ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রোর কাজে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছিল বউবাজারের দুর্গা পিতুরি লেনের ধসের ঘটনা। ২০১৯-এর ৩১ অগস্ট ওখানেই ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রোর পশ্চিমমুখী সুড়ঙ্গে ধস নেমে প্রকল্পকে পিছিয়ে দিয়েছিল তিন-তিনটে বছর। এই ঘটনা কী ভাবে মোকাবিলা করা সম্ভব তা নিয়েও আলোচন হয় বিস্তর। এরপর চূড়ান্ত সতর্কতা নিয়ে এবং ধীর গতির সঙ্গে ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রোর কাজ বেশ খানিকটা এগোল বউবাজারের দুর্গা পিতুরি লেনে, এমনটাই সূত্রে খবর। কেএমআরসিএল অর্থাৎ কলকাতা মেট্রোরেল কর্পোরেশন লিমিটেড সূত্রে খবর মিলছে যে, ওই সুড়ঙ্গেই কংক্রিটের একজোড়া দেওয়াল তুলে বক্স জয়েন্ট তৈরির কাজ এ বার অনেকটাই এগিয়েছে। কেএমআরসিএল-এর প্রযুক্তিবিদরা এই প্রসঙ্গে জানান, এই জোড়া দেওয়াল তৈরির নেপথ্যে দু’টি কারণ। প্রথমত, এই দু’টি দেওয়াল পশ্চিমমুখী সুড়ঙ্গকে আরও মজবুত করবে। দ্বিতীয়ত, পূর্ব ও পশ্চিমমুখী সুড়ঙ্গের মাঝখানে স্পষ্ট সীমারেখা হিসেবে এই দেওয়াল দাঁড়াবে।
এই এক জোড়া দেওয়াল তুলে বক্স জয়েন্ট তৈরির কাজের পরিকল্পনা নেন কেএমআরসিএল-এর প্রযুক্তিবিদরা। কারণ, তাঁরা মাটির চরিত্র পরীক্ষা করে বুঝতে পেরেছিলেন ওই এলাকায় মাটির বুনোট তেমন মজবুত নয়। মাটিতে বালির পরিমাণ খুব বেশি। সঙ্গে ভূগর্ভস্থ জলের পরিমাণও ওখানে যথেষ্ট। আর সেই কারণেই ২০১৯-এর ৩১ অগাস্ট যন্ত্রের ধাক্কায় মাটির পাতলা স্তর ভাঙলে ভূগর্ভস্থ জল ঢুকে পড়ে সুড়ঙ্গে। তারই জেরে অনেকটা জায়গা জুড়ে মাটি বসে গিয়ে বউবাজারে পর পর বাড়ি ভেঙে পড়ে।
এরপরই কেএমআরসিএল-র প্রযুক্তিবিদরা পরিকল্পনা করেন, সুড়ঙ্গের দু’টি মুখকে একটি কংক্রিটের বাক্সের মধ্যে এনে জুড়ে দেওয়া হবে। এরই নাম বক্স জয়েন্ট। সেই মতো কাজ শুরুও হয়েছিল। কিন্তু ২০২২-এর ১৪ অক্টোবর ওই বক্স জয়েন্টের নীচের অংশ থেকে ফের জল উঠে এসে সব পরিকল্পনা নতুন করে ভণ্ডুল করে দেয়। তখন কাজ আটকে গেলেও বক্স জয়েন্ট তৈরির পরিকল্পনা বাতিল করেনি কেএমআরসিএল। পর্যাপ্ত পরিমাণ কংক্রিট দিয়ে বন্ধ করা হয় সুড়ঙ্গে নতুন করে জল ঢোকার রাস্তা ।
এদিকে এ বছর মার্চের শুরুতে নতুন করে বক্স জয়েন্ট তৈরির কাজে হাত দেয় কেএমআরসিএল। এই কাজের শুরুতে প্রথমে জমানো কংক্রিট চেঁছে তোলার কাজ হয় প্রয়োজনীয় সতর্কতার সঙ্গে। এর পর শুরু হয় সুড়ঙ্গের দু’পাশে কংক্রিটের দু’টি দেওয়াল তৈরির কাজ। এই কাজই আপাতত শেষের পথে।
এদিকে এপ্রিলে হাওড়া ময়দান থেকে এসপ্ল্যানেড পর্যন্ত অংশে ট্রেন চালানোর মহড়া শুরু হওয়ার কথা। সেই জন্য রেকগুলোকে সেন্ট্রাল পার্ক ডিপো থেকে হাওড়া ময়দান পর্যন্ত নিয়ে যাওয়া হবে পূর্বমুখী সুড়ঙ্গ দিয়েই। তার আগে পূর্বমুখী সুড়ঙ্গকে সব দিক থেকে নিরাপদ করার প্রয়োজন। কংক্রিটের জোড়া দেওয়াল তুলে সেই কাজই অনেকটা এগিয়ে নিল কেএমারসিএল।