কলকাতার সাংস্কৃতিক আঙিনায় উজ্জ্বল এক নাম অভিষেক ডালমিয়ার বাড়ির দুর্গাপূজা

মহানগরের অভিজাত পূজোগুলির মধ্যে অন্যতম হল অভিষেক ডালমিয়ার বাড়ির দুর্গাপূজা। শহরের ১০ নম্বর আলিপুর রোডে অবস্থিত এই ঐতিহ্যবাহী পুজো কেবলমাত্র পারিবারিক আবেগ নয়, বরং কলকাতার সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডলে বিশেষ স্থান দখল করে রেখেছে। প্রতিবছর দুর্গাপূজার সময় ডালমিয়া পরিবারের এই বাড়ি হয়ে ওঠে দর্শনার্থীদের ভিড়ের কেন্দ্রবিন্দু।

অভিষেক ডালমিয়ার পিতা জগমহোন ডালমিয়া এই পুজোর সূচনা করেছিলেন প্রায় সাত দশক আগে। সেই সময় ছিল ঘরোয়া আবহ—ছোট করে প্রতিমা, সাদামাটা সাজসজ্জা আর আত্মীয়-স্বজনদের উপস্থিতি। কিন্তু সময়ের সঙ্গে পাল্টেছে পুজোর রূপ। বর্তমানে অভিষেক ডালমিয়া নিজে এই পুজোর অন্যতম প্রধান কর্ণধার। তাঁর উদ্যোগে প্রতিবারই পুজো পায় নতুন মাত্রা। তবে সাজসজ্জার চাকচিক্য বাড়লেও ভক্তির আবেগ এবং পারিবারিক উষ্ণতা আজও অপরিবর্তিত।এবারের পুজোর মূল আকর্ষণ হল ঐতিহ্যবাহী ধাঁচে গড়া প্রতিমা। শিল্পী তৈরি করছেন সাবেকিয়ানা বজায় রেখে দশভূজা দুর্গা, যেখানে দেবীকে দেখা যাবে মহিষাসুরবধের রূপে। মণ্ডপ সাজানো হচ্ছে গ্রামীণ বাংলার আদলে—খড়, তালপাতা, বাঁশ, মাটির প্রদীপে ফুটে উঠবে আদি সংস্কৃতির ছোঁয়া। এর মাধ্যমে শহুরে কোলাহলের মাঝে মানুষ ফিরে পাবেন গ্রামের আবহ।অভিষেক ডালমিয়া বলেন, “আমাদের জন্য দুর্গাপূজা কেবল দেবী আরাধনা নয়, এটি ঐক্যের উৎসব। প্রতিবছর অফিসপাড়া, আশেপাশের এলাকার মানুষ ও বিভিন্ন শ্রেণির দর্শনার্থীরা একসঙ্গে এসে এখানে অংশ নেন। এটাই আমাদের সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি।”

পুজোর প্রতিটি দিনে ভক্তদের জন্য থাকে বিশেষ আয়োজন। মহাষষ্ঠী থেকে শুরু করে বিজয়া দশমী পর্যন্ত প্রতিদিনই চলে অঞ্জলি, ধুনুচি নাচ, সানাই আর ঢাকের বাজনা। দুপুরে ভোগ খাওয়ার ব্যবস্থা থাকে সবার জন্য। খিচুড়ি, লাবড়া, পায়েসের পাশাপাশি পরিবেশন করা হয় পরিবারের বিশেষ পদ, যা এই পুজোর অন্যতম আকর্ষণ। এবং অষ্টমী দিনে থাকে বিশেষ আকর্ষণ অভিষেক ডালমিয়া স্ত্রী আর অসাধারণ কণ্ঠ দিয়ে গান গেয়ে পরিবেশ আরোও মাতিয়ে তোলে।শুধু ধর্মীয় আচার নয়, সাংস্কৃতিক দিক থেকেও সমৃদ্ধ এই পুজো। সন্ধ্যায় আয়োজন করা হয় নৃত্য, গান, আবৃত্তি, নাটক এবং বাউলগান। এলাকার শিশু থেকে প্রবীণ সকলেই এতে অংশ নেন। এর ফলে দুর্গাপূজা হয়ে ওঠে এক সামাজিক মিলনমেলা। সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য দিক হল, অভিষেক ডালমিয়ার বাড়ির পুজো ধর্মীয় ভেদাভেদ ভুলে একত্রিত করে সবাইকে।

হিন্দু-মুসলিম, অফিসকর্মী কিংবা স্থানীয় ব্যবসায়ী—সবাই সমানভাবে যুক্ত হন এই আয়োজনে। সম্প্রীতির এই ছবি বহু বছর ধরে বজায় রয়েছে। অতএব, দুর্গাপূজা মানেই যেখানে প্রতিযোগিতা, বিশাল বাজেট বা আড়ম্বরের দৌড়—সেখানে অভিষেক ডালমিয়ার বাড়ির দুর্গাপূজা দাঁড়িয়ে আছে আলাদা এক পরিচয়ে। এখানে ঐতিহ্য, আভিজাত্য, পারিবারিক আবেগ এবং সামাজিক সম্প্রীতি মিলেমিশে তৈরি করে এক অনন্য উৎসবের আবহ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

three − two =