সিবিআই তল্লাশি চলাকালীন বিধায়ক জীবনকৃষ্ণ সাহা নিজের মোবাইলটি ছুড়ে ফেলে দেন বাড়ির পাশের পুকুরে। সঙ্গে একটি পেন ড্রাইভও ফেলে দেওয়া হয়েছে বলে অনুমান তদন্তকারী আধিকারিকদের। আপাতত পুকুরের জল পাম্প করে তুলে মোবাইল খোঁজার চেষ্টা করছেন তদন্তকারীরা।
শুক্রবার দুপুর থেকে তল্লাশি শুরু হয় মুর্শিদাবাদের বড়ঞার বিধায়ক জীবনকৃষ্ণ সাহার বাড়িতে। প্রায় ১৬ ঘণ্টা পরও জারি রয়েছে তল্লাশি। ভোর রাতেই বিধায়কের বাড়িতে পৌঁছায় সিবিআই-এর আরও একটি দল। নতুন এই দলে রয়েছেন নতুন করে ৬ আধিকারিক। সূত্রে খবর, তাঁরা পৌঁছান প্রায় ভোর ৪ টে নাগাদ। আপাতত বাড়ির ভিতরে রয়েছেন বিধায়ক। শুক্রবার রাতেই তাঁর বাড়ি থেকে নিয়োগ সংক্রান্ত বেশ কিছু নথি উদ্ধার হয়েছে বলে সূত্রের খবর।
প্রসঙ্গত, শুক্রবার দুপুর ১ টা নাগাদ জীবনকৃষ্ণ সাহার বাড়িতে পৌঁছন সিবিআই-এর আধিকারিকরা। নিয়োগ দুর্নীতিতে জড়িত থাকার অভিযোগেই তল্লাশি চালানো হয়। বাড়িতেই ছিলেন বিধায়ক। তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদও করা হয়। আর এই তল্লাশি চলাকালীন বিধায়ক কোনও এক ফাঁকে তাঁর মোবাইলটি পুকুরে ছুড়ে ফেলে দেন বলে অভিযোগ। সূত্রে এ খবরও মিলছে, গত প্রায় ৪-৫ বছর ধরে এই মোবাইলটি-ই ব্যবহার করছিলেন বিধায়ক জীবনকৃষ্ণ। ফলে তাতে একাধিক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য থাকার সম্ভাবনা রয়েছে।
এদিকে শনিবার ভোরে আরও ৬ আধিকারিক পৌঁছন বিধায়কের বাড়িতে। আপাতত পুকুর থেকে জল বের করার জন্য একটি মেশিন চালু করা হয়েছে। কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার আধিকারিকদের ধারনা, মোবাইলটি পেলে তদন্তকারীদের হাতে আসতে পারে অনেক তথ্য।
এরই পাশাপাশি সিবিআই সূত্রে এ খবরও মিলেছে যে, জীবনকৃষ্ণের বাড়ি থেকে প্রায় দু’ বস্তা নথি উদ্ধার করা হয়েছে। যার মধ্যে রয়েছে প্রাইমারি, আপার প্রাইমারি এবং নবম-দশমের শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষার চাকরি প্রার্থীদের অ্যাডমিট কার্ড রয়েছে। তৃণমূল বিধায়কের কাছ থেকে একটি ডায়েরি উদ্ধার হয়েছে বলেও সিবিআই সূত্রে খবর। সিবিআইয়ের অনুমান এই ডায়েরিতে নিয়োগ দুর্নীতি সংক্রান্ত লেনদেনের হিসাব পাওয়া যেতে পারে। পাশাপাশি শনিবার সকাল থেকে জীবনকৃষ্ণের দুই আত্মীয়ের বাড়িতেও নতুন করে তল্লাশি চালাতে শুরু করেছেন সিবিআই আধিকারিকরা।পুলিশের যে ভ্যান দু’টি শুক্রবার রাতে চলে গিয়েছিল, তার মধ্যে একটি শনিবার সকালে আবার তৃণমূল বিধায়কের বাড়ির বাইরে আনা হয়। একই সঙ্গে তৃণমূল বিধায়কের বাড়ির সামনে আরও কড়া হয়েছে নিরাপত্তা। স্থানীয় সূত্রে খবর, কেন্দ্রীয় বাহিনীর পাশাপাশি সকাল থেকে মোতায়েন করা হয়েছে রাজ্য পুলিশকে।
এদিকে সিবিআই সূত্রে খবর, নিয়োগ দুর্নীতিতে মুর্শিদাবাদ থেকে কৌশিক নামে এক ব্যক্তি গ্রেপ্তার হন লিঙ্কম্যান হিসেবে। তাঁকে জেরা করেই উঠে আসে এই জীবনকৃষ্ণের নাম। পরে কিছু ব্যাঙ্কের চেকের সূত্র ধরেও বিধায়কের নাম উঠে আসে। সিবিআই সূত্রে খবর, শুক্রবার সন্ধ্যায় স্কুল সার্ভিস কমিশন, প্রাথমিক বা উচ্চ প্রাথমিকের নিয়োগ পরীক্ষা সংক্রান্ত বেশ কিছু নথি এসেছে তদন্তকারীদের হাতে। সিবিআই সূত্রে খবর, সে সব নথির মধ্যে রয়েছে বেশ কয়েকজন চাকরি প্রার্থীর নাম। সেই নামের পাশে লেখা রয়েছে কিছু টাকার অঙ্ক। ওই টাকা নিয়োগের নামে নেওয়া হত কি না তারই উত্তর খুঁজছেন তদন্তকারীরা।