স্বপ্নাদেশে দুর্গাপুজোর পরই মেষপালক থেকে জমিদার সার্থক শীট!

নিজস্ব প্রতিবেদন, বাঁকুড়া: বাঁকুড়ার দু’নম্বর ব্লকের কোষ্টিয়া গ্রাম, সেখানে ঢুকতেই দেখা মিলবে শীট পরিবারের ঔদ্ধত্যর নিদর্শন। দু’পাশে সবুজ ধানখেত মাঝখানে আঁকি-বুকি কাঁচা রাস্তা দিয়ে গিয়েই সোজা প্রবেশ করতে হয় এই কোষ্টিয়া গ্রামে। পুজোর চারটি দিন গ্রামবাসীদের একটাই আবেগ, শীটেদের দুর্গাপুজো।
বর্ধিষ্ণু পরিবারের সন্তান, সার্থক শীট মেষ চরানোর জন্য বাঁকুড়ার বেলিয়াতোড় থেকে এসে উপস্থিত হয় এই কোষ্টিয়া গ্রামে। মেষ চরানোর উদ্দেশ্য নিয়ে কোষ্টিয়া গ্রামে আসা সার্থক শীট মেষ চরাতে চরাতে একদা ক্লান্ত হয়ে ঘুমিয়ে পড়েন একটি বট গাছের তলায়। সেখানেই স্বপ্নাদেশে মা দুর্গার প্রতিষ্ঠার নির্দেশ পান। তারপর একটি চালা করে মা দুর্গার পুজো সারেন তিনি, ব্যস তারপরেই ভাগ্যের চাকা হয় পরিবর্তন বিশাল সম্পত্তির মালিক হয়ে ওঠেন এই সার্থক শীট। তারপর বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে একের পর এক জমিদারি ক্রয় করেন, মালিক হয়ে ওঠেন কয়েক হাজার হেক্টর বনভূমির।
সার্থক শীটের অর্থনৈতিক অবস্থার উন্নতি হওয়ায় তিনি আড়ম্বর করে চালু করেন মা দুর্গার পুজো, প্রতিষ্ঠিত হয় মা দুর্গার বিশাল নাটমন্দির। এই পুজোর বিশেষ বৈচিত্র্য ছিল আরেকটি, এই পুজোকে কেন্দ্র করে দিনের বেলায় যাত্রা অনুষ্ঠান হত। দিনের বেলায় যাত্রা অনুষ্ঠান শুনে অবাক হন অনেকেই। এই দিনের বেলার যাত্রার পিছনে একটা অন্যতম কারণ ছিল বনে জঙ্গলে বেষ্টিত এই কোষ্টিয়া গ্রামে বুনো হাতির উপদ্রব প্রায়শই লেগে থাকত, তাই বিভিন্ন গ্রাম-গ্রামান্তরে থেকে আসা প্রজারা যাতে দিনের আলো থাকতে বাড়ি ফিরে যেতে পারেন, তার জন্যই এই ব্যবস্থাপনা ছিল। এখন যাত্রাপালা বন্ধ হয়ে গেলেও বিজয়ার দিন চলে সাংßৃñতিক অনুষ্ঠান। এই পুজোকে কেন্দ্র করে গাঁ মন্যি খাওয়ানো হত মায়ের ভোগ প্রসাদ, আনন্দে মেতে উঠতেন তৎকালীন প্রজারা।
তবে এখন মধ্যসত্তার ফলে জমিদারি অনেকটা হ্রাস পেয়েছে, অনেক সম্পত্তি সরকারের হাতে চলে গিয়েছে। জৌলুস আগের থেকে অনেকটা ফিকে পড়লেও ৩২৫ বছর ধরে চলে আসছে এই পুজো। রুজির টানে গ্রামের যে সমস্ত মানুষ বাইরে থাকেন তাঁরা আজও ছুটে আসেন এই পুজোকে উপভোগ করতে, পুজোর চারটে দিন আনন্দে মেতে ওঠেন সকলে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

three − 2 =