স্বপ্নের মালদ্বীপ! নীল সাগরের হাতছানি

কোথাও জলের রং পান্না সবুজ, কোথাও ঘন নীল, তারই পাশে সার দিয়ে ওয়াটার ভিলা।ছবির মতো সুন্দর দেশটি ঘুরে এসে লিখছেন সুস্মিতা মণ্ডল।

ইনস্টা থেকে ফেসবুক খুঁজলেই দেখা যাবে মালদ্বীপের নীল জলে সেলেবরা মজা করছেন।বলিউডের নায়িকাদের তো বটেই ইদানীং টলিউডের অভিনেতা, অভিনেত্রীরাও ছুটি কাটাতে মালদ্বীপ যাচ্ছেন। (Maldives)

 

কোথাও জলের রং পান্না সবুজ, কোথাও ঘন নীল, তারই পাশে সার দিয়ে ওয়াটার ভিলা। প্রকৃতি, দামী রিসর্ট দেখে চোখ আটকে যায় যে কারওরই।ইচ্ছে হলেও মনে হয়, আর ও তো সেলেবদের ঘোরার জায়গা। সাধারণ মধ্যবিত্তের নাকি!খরচ যে অনেক।

তবে, চাইলে কিন্তু সেই স্বপ্ন পূরণ করতে পারেন আপনিও। শান্ত সমুদ্রে পড়ন্ত বিকেলের সাক্ষী হতে পারেন আপনি, আপনার সঙ্গী কিংবা পরিবার। শুধু দরকার একটু পরিকল্পনা।ইদানীং অসংখ্য ভারতীয় এবং বাঙালিরাও মধু চন্দ্রিমার জন্য বেছে নিচ্ছেন ভারত মহাসাগরের এই দ্বীপরাষ্ট্রটিকে।হাতি-ঘোড়া কিচ্ছু ব্যাপার নয়। শুধু একটু সঞ্চয়ী হলেই হয়ে যাবে ঘোরা।

তার আগে বলে নিই এই দেশটা সম্পর্কে।মালদ্বীপ বা মালদ্বীপ প্রজাতন্ত্র  ভারত মহাসাগেরর একটি দ্বীপ রাষ্ট্র। এর রাজধানীর নাম মালে। অপরূপ সৌন্দর্যের এ দেশ বিশ্বের সবচেয়ে নিচু দেশ। এক হাজার দুশোর বেশি ছোট ছোট দ্বীপ নিয়ে গঠিত মালদ্বীপ।মালদ্বীপ নামটি সম্ভবত “মালে দিভেহী রাজ্য” হতে উদ্ভূত যার অর্থ হল মালে অধিকৃত দ্বীপরাষ্ট্র। দেশটি ইসলামিক।সরকারি ভাষা ধিবেহি। তবে এদেশে যেহেতু বিশ্বের সমস্ত দেশ থেকে পর্যটকরা আসেন, তাই স্থানীয় লোকজন ইংরেজি বলতেও ভালো পারেন, বুঝতেও পারেন।আর এখানে কর্মসূত্রে থাকেন অসংখ্য বাংলাদেশি।এদেশের মেন এয়ারপোর্ট রয়েছে মালেতে যার নাম ভেলানা ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্ট। এদেশে যাতায়াতের প্রধান উপায় জলপথ। স্পিডবোটে যাতায়াত হয়। দূরের দ্বীপে যেতে গেলে দরকার পড়ে সি প্লেন। পাবলিক ফেরি হাতেগোনা।

যে কোনও জায়গা যখন পর্যটকরা বেছে নেন, তখন প্রথমেই প্রশ্ন আসে কী আছে সেখানে দেখার?  মালদ্বীপে তার উত্তর একটাই হতে পারে, প্রকৃতির অপার সৌন্দর্য। চারদিকে শুধু জল আর জল। কী তার রং! সূর্যোদয় থেকে সূর্যাস্ত, এক একসময় তার একএকরকম রূপ। নীল সাগরের বুকে মিহি সাদা বালির তটে রকমারি গাছ। একঝলক দেখলে মনে হবে পরম যত্নে এই সৌন্দর্য সৃষ্টি করেছেন সৃষ্টিকর্তা।আলাদা করে হাতে গোনা কোনও পয়েন্ট নেই। এদেশে বেড়াতে এলে ছুটোছুটি-হুড়োহুড়ির বদলে আরামদায়ক ছুটি উপভোগ করতে পারবেন। আর আছে সমুদ্রের নীচের বিস্ময়কর জগত। যেখানে স্মরকেলিং বা স্কুবা ডাইভিং করে দেখে নিতে পারেন কোরাল থেকে রকমারি মাছ, সার্ক, স্ট্রিং-রে। যে অভিজ্ঞতা থেকে যাবে সারা জীবন। চাইলে, পিকনিক করতে পারেন স্যান্ড ব্যাঙ্কে।করতে পারেন ওয়াটার স্পোর্টস। সমুদ্রের জলের ওপর দোলনায় দুলতে পারেন।কুড়িয়ে নিতে পারেন ঝিনুক।

এ এমন এক সুন্দর দেশ, যেখানে প্রিয় জনের সঙ্গে মুহূর্তকে আজীবন মনের খাতায় বন্দি করে রাখা যায়। এদেশ শুধু সৌন্দর্য নয়, সৌন্দর্যের সঙ্গে লাক্সারি জীবনের মেলবন্ধন ঘটিয়েছে পর্যটকদের জন্য।

 

কীভাবে করবেন মালদ্বীপের প্ল্যান?

