নুসরতকে তলব ইডির। এনফোর্সেমন্ট ডিরেক্টরেট সূত্রে খবর, আগামী মঙ্গলবার তৃণমূলের অভিনেত্রী-সাংসদকে সল্টলেকের সিজিওকম্পলেক্সের ইডি দফতরে তলব করা হয়েছে। আর ইডির তরফ থেকে এই নোটিশ পাঠানো হয়েছে মঙ্গলবারই, এমনটাই জানানো হচ্ছে কেন্দ্রীায় তদন্তকারী সংস্থার তরফ থেকে। নুসরতের পাশাপাশি তলব করা হয়েছে সেভেন সেন্সেস ইনফ্রাস্ট্রাকচারের অপর ডিরেক্টর রাকেশ সিংহকেও। তাঁকেও মঙ্গলবার হাজিরা দেওয়ার কথা জানানো হয়েছে।
আগেই ফ্ল্যাট বিক্রিতে সেভেন সেন্সেস ইনফ্রাস্ট্রাকচারের বিরুদ্ধে ২০ কোটি টাকা প্রতারণার অভিযোগ উঠেছিল। ইডি সূত্রে জানা গিয়েছে, সংস্থার বিরুদ্ধে যখন প্রতারণার অভিযোগ ওঠে, তখন অন্যতম ডিরেক্টর পদে ছিলেন তৃণমূলের তারকা সাংসদ। এই নিয়ে নুসরতকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে চান এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেটের আধিকারিকেরা। কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা এই নিয়ে পৃথক একটি ইসিআইআর অর্থাৎ এনফোর্সমেন্ট কেস ইনফরমেশন রিপোর্ট দায়ের করতে পারে বলেই জানা গিয়েছে। এই মামলাই আগেই কলকাতা পুলিশের থেকে যাবতীয় তথ্য চেয়ে পাঠিয়েছিল ইডি। মনে করা হচ্ছে, দিল্লি থেকে অনুমোদন পাওয়ার পরই তলব। এখানে বলে রাখা শ্রেয়, প্রাথমিক অনুসন্ধানের ভিত্তিতে ইডি মনে করেছে, নুসরতকে জিজ্ঞাসাবাদের প্রয়োজন। উল্লেখ্য, ‘সেভেন সেন্সেস ইনফ্রাস্ট্রাকচার প্রাইভেট লিমিটেড’র ডিরেক্টর ছিলেন রাকেশ সিং, নুসরাত জাহান, রূপলেখা মিত্র-সহ মোট ৮ জন।
নুসরতের বিরুদ্ধে মূল অভিযোগ, ২০১৪-১৫ সালে নুসরত যে সংস্থার ডিরেক্টর ছিলেন, সেই ‘সেভেন সেন্সেস ইনফ্রাস্ট্রাকচার প্রাইভেট লিমিটেড’ব্যাঙ্ক কর্মীদের সঙ্গে ফ্ল্যাট দেওয়ার নাম করে প্রতারণা করেছে বলে অভিযোগ ওঠে। সংস্থারই ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে একটি রাষ্ট্রায়ত্ত্ব ব্যাঙ্কের অবসরপ্রাপ্ত বহু কর্মী অ্যাসোসিয়েশনের মাধ্যমে টাকা জমা করেছিলেন ফ্ল্যাট পাওয়ার জন্য। অভিযোগ, প্রথমে ২ কামরার ফ্ল্যাট দেওয়ার নাম করে ৫০০ জনের কাছ থেকে টাকা তোলা হয়েছিল। পরে নির্দিষ্ট সময় পেরিয়ে যাওয়ার পর অন্য জায়গায় অ্যাপার্টমেন্ট বানানোর প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়। সেখানে তিন কামরার ফ্ল্যাটের কথা বলা হয়েছিল। কিন্তু এত বছরেও অবসরপ্রাপ্ত কোনও ব্যাঙ্ককর্মী ফ্ল্যাট পাননি। নুসরতের বিরুদ্ধে অভিযোগ, প্রতারণার টাকায় তিনি পাম অ্যাভিনিউয়ের একটি ফ্ল্যাট কেনেন।
