নির্বাচনী বন্ড অসাংবিধানিক, জানাল শীর্ষ আদালত

লোকসভা নির্বাচনের আগে নির্বাচনী বন্ড বা ইলেকটোরাল বন্ডের বৈধতা নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ রায় দিল সুপ্রিম কোর্টের। নির্বাচনী বন্ড প্রকল্পের আইনি বৈধতা সংক্রান্ত মামলায় বৃহস্পতিবার রায় দেয় সুপ্রিম কোর্ট। প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড়, বিচারপতি সঞ্জীব খান্না, বিচারপতি বিআর গাভাই, বিচারপতি জেবি পারদিওয়ালা এবং বিচারপতি মনোজ মিশ্রের বেঞ্চ এই মামলার শুনানি করেন। এটি একটি সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত হলেও বেঞ্চের দুটি ভিন্ন মতামত রয়েছে। ভারতের প্রধান বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড়ের নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের সাংবিধানিক বেঞ্চ গত বছরের ২ নভেম্বর এই মামলার রায় সংরক্ষিত রেখেছিল। যা বৃহস্পতিবার ঘোষণা করা হয়। এখানে বলে রাখা শ্রেয়, নির্বাচনী বন্ড আদৌ স্বচ্ছ কিনা তা নিয়েই এতদিন শুনানি চলছিল। আজ সেই রায়দান হয়। সুপ্রিম কোর্টের পর্যবেক্ষণ, ইলেকটোরাল বন্ড স্কিম তথ্যের অধিকার আইন লঙ্ঘন করেছে। এর অর্থ হল ইলেকটোরাল বন্ড স্কিম বাতিল করা হবে না, তবে দাতার পরিচয় গোপন রাখার বিধানটি সরানো যেতে পারে।

প্রসঙ্গত, নির্বাচনে কালো টাকা ঢালা রুখতেই ২০১৮ সালে কেন্দ্রীয় সরকার এনেছিল এই প্রকল্প। কিন্তু অস্বচ্ছতার অভিযোগ এনে বিরোধীরা তা চ্যালেঞ্জ করে। এরপর ২০২৩-এ প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড়ের নেতৃত্বে পাঁচ বিচারপতির বেঞ্চ সংরক্ষিত রাখে এই রায়। বৃহস্পতিবার এই মামলার রায়দান হয়। এরপরই এদিন শীর্ষ আদালত নির্বাচনী বন্ডকে অসাংবিধানিক আখ্যা দেয়। সুপ্রিম কোর্টের মতে, নির্বাচনী বন্ড তথ্যের অধিকার জানার আইন লঙ্ঘন করে। কারণ, রাজনৈতিক দলগুলোর অর্থায়ন সম্পর্কে ভোটারদের জানার অবশ্যই অধিকার রয়েছে।

প্রসঙ্গত, ২০২৩-এর ৩১ অক্টোবর থেকে সুপ্রিম কোর্টের সাংবিধানিক বেঞ্চ এই নিয়ে নিয়মিত শুনানি করে। ইলেকটোরাল বন্ড স্কিমের সমালোচনা করে সুপ্রিম কোর্ট বলে যে রাজনৈতিক দলগুলি যে তহবিল পাচ্ছে তার তথ্য পাওয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ। একইসঙ্গে সুপ্রিম কোর্টের তরফ থেকে এও জানানো হয়, নির্বাচনী বন্ড তথ্য অধিকারের লঙ্ঘন। এটি অবশ্যই বাতিল হওয়া উচিত। অর্থাৎ শীর্ষ আদালতের রায় অনুযায়ী, এখন থেকে নির্বাচনী বন্ড আর গোপন থাকবে না, এখন জনগণ জানতে পারবে কে কোন দলকে অর্থায়ন করেছে।

২০১৮ সালের ২ জানয়ারি আনা হয় কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে ইলেকটোরাল বন্ড বা নির্বাচনী বন্ড। এই প্রকল্প আনা হয়েছিল নির্বাচনে রাজনৈতিক দলগুলিকে নগদে আর্থিক অনুদান রুখতে এবং রাজনৈতিক ফান্ডিংয়ে স্বচ্ছতা আনতেই। নতুন নিয়মে কোনও ব্যক্তি বা কর্পোরেট সংস্থা যদি নির্দিষ্ট কোনও রাজনৈতিক দলকে আর্থিক সাহায্য বা চাঁদা দিতে চায়, তবে তাদের বন্ড কিনে সংশ্লিষ্ট দলকে দিতে হবে স্টেট ব্যাংক অব ইন্ডিয়ায় ১ হাজার, ১০ হাজার, ১ লক্ষ, ১০ লক্ষ এবং ১ কোটি টাকা মূল্যের বন্ড পাওয়া যায়। নির্দিষ্ট অ্যাকাউন্টে সেই বন্ড ভাঙিয়ে নিতে পারবে রাজনৈতিক দলগুলি। তবে কে, কত টাকা অনুদান দিচ্ছেন সেই তথ্য এতদিন প্রকাশ পেত না। তবে শীর্ষ আদালতের রায় থেকে সেই তথ্য জানা যাবে।

এখানেই বিরোধীরা প্রশ্ন তোলে নির্বাচনী বন্ড চালু হওয়ার পরই স্বচ্ছতা নিয়ে। তাঁদের অভিযোগ ছিল এই প্রক্রিয়াতে বাড়বে অস্বচ্ছতা। বিশ্বের কোনও দেশেই এমন ব্যবস্থা নেই যেখানে রাজনৈতিক দল বন্ড ভাঙিয়ে অর্থ সংগ্রহ করে। কোন কর্পোরেট সংস্থা কাকে ভোটে সাহায্য করছে, তার বিনিময়ে ক্ষমতাসীন দলের থেকে কী সুবিধা পাচ্ছে সেই তথ্য জানার সুযোগ ছিল সাধারণ জনগণ বা ভোটারের। যেখানে শাসক দলের আর্থিক অনুদানের কোনও তথ্য ছিল না, সেখানে বিরোধী দলে কে কত অনুদান দিচ্ছেন তা জানা সম্ভব ছিল। আর এই নিয়েই দায়ের হয় মামলা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

seventeen − eight =