পাবলিক আইল্যান্ড ও প্রাইভেট আইল্যান্ড

মালদ্বীপ অসংখ্য দ্বীপ নিয়ে তৈরি। যেগুলোকে দুভাগে ভাগ করা যায়। পাবলিক আইল্যান্ড ও প্রাইভেট আইল্যান্ড।পাবলিক আইল্যান্ডে স্থানীয় মানুষজনের বাস। বেশ কয়েকটি পাবলিক আইল্যান্ড আছে যেগুলো পর্যটকদের কাছেও জনপ্রিয়। যেমন মাফুসি, হুলহুমালে, রাসধু।

আর প্রাইভেট আইল্যান্ড হল যেখানে শুধু পর্যটকরাই যায়, সমুদ্রের বুকে ছোট ছোট আইল্যান্ডে সেখানে তৈরি হয়েছে লাক্সারি রিসর্ট। যেখানে আরামের যাবতীয় সুযোগ সুবিধে মেলে।মালদ্বীপে প্রকৃতির পাশাপাশি অন্যতম আকর্ষণ অবশ্যই এখানকার লাক্সারি ওয়াটারভিলা।তবে স্বাভাবিকভাবেই প্রাইভেট আইল্যান্ডে থাকার খরচ অনেকটাই কম প্রাইভেট আইল্যান্ডের চেয়ে।কিন্তু যদি ক্যালেন্ডারের ছবি দেখতে হয় তাহলে অবশ্যই প্রাইভেট আইল্যান্ডে যেতে হবে।তাই বেড়ানোর পরিকল্পনাটা করতে হবে আপনার পছন্দ আর সাধ্য বুঝে।

গুড় ঢাললে মিষ্টি হয়। একথা সবাই জানে। এ এমন এক ভ্রমণের জায়গা যেখানে একরাতে কয়েক লক্ষ টাকা নিমেষে খরচ করে ফেলা যায়। আবার চাইলে সঠিক পরিকল্পনায় মাথাপিছু ৬০-৭০ হাজার টাকাতেও ঘোরা সম্ভব হবে।

যদি বাজেট ট্রিপ করতে চান, তাহলে অবশ্য পাবলিক আইল্যান্ডে থেকে ঘুরতে হবে। আর ডে ট্রিপে ঘুরে নেওয়া যাবে প্রাইভেট আইল্যান্ড। যদিও ডে ট্রিপে প্রাইভেট আইল্যান্ডে গেলেও ওয়াটার ভিলায় ঢুকতে দেওয়া হয় না। বাকি সব পরিষেবা পাওয়া যায়।

পাবলিক আইল্যান্ড থেকে একাধিক প্যাকেজ মেলে, যেটা তুলনায় সস্তা। সেই প্যাকেজে হোল ডে ট্রিপে দেখা যায় সার্ককে খাওয়ানো, করা যায় স্নরকেলিং, স্যান্ড ব্যাঙ্কে পিকনিক।ওয়াটার স্পোর্টস করতে চাইলে পাবলিক আইল্যান্ড থেকে করাই ভালো। এক্ষেত্রে খরচ অনেক কম পড়ে প্রাইভেট আইল্যান্ডের চেয়ে।

তাই বাজেট যদি মাথাপিছু ১-১লাখ ২০ হাজারের মতো অন্তত রাখা যায় তাহলে পাবলিক ও প্রাইভেট আইল্যান্ড দুটোতেই থেকে ভালোভাবে ঘোরা সম্ভব।

 

প্রাইভেট আইল্যান্ড প্যাকেজ

এবার আসি প্রাইভেট আইল্যান্ডের কথায়, লাক্সারি রিসর্ট থাকে একএকটি প্রাইভেট আইল্যান্ড। সেখানে থাকে আরামের যাবতীয় ব্যবস্থা। প্যাকেজ থাকে তিন রকমের ব্যবস্থা। অল ইনক্লুসিভ।ফুল বোর্ড ও হাফ বোর্ড। অল ইনক্লুসিভ প্যাকেজে মালে ফেরিঘাট থেকে প্রাইভেট আইল্যান্ডে যাওয়ার খরচও ধরা থাকে। ব্রেকফাস্ট, লাঞ্চ, ডিনার ও সমস্ত রকমের পানীয় (হার্ড ও সফট)অফুরন্ত থাকে। ফুল বোর্ডে থাকে না পানীয়। হাফ বোর্ডে একবেলার খাবার থাকে। তবে যেবেতু প্রাইভেট আইল্যান্ডে সব কিছুই খুব দামী তাই ফুল বোর্ড বা অল ইনক্লুসিভ প্যাকেজে যাওয়াই ভালো অপশন। এরসঙ্গে একএকটি রিসর্টে একএরকম ওয়াটার স্পোর্টস ইনক্লুডেড থাকে।

