শনিবার সাত সকালে ইডি-র হানা সুজয়কৃষ্ণের বাড়িতেও

শনিবার সাত সকালে ‘কালীঘাটের কাকু’র বাড়িতে এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেটের আধিকারিকেরা। জানা গিয়েছে, এদিন সকাল ছ’টা নাগাদ সুজয়কৃষ্ণ ভদ্রের বাড়িতে হানা দেন তাঁরা। কেন্দ্রীয় এজেন্সি। স্থানীয় সূত্রে খবর, তদন্তকারীদের ডাকেই ঘুম ভাঙে সুজয়কৃষ্ণ ভদ্রের। এরপর তিনি এসে দরজা খোলেন।
শুধু তার বাড়ি নয়, জানা গিয়েছে সুজয়কৃষ্ণ ভদ্রের বেহালার ফকিরপাড়া রোডের একটি কনসালটেন্সি সংস্থাতেও ইডি-র অপর একটি দল গিয়েছে। এছাড়াও শনিবারই রাজ্যের একাধিক জায়গায় তল্লাশি চালায় ইডি। এদিন সকাল থেকে অন্তত ১০ টি জায়গায় তল্লাশি শুরু করেছে এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেটের একাধিক টিম। সার্চ ওয়ারেন্ট নিয়েই এই তল্লাশি চালানো হচ্ছে। এর মধ্যে রয়েছে পার্থ চট্টোপাধ্য়ায়ের ঘনিষ্ঠদের বাড়িও। বেহালার অন্তত চারটি বাড়িতে ইডি তল্লাশি চালাচ্ছে। রাধারাণী নামের বাড়িতে থাকে সুজয়কৃষ্ণ ভদ্র। সূত্রের খবর কিছুদিন আগে রাধারাণী বাড়ি ছাড়াও একটি ভাঙা চোড়া বাড়িতে থাকতে শুরু করেন সুজয়। পাড়ার লোকের কাছে নাম ভাঁড়িয়ে ওই বাড়িতে নাকি থাকতেন তিনি। সেই বাড়িতেও তল্লাশি চালানো হয়। কিছুদিন আগেও এই সুজয়কৃষ্ণের বাড়িতে তল্লাশি চালিয়েছিল সিবিআই। সেই সময় সুজয়কৃষ্ণ দাবি করেছিলেন, তাঁর এক আত্মীয়ের চাকরির পরীক্ষার অ্যাডমিট কার্ড ছাড়া আর কোনও নথি পাননি সিবিআই আধিকারিকেরা। সেইসময় কিছু নগদ টাকা উদ্ধার হয়েছিল বলেও সূত্রের খবর।
প্রাথমিকভাবে যে তথ্য উঠে এসেছে, নিয়োগ দুর্নীতি মামলাতেই এই তল্লাশি। এর আগে মার্চ মাসে তাঁকে নিজাম প্যালেসে তলব করে সিবিআই। এরপর তাঁর বাড়িতেও সিবিআই তল্লাশি চালানো হয়। তাৎপর্যপূর্ণভাবে এদিনই কুন্তল ঘোষের চিঠি সংক্রান্ত মামলায় অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে তলব করে সিবিআই।
উল্লেখ্য, নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় প্রথম ধৃত তাপস মণ্ডলের মুখে শোনা গিয়েছিল সুজয়কৃষ্ণ ভদ্র ওরফে কালীঘাটের কাকুর নাম। এর আগে তাঁর বাড়ির পাশাপাশি পর্ণশ্রীর একটি ফ্ল্যাট ত্রিবেণী অ্যাপার্টমেন্ট তল্লাশি চালান গোয়েন্দারা। নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় প্রতিদিন সামনে আসছে নয়া তথ্য।
অভিযোগ উঠেছিল, কালীঘাটের কাকু ওরফে সুজয়কৃষ্ণ ভদ্রের কাছে চাকরি বিক্রির একটি অর্থ আসত তাপস ঘোষ এবং কুন্তল ঘোষের থেকে। একইসঙ্গে বহিষ্কৃত তৃণমূল নেতা শান্তনু বন্দ্যোপাধ্যায়ের স্ত্রী প্রিয়াঙ্কার সঙ্গেও তাঁর ব্যবসায়িক লেনদেনের যোগ পাওয়া গিয়েছে বলে গোয়েন্দা সূত্র মারফত জানা গিয়েছিল। এরপরই শনিবার সাতসকালে সুজয়কৃষ্ণ ভদ্রের বাড়িতে এই তল্লাশি অভিযান।
প্রসঙ্গত, নিয়োগ দুর্নীতি মামলা প্রতিদিনই নয়া মোড় নিচ্ছে। এর আগে এই মামলায় গ্রেপ্তার হয়েছেন রাজ্যের প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়। তৃণমূল থেকে বহিষ্কৃত হুগলির যুবনেতা কুন্তল ঘোষের গ্রেফতারির পর একাধিক তথ্য উঠে এসেছিল। এদিকে তিনি দাবি করেছিলেন, তাঁকে দলীয় নেতাদের নাম বলার জন্য চাপ দেওয়া হচ্ছে। এই মামলার জল গড়িয়েছিল কলকাতা হাইকোর্ট পর্যন্ত।
কুন্তলের এই চিঠি প্রসঙ্গে কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি অমৃতা সিনহা নির্দেশ দিয়েছিলেন, এই মামলায় প্রয়োজনে অভিষেককে জিজ্ঞাসাবাদ করতে পারে তদন্তকারী এজেন্সি। সেই নির্দেশ অনুসারেই এদিন অভিষেককে তলব করা হয়েছে।
একদিকে নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় সিবিআই দপ্তরে তলব করা হয় অভিষেক বন্দ্যোপাধ্য়ায়কে। এদিকে নিয়োগ মামলায় কালীঘাটের কাকু হিসেবে যাঁর নাম উঠে এসেছে, সেই সুজয়কৃষ্ণ ভদ্রের বাড়িতেও পৌঁছে যান ইডি-র আধিকারিকেরা।
এদিকে গোপাল দলপতির মুখে প্রথম শোনা গিয়েছিল ‘কালীঘাটের কাকু’র কথা। তিনি দাবি করেছিলেন, কুন্তল ঘোষ নাকি টাকা পৌঁছে দিতেন ‘কালীঘাটের কাকু’র কাছে। পরে গোয়েন্দারা জানতে পারেন ‘কালীঘাটের কাকু’ আসলে সুজয়কৃষ্ণ ভদ্র। তবে তিনি আদতে কালীঘাটের বাসিন্দা নন, বেহালার বাসিন্দা। নিয়োগ দুর্নীতিতে অভিযুক্ত কুন্তল ঘোষ যে তাঁকে কাকু বলে সম্বোধন করতেন, সে কথা স্বীকার করেছিলেন তিনি। দীর্ঘদিন রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত থাকার কথাও জানিয়েছিলেন তিনি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

4 × four =