আগে দেশ। দেশের সম্মান। তারপর টাকাপয়সা-বেড়ানো।
মালদ্বীপ সরকারের তিন মন্ত্রীর ভারতের প্রধানমন্ত্রীকে নিয়ে করা অপমানকজনক মন্তব্যের জেরে সমাজমাধ্যমে শুরু হয়েছে ‘বয়কট মালদ্বীপ’। সেই ঠেলা সামলাতে হিমশিম খাচ্ছে ভারতের দক্ষিণ-পশ্চিমে ভারত মহাসাগরের ওপরের ছোট্ট দ্বীপরাষ্ট্র। আগে থেকেই মলদ্বীপে ঘুরতে যাওয়ার বিমান-হোটেলে টিকিট বুক করে রাখার পরেও তা বাতিল করে চলেছেন একের পর এক ভারতীয়। ক্রমে সেই সংখ্যা বেড়েই চলেছে।যাঁরা বুকিং বাতিল করছেন, তাঁদের দাবি, টাকা যাচ্ছে যাক। দেশের অপমান কোনও ভাবে মেনে নেওয়া যাবে না। মালদ্বীপের তিন মন্ত্রী ভারত এবং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে নিয়ে অবমাননাকর মন্তব্য করার পর থেকে কমপক্ষে ১৪ হাজার হোটেল এবং প্রায় চার হাজার বিমানের টিকিট বাতিল করেছেন ভারতীয়েরা। যা, মলদ্বীপের পর্যটন এবং অর্থনীতিতে বড় ধাক্কা বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।ভারতের
প্রতি বছরই ভারত থেকে অসংখ্য মানুষ অসম্ভব সুন্দর এই দ্বীপরাষ্ট্রে বেড়াতে যান। ভারতীয় তারকাদের কাছে তো অবসর যাপনের জায়গা হিসেবে মালদ্বীপ সবসময়ই শীর্ষে থাকে। কিন্তু সেই তারকারাই এবার # Boycott Maldives ক্যাম্পেনে সামিল।মালদ্বীপকে বয়কট করার ডাকও দিয়েছেন বলিউড এবং ক্রিকেট মহলের তাবড় তারকারা। মলদ্বীপ না গিয়ে ভারতীয় দ্বীপগুলি ঘুরে দেখার আবেদন করে গলা মিলিয়েছেন তাঁরা।
সম্প্রতি লাক্ষাদ্বীপ সফরে গিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। প্রশাসনিক অনুষ্ঠানের পাশাপাশি কেন্দ্রশাসিত দ্বীপরাজ্যের সমুদ্রসৈকতেও অনেকটা সময় কাটিয়ে এসেছেন প্রধানমন্ত্রী। সফরে কাটানো মুহূর্তের প্রচুর ছবিও তিনি সমাজমাধ্যমে পোস্ট করেছেন।অভিযোগ, প্রধানমন্ত্রী ছবিগুলি সমাজমাধ্যমে পোস্ট করার পর মালদ্বীপ সরকারের তিন মন্ত্রী মরিয়ম শিউনা, মালশা শরিফ এবং মাহজ়ুম মাজিদ সেই ছবিগুলি নিয়ে অপমানজনক মন্তব্য করেছেন। প্রধানমন্ত্রীকে ‘জোকার’ এবং ‘ইজ়রায়েলের ক্রীড়নক’ বলেও অপমান করা হয়েছে। কটাক্ষ করা হয়েছে ভারতীয় সংস্কৃতি নিয়েও। এর পরেই বিতর্কের মুখে পড়েন ওই তিন মন্ত্রী এবং মালদ্বীপ সরকার। বিতর্কের মুখে পড়ে নিজেদের পোস্টগুলিও মুছে ফেলেন তাঁরা।
এক জন ভারতীয় এক্স হ্যান্ডেলে লিখেছেন, “আমি ফেব্রুয়ারিতে মলদ্বীপে ছুটি কাটানোর পরিকল্পনা করেছিলাম। আমি তা বাতিল করে ভারতের কোনও জায়গায় ঘুরতে যাব ভাবছি। যারা আমার দেশকে ঘৃণা করে, সেই দেশে আমি আমার টাকা নষ্ট করব না।’’ অন্য এক জন লিখেছেন, “কয়েক মাস আগে আমি মলদ্বীপে গিয়েছিলাম এবং সব কিছু নিয়েই। আমি না গেলেই ভাল হত। আমি আমার ভাগ্নিকেও তার মধুচন্দ্রিমাতে যাওয়ার জন্য মলদ্বীপ যাওয়ার সব বুকিং করে দিয়েছিলাম। এখন আমি আমার এজেন্টকে সেই বুকিং বাতিল করতে বলেছি। আমার টাকা যাচ্ছে যাক। কিন্তু বুকিং বাতিল করার সিদ্ধান্তই ঠিক।’’
মালদ্বীপের নাগরিকদের একাংশও ভারত এবং মোদিকে নিয়ে মন্তব্যের কারণে নিজের দেশের সরকারের প্রতি ক্ষোভপ্রকাশ করেছেন। মন্ত্রীদের মন্তব্যের সমালোচনা করে সরব হয়েছেন।
দেশের পর্যটন ব্যবসাকে বিপদের মুখে পড়তে দেখে তড়িঘড়ি ‘ড্যামেজ কন্ট্রোল’ করতে নেমে পড়েছে মালদ্বীপ সরকার। ভারতীয়রা মলদ্বীপে ঢুঁ মারা বন্ধ করে দিলে দেশের অর্থনীতি বিপদের মুখে পড়তে পারে ভেবে ভুল শোধরানোর চেষ্টা শুরু করেছে মলদ্বীপের সরকার। কারণ মালদ্বীপের অর্থনীতি অনেকটাই পর্যটন নির্ভর। সারা বছর ভারতীয় পর্যটকদের ভিড় লেগেই থাকে ভারতের দক্ষিণ-পশ্চিমে ভারত মহাসাগরের উপরে অবস্থিত ছোট্ট দ্বীপরাষ্ট্রে।