চার্জশিটে স্ত্রী-পুত্রের নাম, আদালতে ভেঙে পড়লেন মানিক

 

 

 

কলকাতা: আদালত থেকে বেরিয়ে বুধবার একেবারে ভেঙে পড়তে দেখা গেল প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের প্রাক্তন সভাপতি মানিক ভট্টাচার্যকে। গ্রেপ্তার হওয়ার পর থেকে দফায় দফায় জেরার মুখে পড়তে হয় তাঁকে। দুর্নীতির শিকড় খুঁজতে গিয়ে মানিকের বিরুদ্ধে বিস্ফোরক সব অভিযোগ সামনে আনেন কেন্দ্রীয় সংস্থার গোয়েন্দারা। আদালতে পেশ করা হয় কোটি কোটি টাকার দুর্নীতির হিসেব। তবে সে সব অভিযোগের মুখে আগে এভাবে ভেঙে পড়তে দেখা যায়নি প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের প্রাক্তন সভাপতিকে। এরপর বুধবার তাঁকে আদালতে পেশ করা হয়। এদিনই ১৫০ পাতার চার্জশিট পেশ করে ইডি, আর তাতেই রয়েছে মানিকের স্ত্রী ও পুত্রের নাম। আদালতে ইডি একথা জানানোর পরই ভেঙে পড়েন মানিক। চার্জশিটে স্ত্রী ও ছেলের নামের উল্লেখ রয়েছেই শুনেই কার্যত আবেগপ্রবণ হয়ে পড়তে দেখা যায় তাঁকে। এরপই আদালক কক্ষ থেকে বেরিয়ে তাঁর আইনজীবীর কাছে চলে যান মানিক ভট্টাচার্য। তাঁকে গিয়ে বলেন, ‘আমাকে মেরে ফেলো, কিন্তু আমার ছেলে ও স্ত্রী’কে জডিয়ো না।’ এরপরই মানিক সংবাদমাধ্যমের কাছেও জানান, ‘আমি আগেও কিছু বলিনি। এখনও আমার কিছু বলার নেই।’

এদিকে এদিন এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেটের তরফ থেকে জানানো হয়, রাজ্যের শিক্ষক দুর্নীতি মামলায়  গোটা নেক্সাসে কিংপিন ছিলেন মানিক ভট্টাচার্য। চার্জশিটে স্পষ্ট এ কথা উল্লেখ করেছেন তদন্তকারী আধিকারিকরা। আর্থিক দুর্নীতি মামলার ৪৪ এবং ৪৫ নম্বর ধারা এই ১৫০ পাতার চার্জশিটে উল্লেখ করা হয়েছে বলে সূত্রে খবর। পাশাপাশি মানিকের নামে থাকা মোট ৬১ টি ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে ৭.৯ কোটি টাকা ছিল, যা বাজেয়াপ্ত হয়েছে। সম্পত্তির হিসেব আলাদা বলেই জানান কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার আধাকারিকেরা। এই ৭.৯ কোটির মধ্যে রয়েছে মিউচুয়াল ফান্ড ও শেয়ারের টাকাও। প্রসঙ্গত, মানিক ভট্টাচার্যকে যে কোনও মূল্য জামিন দেওয়ার আবেদন করেন তাঁর আইনজীবী। কিন্তু, পালটা একাধিক তথ্য পেশ করে ইডি-র পক্ষ থেকে দাবি করা হয়, মানিক ভট্টাচার্যের স্ত্রী সুতপা ভট্টাচার্যের সঙ্গে মৃত্যুঞ্জয় চক্রবর্তী নামে জনৈক ব্যক্তির জয়েন্ট ব্যাংক অ্যাকাউন্ট রয়েছে। অথচ এই ব্যক্তি বর্তমানে মৃত। এই অ্যাকাউন্টে কোটি কোটি টাকা ঢুকেছিল এবং সেই টাকার সঙ্গে মানিকের স্ত্রীর আয়ের কোনও সঙ্গতি পাওয়া যায়নি। এমনই দাবি করে ইডি। কোটি কোটি টাকার লেনদেন হয়েছে। এখানেই ইডি-র তরফে দাবি করা হয় যে, দুর্নীতি মামলা থেকে প্রাপ্ত বিপুল ধনরাশির ক্ষেত্রে স্ত্রী সুতপা ভট্টাচার্যকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করতেন মানিক।

এরই পাশাপাশি ইডি-র তরফ থেকে এও জানানো হয় যে, এই মামলায় ৫,২৪৭ টি নথি পাওয়া গিয়েছে ও ৬০ জনের সাক্ষ্য নেওয়া হয়েছে। মানিকের স্ত্রী ও ছেলেকে এখনও গ্রেফতার করা হয়নি, তবে তাঁদের ভূমিকা কী ছিল, তা নিয়ে তদন্ত চলছে বলেও জানান ইডি-র আইনজীবীরা। এখনও পর্যন্ত ২৯ কোটি টাকার হিসেব পাওয়া গিয়েছে বলেও ইডি-র তরফে জানানো হয়। এছাড়া চার্জশিটে নাম রয়েছে মানিক ঘনিষ্ঠ তাপস মণ্ডলের। তাপসকে আগেই একাধিকবার জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। উল্লেখ্য, মানিকের ছেলে ও স্ত্রীর নাম আগেও সামনে এসেছে। এর আগে মানিকের স্ত্রীর একটি ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট নিয়ে প্রশ্ন ওঠে, যেখানে এক মৃত ব্যক্তির নাম থাকার অভিযোগ উঠেছিল। এছাড়া মানিকের ছেলের মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছেলের একটি কনসালটেন্সি সংস্থা ছিল বলে জানা গিয়েছে, যেখানে বেসরকারি বিএড কলেজগুলি থেকে টাকা নেওয়া হয়েছিল বলেও জানা যায়।

প্রসঙ্গত, প্রাথমিকে নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় গত ১০ অক্টোবর মানিক ভট্টাচার্যকে গ্রেপ্তার করেছিল কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা ইডি। মানিকের গ্রেফতারির ৬০ দিনের মধ্যে চার্জশিট পেশ করার নির্দেশ দেয় আদালত। তবে মানিকের গ্রেপ্তারির ৫৭ দিনের মাথায় আদালতে ১৫০ পাতার এই চার্জশিটে পেশ করে ইডি।

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

fourteen − 8 =