শান্তনুর ফোন সোনার খনি বলে আদালতে দাবি ইডি-র আইনজীবীর

আদালতে সোনার খনির সঙ্গে ইডি-র আইনজীবী তুলনা করলেন ধৃত শান্তনু বন্দ্যোপাধ্যায়ের ব্যবহার করা দুটি আইফোনের। একইসঙ্গে শান্তনুর সম্পত্তির তুলনা করতে গিয়ে ইডি-র আইনজীবী কটাক্ষ করে সোমবার এও বলেন, ‘পুরুলিয়ার টিলা পাহাড় থেকে তা হিমালয়ে পরিণত হয়েছে৷’ এদিকে তিন দিন ইডি-র হেপাজতে থাকার পর সোমবার কলকাতায় ব্যাঙ্কশাল কোর্টে পেশ করা হয় নিয়োগ দুর্নীতিতে গ্রেপ্তার বলাগড়ের তৃণমূলের যুব নেতা শান্তনু বন্দ্যোপাধ্যায়কে। এদিন ফের শান্তনুকে ১১ দিনের ইডি হেফাজতের জন্য আবেদন জানায় কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা।  কারণ, নিয়োগ দুর্নীতি নিয়ে তদন্তে নেমে একের পর এক বিস্ফোরক তথ্য সামনে আসছে। যা প্রতিটি একের সঙ্গে অপরটি ওতোপ্রতো ভাবে জড়িত তো বটেই একইসঙ্গে এটাও সত্য যে এই সব তথ্য সামনে আসার পরই নতুন নতুন  দিকও উন্মোচিত হচ্ছে এই নিয়োগ দুর্নীতি কাণ্ডে। এই প্রসঙ্গেই সোমবার শান্তনু দুটি আইফোন ব্যবহার করার কথা আদালতে উল্লেখ করেন ইডি-র আইনজীবী ফিরোজ এডুলজি। সঙ্গে এও জানান, এই আইফোন থেকে বেশ কিছু অ্যাডমিট কার্ড তো পাওয়া গিয়েছে। সঙ্গে মিলেছে প্রচুর নথি। যা কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার তরফে আদালতে তথ্য হিসেবে সোনার খনি হিসেবে উল্লেখও করা হয়। সঙ্গে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা ইডি-র তরফে এও জানানো হয়, এই সব তথ্যের মধ্যে এমন কিছু তথ্য রয়েছে যা সর্বসমক্ষে আদালত কক্ষে বলা যাবে না। এরই রেশ ধরে এদিন এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেটের আইনজীবী আদালতে জানান, ‘কেস ডায়েরিতে এমন এমন নাম রয়েছে, এমন এমন তথ্য রয়েছে, যা জানলে আপনি চমকে যাবেন।’ তবে এই সবের কথা যে কেস ডায়েরিতে উল্লেখ করা রয়েছে তা এদিন জানানো হয় ইডি-র তরফ থেকে। তবে এটা ইডি-র আইনজীবী জানান, শান্তনুর বাড়িতে তল্লাশি করে এবং জেরা করে যে তথ্য মিলেছে, তাতে প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়েরও যোগসূত্র মিলেছে।

শুধু তাই নয়, এদিন আদালতে ইডির তরফের আইনজীবী এও দাবি করেন, শান্তনু বন্দ্যোপাধ্যায় যথেষ্ট প্রভাবশালী। কারণ, ইডির আইনজীবী এদিন আদালতে জানান, একজন এনআইএ বিচারকের বাড়ির সামনে একজন পিএসও থাকেন। তা সরকারের তরফ থেকে ব্যক্তিগত নিরাপত্তার জন্য দেওয়া হয়। এদিকে হুগলি জেলার একজন নেতা শান্তনুরও দু’ জন পিএসও ছিল বলে আদালতে জানান ইডি-র আইনজীবী। আর এরই রেশ ধরে কেন শান্তনুক দু জন পিএসও দেওয়ার প্রয়োজন পড়ল, সেই প্রশ্নও তোলেন ফিরোজ এডুলজি৷ এই সূত্রেই ইডির দাবি, এর থেকেই বোঝা যায় শান্তনু বন্দ্যোপাধ্যায় কতটা প্রভাবশালী ছিলেন।

ইডির আইনজীবীর এই বক্তব্যের পর শান্তনুর আইনজীবী পাল্টা প্রশ্ন করেন, কেন তাঁর মক্কেলকে ৬ দিন বাদে গ্রেপ্তার করা হয়েছে তা নিয়ে। এখানে শান্তনুর আইনজীবীর প্রশ্ন, যদি শান্তনুকে গ্রেপ্তার করারই হত, তাহলে জিজ্ঞাসাবাদ পর্বের শুরুতেই কেন গ্রেপ্তার কেন করা হল না তা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন তিনি। এরপরই বিচারক শান্তনুর আইনজীবীকে যথেষ্ট কড়া সুরে বলেন, ‘কবে গ্রেপ্তার করা হবে, সেটা আপনাদের বলতে হবে না। একদিনে করবে নাকি ৫০ দিনে করবে, তা তদন্তকারী অফিসার বুঝবেন। আপনারা যা কথা বলবেন পয়েন্টে বলুন। এটা পিএমএলএ আইনের মামলা। সেটা ধরে আপনারা কথা বলুন।’

এরপরই বিচারক এও জানান, তদন্তকারীরা কী তথ্য পেয়েছেন, তদন্তে কী উঠে এসেছে, সেগুলি নিশ্চয়ই কেস ডায়েরিতে রয়েছে। এরপর শান্তনুর আইনজীবীকে তিনি বলেন, ‘আরও তো অনেক লোক আছে, তাঁদের তো অনেকের সম্পত্তি আছে। তাঁদের কাউকে তো গ্রেপ্তার করেনি। ওনার নিশ্চয়ই কোনও যোগ পেয়েছে।’

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

five × two =