‘যদি কেউ ভাবে গায়ের জোরে, ব্যালট বাক্স ভেঙে, নিজেদের নাম ঢুকিয়ে, প্রার্থীপদ দলের থেকে আদায় করব, তাঁরা মুর্খের স্বর্গে বাস করছেন।’ শীতলকুচির জনসভা থেকে এমন ভাষাতেই হুঁশিয়ারি দিতে দেখা গেল তৃণমূলের সেকন্ড-ইন-কমান্ড অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে। একইসঙ্গে এও জানান, ‘বুধবার সকাল ১০ টা থেকে বিকেল ৫ টা পর্যন্ত গোঁসাইমারি মাঠে আবার ভোট নেওয়া হবে। বিকেলের মধ্যে রিপোর্ট আমি নিজে দেখব।’ প্রসঙ্গত মঙ্গলবার অভিষেকের সভা শেষেই ওই দুই সভাস্থলে পঞ্চায়েতে প্রার্থী ঠিক করতে গোপন ব্যালটে ভোট হওয়ার কথা ছিল। এদিকে অভিষেক সভাস্থল থেকে চলে যেতেই গোপন ব্যালটে ভোট ঘিরে দুই জায়গাতে উত্তেজনা ছড়ায়। হাতাহাতিতে জড়িয়ে পড়েন দু’দল তৃণমূল কর্মী সমর্থক। এমনকী ব্যালট বাক্স ছিনতাই করারও অভিযোগ ওঠে।
এরই পাশপাশি অভিষেক এদিন এও বলেন, ‘একটু আগে দুটি মিটিং ছিল। সিতাইয়ের গোঁসাইমারিতে আমার সভামঞ্চের সামনে ব্যালট বাক্স রাখা ছিল। আমি শুনলাম কিছু অতি উৎসাহী মানুষ ভোট দিতে গিয়ে ব্যালট বাক্স ভেঙে ফেলেছে। কোথায় সন্ত্রাস হতে পারে জানি। সেই কারণে তৃণমূলে নব জোয়ার শুরু করেছি। আমি সিতাইয়ের বিধায়ক ও জেলা সভাপতিকে বলব আবার ভোট নিতে।’ সঙ্গে এও মনে করিয়ে দেন, আমি এই কারণে এই কর্মসূচি শুরু করেছি। ওই অঞ্চলে কারা দায়িত্বে রয়েছেন এবং এই ঘটনা ঘটিয়েছেন আমার জানা আছে। পাহারাদারের নাম অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। আমি প্রশাসনককে সহযোগিতা করতে অনুরোধ করব। সংবাদমাধ্যমকেও বলব সেখানে উপস্থিত থাকতে। কারও গা-জোয়ারি বা দাদাগিরি চলবে না। মানুষ তাঁদের প্রার্থী নিজেরাই ঠিক করবে।’ সঙ্গে এ বার্তাও দেন, ‘গোপন ব্যালটে ভোট দিন অথবা ৭৮৮৭৭৭৮৮৭৭-এই নম্বরে ফোন করে কাকে চান জানান।’
তবে এই ঘটনায় তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব আবার প্রকাশ্যে। শুধু তাই নয়, মঙ্গলবার কোচবিহার থেকে ‘তৃণমূলে নব জোয়ার’ নামে জনসংযোগ যে যাত্রা শুরু করেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যা তার প্রথম দিনেই ছন্দপতন।
এদিন সাহেবগঞ্জের সভা থেকে বক্তব্য রাখার সময় অভিষেক জানান, ‘বাংলার উন্নয়নের জন্য আগামী পঞ্চায়েত নির্বাচনে ভোট দিতে হবে।‘ পাশাপাশি এও বলেন, ‘২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে সার্বিক উন্নয়নের কথা ভেবে আপনারা কেউ ভোট দেননি। আগামী পঞ্চায়েতে কোনও ধর্মীয় ভাবাবেগ নয়। আপনার বাড়ির শিশুর উজ্জ্বল ভবিষ্যতের কথা ভেবে ভোট দিতে হবে। নিজের প্রার্থীকে বেছে নিতে ভোট দিতে হবে। তৃণমূল কংগ্রেস আপনাদের প্রার্থী বেছে নেওয়ার সুযোগ দিচ্ছে। গোপন ব্যালটে ভোট দিন, আপনারা যাঁকে চাইবেই তাঁকেই প্রার্থী করা হবে।’ একইসঙ্গে এদিনও অবাধ ও শান্তিপূর্ণ পঞ্চায়েত নির্বাচনের পক্ষেও মুখ খোলেন অভিষেক। এই প্রসঙ্গে বলেন, ‘আমরা চাই আগামী দিন আগামীদিন শান্তিপূর্ণ, সন্ত্রাসহীন, অবাধ ও গণতান্ত্রিক নির্বাচন হোক। আমরা চাই শান্তিপূর্ণ অবাধ নির্বাচনের সঙ্গে সঙ্গে কারা আগামী দিন প্রার্থী হবে সেটা আপনারা জানান। তৃণমূল সর্বশক্তি দিয়ে তাঁকে জিতিয়ে আপনাদের জন্য নিয়ে আসবে। পাঁচ বছর দলমত নির্বিশেষে যে পরিষেবা দেবে তাঁকেই জিতিয়ে আনা হবে।’
প্রসঙ্গত, ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনের সময় কোচবিহারের শীতলকুচিতে বিএসএফের গুলিতে কয়েকজনের মৃত্যু হয়েছিল। এমনকী গীতলদহে এক যুবককে অকারণে গুলি করে মারার অভিযোগ নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে কেন্দ্রীয় বাহিনীর অতি সক্রিয়তা নিয়ে সরব হতে দেখা যায় স্থানীয় মানুষ থেকে বিরোধীদের। এদিন ফের সেই প্রসঙ্গে আরও একবার সরব হতে দেখা যায় অভিষেককে। কোচবিহারের সাংসদ ও কেন্দ্রীয় মন্ত্রী নিশীথ প্রামাণিককে বিদ্ধ করে অভিষে বলেন, ‘কাশ্মীরে জঙ্গি মারতে যে প্যালেট গান ব্যবহার করা, কোচবিহারের মানুষকে সেই বন্দুক দিয়ে মারা হচ্ছে। ২০১৯ সালে যাঁকে আপনার ভোট দিয়ে জিতিয়েছেন, তিনি কোচবিহারের লজ্জা।’