ভাঁড়ারে টান, এসএসকেএম-এর মতো সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালেও রোগীর দেহে বসছে নিম্ন মানের পেস মেকার

আর্থিক অনটনের আঁচ পড়েছে রাজ্যের সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতাল এসএসকেএম-এও। আর তারই জেরে রোগীর শরীরে বসানো হয়েছে নিম্ন মানের পেসমেকার, এমনাটই অভিযোগ। এর জেরেএকাধিক রোগীর প্রাণ সংশয় দেখা দেয় বলেও মনে করেছেন অনেকেই।
প্রসঙ্গত, উলুবেড়িয়ার এক বাসিন্দা গত সেপ্টেম্বরে হৃদরোগে আক্রান্ত হন। এরপর তাঁকে ভর্তি করা হয় এসএসকেএম হাসপাতালে চলতি বছরের এপ্রিলেই আবার নবকুমারের বুকে বসানো সেই পেসমেকার বিকল হয়ে যায় বলে অভিযোগ। এরপর তাঁকে ফের ১৮ দিন ভর্তি রাখা হয় হাসপাতালে। তখন বসানো হয় দ্বিতীয় পেসমেকার। অভিযোগ, সেই দ্বিতীয় পেসমেকারও আবার ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে বিকল হয়ে যায়।
এই ছবিটা শুধু উলুবেড়িয়ার বাসিন্দার ক্ষেত্রেই নয়, একই অভিযোগ উঠেছে গোবরডাঙার এক বাসিন্দার ক্ষেত্রেও। তিনিও জানান, একবার খারাপ হওয়ার পর দ্বিতীয়বার তা বসানো হয়। এরপর ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে সেটিও খারাপ হয়ে যায়। হৃদরোগে আক্রান্ত এই ব্যক্তির স্ত্রীও জানান, ‘চিকিৎসকরা বলছেন, আরও ভাল মেশিন রয়েছে। স্টেপ বাই স্টেপ আপনারা এগিয়ে যান। দরখাস্তও করা হয়েছিল। কিন্তু কাজের কাজ কিছু হয়নি,হেনস্থাই হতে হল।’
অপর এক রোগীর আত্মীয়ের মুখেও একই কথা। জানান, ‘নিম্ন মানের মেশিন। এক বছরের মধ্যে দু’বাক ব্যাটারি চেক করতে হল।‘
শুধু তাই নয়, পেসমেকার বসানোর কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই তা বিকল হয়ে রোগী মৃত্যুরও অভিযোগ উঠছে। গত বছর মে মাসে হরেকৃষ্ণ মণ্ডল নামে এক রোগীর মৃত্যুর অভিযোগ উঠছে এই কারণেই। তাঁর বুকে পেসমেকার বসানোর এক ঘণ্টার মধ্যেই তা বিকল হয়ে হৃদস্পন্দন থামে হরেকৃষ্ণর।
যদিও এসএসকেএমের বক্তব্য, আগে যে পেসমেকার বসানো হত, তার দাম ছিল ৭০-৮০ হাজার টাকা। চিকিৎসকদের একাংশ দাবি করছেন, আর্থিক টানাটানির জেরে গত এক বছর ধরে ৩০ হাজার টাকা দামের সিঙ্গল চেম্বার পেসমেকার বসানো হচ্ছে। তাতেই বিপত্তি বলে সূত্রের খবর। কার্ডিওলজি বিভাগের চিকিৎসকদেরই অভিযোগ, প্রত্যেক মাসেই রোগীর বুকে পেসমেকার বসানো হয়। আর তাঁদের মধ্যে ৮০ শতাংশের বুকেই নিম্নমানের পেসমেকার বসানো হয়।
এ প্রসঙ্গে কার্ডিওলজি বিভাগের চিকিৎসক বলেন, ‘সঙ্গে সঙ্গেই যদি কোনও সমস্যা হয়, তাহলে সেটা বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ব্যাটারি সংক্রান্ত। আর ব্যাটারি যদি খারাপ হয়, তাহলে কিন্তু পেসমেকার আর কাজ করবে না। সেটা অনেক সময়ে টেবিলে থেকেই বোঝা যেতে পারে। আবার অপারেশনের বেশ কিছু সময় পরেও বোঝা যেতে পারে। এটাকে আমরা বলি আর্লি ব্যাটারি ফেলিওর। তবে এই কেস কিন্তু সাধারণভাবে খুব বেশি পাওয়া যায় না। নিশ্চিত ভাবে পেসমেকার নিম্নমানের হলে নতুন লাগাতে হবে।’ ফলে এই সব ঘটনায় একটা ব্যাপার স্পষ্ট যে, ভাঁড়ারে টান পড়েছে স্বাস্থ্য দপ্তরের।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

two + fifteen =