এরপরই প্রতারিতরা প্রথমে গড়িয়াহাট থানায় অভিযোগ দায়ের করেন। অভিযোগ, পুলিশ মামলা নেয়নি। আলিপুর আদালতে গিয়ে মামলা ফাইল করে। সেই সময় আদালত দু’বার নুসরতের বিরুদ্ধে সমন জারি করে। অভিযোগ, সেই সময়ে হাজিরা এড়িয়েছিলেন নুসরত। এবার বিজেপি নেতা শঙ্কুদেব পণ্ডার প্রতারিত ব্যাঙ্ক কর্মীদের অভিযোগ সামনে আনেন। এবার সেই মামলাতেই ইডি তলব করল নুসরতকে।
এদিকে এ প্রসঙ্গে বিজেপি নেতা শঙ্কুদেব পণ্ডা জানান, ‘৪০০ জন ব্যাঙ্কের কর্মচারীর সাড়ে পাঁচ লক্ষ টাকা করে চুরি করে দামী ফ্ল্যাট কিনবেন, আর তাঁরা রাস্তায় হন্যে হয়ে ঘুরে বেড়াবেন! এরপরও ওঁ কীভাবে দাবি করেন, ইডি তাঁকে ডাকবে না? কলকাতা পুলিশ আগেই তদন্ত করে বলেছিল, এই মামলায় নুসরতের যোগ স্পষ্ট। ইডিকে পদক্ষেপ করতেই হবে। ইডি পদক্ষেপ না করলে, আমরা আদালতে যাব।’
যখন এ অভিযোগ সামনে এসেছিল,তখন নুসরত নিজেই সাংবাদিক বৈঠক করে দাবি করেছিলেন, ‘ওই কোম্পানি থেকে আমি একটা লোন নিয়েছিলাম। ১ কোটি ১৬ লক্ষ ৩০ হাজার ২৮৫ টাকা। ২০১৭ সালে সুদ-সহ ১ কোটি ৪০ লক্ষ ৭১ হাজার ৯৯৫ টাকা কোম্পানিকে ফেরত দিই। সব ব্যাঙ্ক ডিটেইলস আমার কাছে আছে।’
এদিকে নুসরতের এই দাবি সম্পর্কে কী বলছেন সংস্থার আরেক কর্তা রাকেশ সিং জানান, ‘আমাদের কোম্পানি নুসরত জাহানকে কোনও ঋণ দেয়নি। তিনি রিজাইন দিয়েছিলেন ২০১৭ সালে। এই ৬ বছরের তাঁর সঙ্গে আমাদের কোনও যোগাযোগ নেই। আমাদের আর প্রয়োজন নেই। ও একাকী কিছু বিষয় হ্যান্ডেল করেছে। ও যেটা ভাল মনে করেছেন, করেছেন।’ তিনি আরও দাবি করেন, ‘আমি নুসরতকে যতটুকু চিনেছি, কাজ করতে গিয়ে, অ্যাকাউন্টসের ব্যাপারে ওঁ খুব দুর্বল। আর ভাল করে বোঝা উচিত ছিল ওঁর। ওঁর নিজেরই ক্রস চেক করা উচিত ছিল।’
এদিকে আবার সাংবাদিক বৈঠকে যশকে পাশে নিয়ে নুসরত দাবি করেছিলেন, তাঁকে ইডি ডাকবে না। কিন্তু তাঁকে ইডি ডাকল, আগামী মঙ্গলবার হাজিরার নির্দেশও দিল। প্রসঙ্গত, ফ্ল্যাট দেওয়ার নাম করে প্রতারণার একাধিক অভিযোগ আজকাল প্রকাশ্যে আসছে। তা নিয়ে সোমবারই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘অনেক ব্ল্যাক লিস্টেড প্রোমোটার রয়েছে। আমার কাছে, পুলিশ কমিশনারের কাছে, এমনকি ডিজির কাছেও চিঠি আসে। আমি সেই চিঠিগুলো পাঠিয়ে দেব, ধরে ব্ল্যাক লিস্টেড করে দেবেন।’ এবার নিজের দলের সাংসদের বিরুদ্ধে এহেন অভিযোগ ওঠায় তিনি কী পদক্ষেপ করেন, সেটাই দেখার।