তবে ওয়াটার ভিলা এখানে সবচেয়ে দামী। একরাতের খরচ কমপক্ষে ৫০-৬০ হাজার টাকা। এছাড়া থাকে বিচ ভিলা, গার্ডেন ভিলা।থাকে বিলাসের সমস্ত ব্যবস্থা আর সঙ্গে প্রকৃতির অনুপম রূপ প্রত্যক্ষ করার সুযোগ।

কীভাবে করবেন বাজেট ট্রিপ

সবচেয়ে কম খরচে মালদ্বীপ যেতে হলে অন্তত ৫ মাস আগে পরিকল্পনা করতে হবে। ভারতে কোচি থেকে মুম্বই থেকে সরাসরি বিমান আছে।ট্রেনে মুম্বই বা কোচি গিয়ে প্লেনের টিকিট কাটলে খরচ কম হবে। একপিঠের এয়ার ফেয়ার বাঁচবে। ৪-৫ মাস আগে রাউন্ড ট্রিপের টিকিট কাটলে খরচ কমবে অনেকটা।

অক্টোবর থেকে মার্চ এখানে বেড়ানোর সবচেয়ে ভালো সময়। এই সময় খরচ অনেক বেশি পড়ে। তাই বেছে নিন অফ সিজন।খরচ এক ধাক্কায় কমবে। হোটেল থেকে ওয়াটার অ্যাক্টিভিট তুলনায় সস্তা হবে এই সময়।

পাবলিক আইল্যান্ডে প্রতি রাত ৩০০০-৫০০০ হাজার টাকায় ভালো ঘর পাওয়া যায়, ব্রেকফাস্ট-সহ। তাছাড়া স্নরকেলিং বা স্যান্ড ব্যাঙ্ক ট্রিপ, ওয়াটার স্পোর্টস সবটাই পাবলিক আইল্যান্ড থেকে করলে খরচ কম হয়। পাবলিক আইল্যান্ড থেকে প্রাইভেট আইল্যান্ডের বিভিন্ন রিসর্টে সারাদিনের খাওয়া, পানীয়-সহ ডে ট্রিপ করানো হয়। সকালে স্পিড বোটে নিয়ে গিয়ে সন্ধেয় ফেরা। বাজেট ট্রিপে এটাই সবচেয়ে ভালো উপায়।

বাজেট কমাতে সঙ্গে শুকনো খাবার-দাবার একটু বেশি রাখতে পারেন। তাহলে কোনও কোনও সময় সেই খাবার দিয়ে চালিয়ে নিলে খরচ একটু কমানো সম্ভব। বলে রাখি, এখানে এক বোতল জল কিনতে কম করে ৮৫ টাকা খরচ হবে।যেহেতু এখানে ডলার বা মালদ্বীপের রুফিয়া চলে তাই ভারত থেকে এলে খরচ অনেক বেশি মনে হবে।

মালদ্বীপে থাকার জন্য নির্দিষ্ট কিছু ট্যাক্স আছে। যেটা প্রাইভেট আইল্যান্ডে অত্যন্ত বেশি হওয়ায় এক ধাক্কায় খরচ অনেক বেড়ে যায়।

 

জরুরি তথ্য ও ভিসা

মালদ্বীপে আসতে গেলে ভিসা বিনামূল্যে পাওয়া যায়। তবে পাসপোর্ট অত্যাবশ্যক। এদেশে আসার আগে ইমুগা অনলাইনে ফিলআপ করতে হয়। যেখানে মালদ্বীপে কোথায় থাকার জন্য বুকিং আছে তা জানানো জরুরি। এয়ারপোর্টে আসার পর অন অ্যারাইভাল ভিসা পাওয়া যায়। আর ভারতে ফিরতে গেলে বিমানে ওঠার ২৪ ঘণ্টা আগে এয়ার সুবিধা অনলাইনে ফিল আপ করতে হয়।

অ্যাগোডা, মেক মাই ট্রিপ-সহ একাধিক অ্যাপ দিয়ে সহজেই হোটেল বুকিং হয়। চাইলে ট্র্যাভেল এজেন্সি মারফত প্রাইভেট আইল্যান্ডের বুকিং সারতে পারেন।

 

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

twelve − 8 =