজনৈতিক মহলে চরম বিতর্ক তৈরি হয়েছে। যদিও স্থানীয় বাসিন্দাদের বক্তব্য, গ্রামের এই কাঁচামাটির রাস্তায় কোনো গাড়ি প্রবেশ করতে পারে না। তাই ওই গৃহবধূর পরিবারের লোকেরা এই ভাবেই খাটের মাচা তৈরি করে নিকটবর্তী হাসপাতালে নিয়ে যাচ্ছিলেন। কিন্তু শেষ পথে আর ওই গৃহবধূকে বাঁচানো যায়নি।

স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, মৃত গৃহবধূর নাম মামনি রায় (২০)। দুই বছর আগে এলাকার বাসিন্দা কার্তিক রায়ের সঙ্গে বিয়ে হয়েছিল মামনির। সম্প্রতি তিনি জ্বরে ভুগছিলেন বলে খবর। শারীরিক অবস্থার অবনতি হওয়ায় এলাকার বাসিন্দারা তাঁকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার তোড়জোড় করেন। খাটিয়াতে শুইয়ে তাঁকে নিয়ে যাওয়া হয় হাসপাতালে। তবে শেষ রক্ষা হয়নি। বাঁচানো যায়নি মামনিকে। বাড়িতে তাঁর ২ বছরের এক সন্তানও রয়েছে। রাস্তা খারাপে জন্য প্রাণ হারাল ২০ বছর বয়সি মামনি রায়।

মৃত গৃহবধূর আত্মীয়দের বক্তব্য, মালডাঙা গ্রাম থেকে বামনগোলা ব্লকের মোদিপুকুর গ্রামীন হাসপাতালের দূরত্ব প্রায়ই ১৫ কিলোমিটার। প্রায় ৫ কিলোমিটার গ্রামের বেহাল রাস্তায় কোনো যানবাহন চলে না। হাতে কিছু টাকা থাকলেও প্রত্যেকেই নিরুপায়। কারণ অ্যাম্বুল্যান্স হোক বা যেকোনো ভাড়া গাড়ি এই গ্রামে রাস্তায় আসার কোনও ব্যবস্থাই নেই। কারণ কাঁচা মাটির রাস্তা এতটাই বেহাল। শুক্রবার রাত থেকেই ওই গৃহবধূর শারীরিক অবস্থার অবনতি হতে থাকে। ভোররাতে বহুবার ফোন করলে অ্যাম্বুল্যান্স রাস্তা খারাপের জন্য আসতে চায়নি। সেই পরিপ্রেক্ষিতে কোনও বুদ্ধি না পেয়ে পরিবারের লোকেরা খাটিয়াতে দড়ি বেঁধে ঘাড়ে করে নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করেন। আর এমনই একটি ছবি সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়।

এ বিষয়ে তৃণমূল কংগ্রেসের জেলার সহ সভাপতি বাবলা সরকার জানিয়েছেন, এই ধরনের ঘটনার কথা আমার জানা নেই। রাজ্য সরকার যেভাবে বিনামূল্যে চিকিৎসার ব্যবস্থা করছেন এরকম কোনও ঘটনা ঘটার কথা নয়। বামনগোলা ব্লকের বিজেপি নেত্রী বীণা কীর্তনীয়া বলেন, রাজ্যজুড়ে নাকি নানা প্রকল্পের মাধ্যমে গ্রামীণ এলাকায় প্রচুর রাস্তাঘাট হচ্ছে। অথচ বেহাল রাস্তার কারণে অসুস্থ গৃহবধূ সঠিক সময় চিকিৎসা না পেয়ে চলে গেল। অথচ প্রশাসন নিশ্চুপ। যদি সত্যিই গ্রামীন এলাকার রাস্তার উন্নয়ন হত তাহলে বামনগোলার মধ্যযুগীয় বর্বরতার এমন ছবি দেখতে হত না।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

20 − 7 =