নতুন সংসদ ভবনের অনুষ্ঠান বয়কটের পর এবার নীতি আয়োগের বৈঠকও বয়কট করলেন বিরোধী জোটের আট মুখ্যমন্ত্রী। এদিকে নীতি আয়োগ কাউন্সিলের বৈঠক এড়িয়ে যাওয়া নিয়ে সাফাইও দিয়েছেন অনুপস্থিত মুখ্যমন্ত্রীরা। স্বাস্থ্যের কারণ দেখিয়ে বৈঠক এড়িয়ে যান রাজস্থানের মুখ্যমন্ত্রী অশোক গেহলট। তবে অনুপস্থিতি নিয়ে নির্দিষ্ট কোনও কারণ জানাননি কেরালার মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়ন।এদিকে নীতি আয়োগের বৈঠকে তিনি যে উপস্থিত থাকবেন না তা শুক্রবার জানিয়ে দিয়েছিলেন দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল। দিল্লির প্রশাসনিক ক্ষমতা দখলের জন্য মোদি সরকার যে অধ্যাদেশ জারি করেছে, তার প্রতিবাদেই বৈঠকে যোগ না দেওয়ার কারণ বলেই জানান দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী। কেজরিওয়ালের মতে, দেশের ফেডারেলিজমকে কার্যত তামাশায় পরিণত করেছে মোদি সরকার।এরই পাশাপাশি পঞ্জাবের সঙ্গে কেন্দ্রের বিমাতৃমূলক আচরণের অভিযোগ করে নীতি কাউন্সিলের বৈঠক বয়কট করে ভগবন্ত মান সরকার। শেষ বৈঠকে পঞ্জাবের কৃষক সমস্যা সমাধানের জন্য প্রধানমন্ত্রীর কাছে আবেদন জনিয়েছিলেন পঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী।এরপর তা সমাধানের আশ্বাস দেওয়া হলেও, কেন্দ্রের তরফে কোনও পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি বলে দাবি করেন ভগবন মান্ত।ভগবন্ত মানের মতে, নীতি আয়োগের বৈঠক নিছক ফটো সেশন ছাড়া কিছুই নয়।পঞ্জাবের সমস্যা সমাধান না হওয়া পর্যন্ত বৈঠকে যোগ দিয়ে কোনও লাভ নেই বলেও জানান তিনি। সেই সঙ্গে মোদি সরকারের বিরুদ্ধে প্রতিহিংসার রাজনীতির অভিযোগ করে বৈঠক থেকে সড়ে দাঁড়ান পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমার এবং তেলেঙ্গানার মুখ্যমন্ত্রী চন্দ্রশেখর রাও-ও। যদিও মুখ্যমন্ত্রী মমতার পরিবর্তে রাজ্যের মন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য ও মুখ্যসচিব হরিকৃষ্ণ দ্বিবেদীর বৈঠকে যোগ দেওয়ার কথা ছিল। তবে শুক্রবার রাজ্য সরকারের তরফে জানানো হয়, পশ্চিমবঙ্গ থেকে কোনও প্রতিনিধিই পাঠানো হচ্ছে না নীতি আয়োগের বৈঠকে। এদিকে সবচেয়ে বেশি জল্পনা তৈরি হয় ওড়িশার মুখ্যমন্ত্রী নবীন পট্টানায়কের অনুপস্থিতিকে ঘিরে। কারণ, বিজেপি বিরোধী ২০টির বেশি দল নতুন সংসদ ভবনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান বয়কট করলেও, সেই পথে হাঁটেননি নবীন। ফলে নীতি কাউন্সিলের বৈঠকে তাঁর অনুপস্থিতি ঘিরে শুরু হয় বিস্তর জল্পনা। তবে এই প্রসঙ্গে ওড়িশার মুখ্যমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে জানানো হয়, পূর্বের নির্ধারিত কাজের জন্য তিনি যোগ দেয়নি বলে জানানো হয়।
এদিকে নীতি বৈঠকে আট মুখ্যমন্ত্রীর অনুপস্থিতি নিয়ে মুখ খোলেন প্রাক্তন মন্ত্রী রবিশঙ্কর প্রসাদ। তাঁর মতে, বৈঠকে বিভিন্ন ক্ষেত্রে রাজ্যগুলির উন্নয়নের পরিকল্পনা নেওয়া হয়ে থাকে। ৮ মুখ্যমন্ত্রী অনুপস্থিত থেকে সংশ্লিষ্ট রাজ্যের মানুষকে বঞ্চিত করেছেন বলে দাবি করেন প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী। এদিকে শনিবার দিল্লিতে বসে নীতি আয়োগের বৈঠক। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এই বৈঠকের সভাপতিত্ব করছেন। প্রগতি ময়দানের নিউ কনভেনশন সেন্টারে এই সভার আয়োজন করা হয়। এই বৈঠকের মূল আলোচ্য বিষয় ছিল, ২০৪৭ সালের মধ্যে দেশকে কীভাবে উন্নত ভারতে পরিণত করা যায় এবং তা নিয়েই বিভিন্ন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীদের অবদান নিয়ে আলোচনা করা হয়। সূত্রে খবর, দিনব্যাপী বৈঠকে মোট আটটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে আলোচনা হয়। যার মধ্যে রযেছে, ২০৪৭ সালের মধ্যে উন্নত ভারত তৈরি, এমএসএমই, পরিকাঠামো এবং বিনিয়োগের উপর জোর দেওয়া, অভিযোগ কমানো, মহিলাদের ক্ষমতায়ন, স্বাস্থ্য ও পুষ্টি, এবং সামাজিক পরিকাঠামো উন্নয়নের গতি বৃদ্ধি৷ এদিনের এই বৈঠকে রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলগুলির মুখ্যমন্ত্রী এবং লেফটেন্যান্ট গভর্নররা উপস্থিত ছিলেন। উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী এবং নীতি আয়োগের ভাইস-চেয়ারম্যান পদাধিকারী সদস্যদের সঙ্গে অন্যান্য সদস্যরাও।