রাজ্যে নিয়োগের ক্ষেত্রে দুর্নীতি ও বেনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। এবার তা এখন আর শুধু শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রেই সীমাবদ্ধ নেই। পুরসভার নিয়োগের ক্ষেত্রেও বিস্তর অভিযোগ উঠে এসেছে। বিশেষ করে নিয়োগ দুর্নীতিকাণ্ডে গ্রেপ্তার অয়ন শীলের বাড়ি থেকে পুরসভার নিয়োগ সংক্রান্ত গাদা গাদা ওএমআর শিট পাওয়ার পর থেকেই সন্দেহ আরও বেড়েছে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার।
এবার পুরসভায় দুর্নীতির খোঁজে গতি বাড়াল কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা। রাজ্যের বিভিন্ন পুরসভায় নিয়োগ কীভাবে হয় তা জানতে চেয়ে এই প্রথম দুই দপ্তরকে চিঠি দিল এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট। গত ৮ বছরে কীভাবে নিয়োগ হয়েছে, কারা নিয়োগ প্রক্তিয়া পরিচালনা করেছেন, এসব জানতে চেয়ে রাজ্যের পুর ও নগরোন্নয়ন এবং মিউনিসিপ্যাল সার্ভিস কমিশনকে চিঠি দিল ইডি। জানা গিয়েছে, ওই দুই দপ্তর থেকে রিপোর্ট এলে অয়ন শীলের বাড়ি এবং অফিস থেকে প্রাপ্ত তালিকার সঙ্গে তা মিলিয়ে দেখা হবে। এদিকে পুরসভার সংশ্লিষ্ট ওই দুই দপ্তরে ইডি-র তরফ থেকে চিঠি যাওয়ায় রাজ্য রাজ্যনীতিতে শোরগোল পড়ে গিয়েছে। ২০১২ সালের পর থেকে পুরসভায় নিয়োগের দায়িত্বে ছিল এই মিউনিসিপ্যাল সার্ভিস কমিশন। ২০১৭ সাল থেকে পুরসভাগুলিতে কীভাবে নিয়োগ হয়েছে,কোন কোন সংস্থার মাধ্যম সেই নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে, ওই সব সংস্থাকে কে বা কারা নিয়োগ করেছিল এসবই জানতে চায় ইডি।
এখানে বলে রাখা শ্রেয়, পুরনিয়োগে দুর্নীতির অভিযোগে সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দেন কলকাতা হাইকোর্টে বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। রাজ্য সরকার তার বিরুদ্ধে ডিভিশন বেঞ্চ এবং সুপ্রিম কোর্টে গেলেও খালি হাতে ফিরে আসে। পরে কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি অমৃতা সিনহা ও বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের পুরানো নির্দেশই বহাল রাখেন। ফলে এখন শিক্ষার মতো পুরসভার নিয়োগ দুর্নীতিতেও কেন্দ্রীয় সংস্থার তদন্তে আর কোনও আইনি বাধা নেই। সেই কারণেই ইডি সিবিআই আবার নতুন উদ্দমে পুরনিয়োগ দুর্নীতির তদন্তে সক্রিয় হয়েছে। এরই মধ্যে গত কয়েকবছরে কোন পুরসভায় কত নিয়োগ কীভাবে হয়েছে তা জানতে চেয়েছে ডিরেক্টরেট অফ লোকাল বডিজ বা বিএলবি।
এদিকে সূত্রের খবর, ২০১৪ সাল থেকে মিউনিসিপ্যাল সার্ভিস কমিশন মারফত নিয়োগ সংক্রান্ত যাবতীয় তথ্য চেয়ে পাঠিয়েছেন ইডির তদন্তকারী আধিকারিকেরা। ২০১৪ সাল থেকে কোন কোন পুরসভায় কত নিয়োগ হয়েছে, কোন এজেন্সি দায়িত্বে ছিল, সেই সব বিষয়েও বিস্তারিত তথ্য চাওয়া হয়েছে বলে সূত্রের খবর। এছাড়া হুগলির জেলাশাসককেও চিঠি পাঠানো হয়েছে বলে সূত্র মারফত জানা গিয়েছে।
উল্লেখ্য, এর আগে ইডির তরফে যে রিপোর্ট আদালতে জমা করা হয়েছিল, তাতে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা দাবি করেছিল নিয়োগ দুর্নীতিতে গ্রেপ্তার অয়ন শীল ইডির জেরায় স্বীকার করেছে পুরসভায় বেআইনি নিয়োগের জন্য প্রচুর পরিমাণে টাকা নেওয়া হয়েছে। চাকরিপ্রার্থীদের থেকে সব মিলিয়ে ২০০ কোটিরও বেশি টাকা নেওয়া হয়েছিল বলে দাবি এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেটের। কোন কোন পদে নিয়োগের জন্য এই আর্থিক লেনদেন হয়েছিল, সেই তথ্যও রিপোর্টে উল্লেখ করেছিল ইডি। কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার দাবি মজদুর, সুইপার, ক্লার্ক, পিওন, অ্যাম্বুলেন্স অ্যাটেন্ড্যান্ট, অ্যাসিস্ট্যান্ট মিস্ত্রি, পাম্প অপারেটর, হেল্পার, স্যানিটারি অ্যাসিস্ট্যান্ট, ড্রাইভার-সহ বিভিন্ন পদে নিয়োগের ক্ষেত্রে এই টাকা-পয়সার লেনদেন হয়েছিল।