সুজয়কৃষ্ণের গ্রেপ্তারির ৩ দিনের মাথায় কলকাতায় এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টেরেটের প্রধান

কালীঘাটের কাকু’কে গ্রেপ্তারি তিন দিনের মাথায় দিল্লি থেকে কলকাতায় পা রাখলেন এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেটের প্রধান সঞ্জয় মিশ্র। ইডি সূত্রে খবর, গরু পাচার, কয়লা পাচার, নিয়োগ দুর্নীতি সহ একাধিক দুর্নীতি মামলায় তৎপরতা বাড়াচ্ছে ইডি। তারই রেশ ধরে সম্প্রতি নিয়োগ দুর্নীতিকাণ্ডে সুজয়কৃষ্ণ ভদ্র ওরেফে ‘কালীঘাটের কাকু’কে গ্রেপ্তারও করেছে ইডি। এই গুরুত্বপূর্ণ সময়ে হঠাৎ-ই কলকাতা সফরে এলেন ইডি অধিকর্তা সঞ্জয় কুমার মিশ্র। সূত্রে খবর, বৃহস্পতিবার রাতে কলকাতা বিমানবন্দরে নামে তিনি। এরপর শুক্রবার সল্টলেকের সিজিও কমপ্লেক্সের ইডি দপ্তরে আসেন এই ইডি অধিকর্তা। ইডি সূত্রে খবর, কয়লা পাচার, গোরু পাচার, নিয়োগ দুর্নীতির মতো বড় বড় দুর্নীতির শিকড় কত গভীর অবধি বিস্তৃত সেই নিয়ে কলকাতার শীর্ষ ইডি আধিকারিকদের সঙ্গে বৈঠক করবেন সঞ্জয়। বিভিন্ন দুর্নীতির তদন্তে অগ্রগতি সম্পর্কে খোঁজখবর নেবেন তিনি। এরই পাশাপাশি এই বৈঠক থেকে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার আধিকারিকদের বিভিন্ন বিষয়ে গাইডলাইন দেবেন ইডি অধিকর্তা। বিভিন্ন দুর্নীতির তদন্তে যুক্ত ইডি–র তদন্তকারী অফিসারদের সঙ্গেও তদন্তে অগ্রগতির বিষয়ে কথা বলতে পারেন তিনি, এমনটাই সূত্রে খবর। এদিকে এও খবরও মিলছে, শনিবার কলকাতার একটি পাঁচতারা হোটেলে কেন্দ্রীয় আয়কর বিভাগের কর্তাদের সঙ্গে একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকে যোগ দেবেন ইডি অধিকর্তা। এদিকে এই মুহূর্তে ইডি-র হাতে রয়েছে একাধিক মামলা। চিটফান্ড থেকে শুরু করে নিয়োগ দুর্নীতি, কয়লা ও গরু পাচার-সহ বিভিন্ন মামলার অগ্রগতি নিয়ে তদন্তকারীরা আধিকারিকদের সঙ্গে আলোচনা করতে পারেন বলে সূত্রে খবর। আরও জানা যাচ্ছে, আগামী দিনে তদন্তের রূপরেখাও বৈঠকে ঠিক হবে। এই রাজ্যের হাইপ্রোফাইল দুর্নীতি বিষয়ে দিল্লি এবং কলকাতার সমন্বয় নিয়েও কথা হতে পারে। আর এখানেই বঙ্গ রাজনীতিতে জল্পনা শুরু তাহলে সুজয় কৃষ্ণভদ্র-র ওপর চাপ বাড়তে চলেছে কি না তা নিয়ে।
প্রসঙ্গত, নিয়োগ দুর্নীতির মামলায় মঙ্গলবার রাতেই গ্রেপ্তার হন সুজয়কৃষ্ণ ভদ্র। দীর্ঘ ১১ ঘণ্টা জিজ্ঞাসাবাদের পর, মঙ্গলবার নিয়োগ দুর্নীতিকাণ্ডে সুজয়কৃষ্ণ ভদ্র ওরফে কালীঘাটের কাকুকে গ্রেপ্তার করা হয় তাঁকে। মূলত তদন্তে অসহযোগিতা ও প্রশ্নের উত্তর এড়িয়ে যাওয়ার কারণে তাঁকে গ্রেপ্তার করে ইডি। ইডি সূত্রে খবর, জিজ্ঞাসাবাদ চলাকালীন সুজয়ের কাছে জানতে চাওয়া হয়, নিয়োগ দুর্নীতির পিছনে কোনও প্রভাবশালীর মাথা রয়েছে কি না। কিন্তু গোটা বিষয়টি তিনি এড়িয়ে যান বলে জানা গিয়েছে। সুজয়কৃষ্ণের বাজেয়াপ্ত করা মোবাইল থেকে বেশ কিছু তথ্যপ্রমাণ ইডির হাতে এসেছিল। সেই নিয়ে প্রশ্ন করা হলেও তিনি কোনও সদুত্তর দিতে পারেননি। এদিকে এই মামলার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র বলে মনে করছে ইডি। এদিকে এই সময়ে সঞ্জয় মিশ্রের কলকাতায় আগমনকে তাৎপর্যপূর্ণ বলেই মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল। যদিও ইডি আধিকারিকদের তরফে বলা হচ্ছে, এটা সম্পূর্ণ একটি কাকতালীয় ব্যাপার।দুটি ঘটনার মধ্যে কোনও সংযোগ নেই।তবে এটাও ইডি-র তরফ থেকে জানানো হচ্ছে যে, সুজয় কৃষ্ণ ওরফে কালীঘাটের কাকু হচ্ছেন, এমন এক জন ব্যক্তি, যিনি বেশ কয়েকজন ব্যক্তিকে আড়াল করার চেষ্টা করছেন। ইডি-র তরফে আদালতে স্পষ্ট করে বলা হয়েছে, সাংবিধানিক পদে রয়েছেন, এমন কয়েকজন ব্যক্তির ‘ফ্রন্টম্যান’ হিসাবে কাজ করতেন এই সুজয়কৃষ্ণ ওরফে ‘কালীঘাটের কাকু’। সে দিক থেকে এখন পর্যন্ত দফায় দফায় জিজ্ঞাসাবাদে সুজয়কৃষ্ণ ভদ্র তদন্তকে ভুল পথে চালিত করার চেষ্টা করছেন বলে অভিযোগ তদন্তকারীদের। ওই ব্যক্তিদের আড়াল করতে সুজয়কৃষ্ণ তথ্য প্রমাণ নষ্ট করেছেন বলেও দাবি তাঁদের। সেখানে ইডির শীর্ষ কর্তার কলকাতায় উপস্থিতি ‘কালীঘাটের কাকু’র বিরুদ্ধে যে তদন্ত চলছে তা কতটা দ্রুত লয়ে এগোয় এখন সেটাই দেখার।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

fifteen − eleven =