মমতাকে ছাড়া হলেও অভিষেককে ছাড়া নয়, আর্জি শুভেন্দুর

কুন্তল ঘোষের চিঠি প্রসঙ্গে রক্ষাকবচ চেয়ে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হন তৃণমূলের সেকেন্ড-ইন-কমান্ড অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। উদ্দেশ্য, যাতে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা কোনও কঠোর পদক্ষেপ করতে না পারে। তবে অভিযেকের এই আর্জি শুক্রবার সুপ্রিম কোর্ট নাকচ করে জানিয়ে দেয়, জিজ্ঞাসাবাদ করতে পারে তদন্তকারী সংস্থা। অর্থাৎ এই মামলায় কলকাতা হাইকোর্টের সিঙ্গল বেঞ্চ ও ডিভিশন বেঞ্চ যে রায় দিয়েছিল তাও বহাল রাখে শীর্ষ আদালতও। তবে ২৫ লক্ষ টাকার যে জরিমানা, তাতে আপাতত স্থগিতাদেশ দেয় বিচারপতি জেকে মাহেশ্বরী ও বিচারপতি পিএস নরসিমার বেঞ্চ। আদালতের এই নির্দেশের পরই শুভেন্দু অধিকারী বলেন, ‘সারদাকাণ্ডে সিবিআই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে ছাড় দিয়েছে। তবে এক্ষেত্রে যেন তেমনটা না হয়।’ একইসঙ্গে শুভেন্দু তৃণমূলের সেকেন্ড-ইন-কমান্ডকে কটাক্ষ করে জানান, ‘উনি আর্থিক জরিমানায় অন্তর্বর্তী স্থগিতাদেশ ছাড়া আর কিছু পাননি। স্বাভাবিকভাবে যে উদ্দেশ্য নিয়ে হাইকোর্ট বা সুপ্রিম কোর্টে গিয়েছিলেন, তারা মনে করেছে এটা একটা বড় দুর্নীতি। তদন্ত হস্তক্ষেপ করতে চায়নি কোর্ট। বিরোধী দলনেতা হিসাবে আমি এই নির্দেশকে স্বাগত জানাই। যারা গ্রেপ্তার হয়েছে তাঁরা কালেক্টর। তাঁদের সঙ্গে এখানকার শাসকদলের মাথাদের সরাসরি যোগাযোগ ছিল। আমি আশা করব এজেন্সি যেভাবে সারদা চিটফান্ড দুর্নীতিতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে ছেড়ে রেখেছেন, অন্তত এ ক্ষেত্রে সেটা করবেন না। গোটা পশ্চিমবাংলার জনগণ এটা চাইছেন, মাথাকে ধরতে হবে।’
এখানে বলে রাখা শ্রেয়, ধর্মতলায় শহিদ মিনারে এক সভামঞ্চ থেকে অভিষেকের বক্তব্য ছিল, মদন মিত্রদের গ্রেপ্তারির পর বারবার তাঁর নাম বলার জন্য চাপ দেওয়া হয়েছিল কেন্দ্রীয় তদন্ত্কারী এজেন্সির তরফ থেকে। অন্যদিকে নিয়োগ মামলায় ধৃত কুন্তল ঘোষ আদালত ও হেস্টিংস থানায় অভিযোগ জানিয়েছিলেন, তাঁকে ইডি-সিবিআই অভিষেকের নাম বলার জন্য চাপ দিচ্ছে। আর তা নিয়েই মামলা হয় হাইকোর্টে। এরপর অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের সিঙ্গল বেঞ্চের রায়কে চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টে যান অভিষেক। শীর্ষ আদালতের রায়ে বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের এজলাস থেকে এই মামলা বদলে বিচারপতি অমৃতা সিনহার বেঞ্চে যায়। তবে নির্দেশে হেরফের হয়নি। এরপর ডিভিশন বেঞ্চে গেলেও সেই জিজ্ঞাসাবাদ সংক্রান্ত যে নির্দেশ তা বহাল থাকে। পাশাপাশি কলকাতা হাইকোর্টের তরফ থেকেও জানানো হয়, এ অভিযোগ যেহেতু গুরুতর। সঙ্গে ৩৫ লক্ষ টাকা জরিমানা দিতেও নির্দেশ দেওয়া হয়। এরপরই সিবিআই তাঁকে ডেকে পাঠায়। সেই কারণে এজেন্সি চাইলে অভিষেকের সঙ্গে কথা বলতে পারে। এরপরই অভিষেকও সুপ্রিম কোর্টের দ্বাস্থ হন। তবে শুক্রবার সুপ্রিম নির্দেশেও অস্বস্তি বহাল তৃণমূলের সেকেন্ড-ইন-কমান্ডের।
এদিকে শুক্রবারের সুপ্রিম-নির্দেশ প্রসঙ্গে তৃণমূল সাংসদ শান্তনু সেন বলেন, ‘এর আগেও বহুবার অভিষেক বাঘের বাচ্চার মতো ইডি-সিবিআইয়ের মুখোমুখি হয়েছে।’ সঙ্গে এ প্রশ্নও তুলে জানতে চান, ‘তবে একটা জিনিস বুঝলাম না, কুন্তল ঘোষের মুখে অভিষেকের নাম বসানোর চেষ্টা করা হচ্ছে, সিবিআই অফিসাররা চেষ্টা করছে, আর তার জন্য যদি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে ডেকে জিজ্ঞাসাবাদ করা যেতে পারে। সারদাকর্তা সুদীপ্ত সেনের লেখা চিঠি যেখানে শুভেন্দু অধিকারী, সুজন চক্রবর্তী, অধীর চৌধুরীদের টাকা নেওয়ার কথা লেখা আছে, তাহলে কেন তাঁদের ডাকা হবে না?’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

eighteen − 17 =