পাননি সরকারি সাহায্য, বৃদ্ধার বাড়ি মেরামত গ্রামবাসীদের

নিজস্ব প্রতিবেদন, বাঁকুড়া: বাঁকুড়া জেলার বিষ্ণুপুর ব্লকের উলিয়ারা গ্রাম পঞ্চায়েতের বসন্তপুর গ্রাম, এখানে রয়েছে ৭০ থেকে ৮০টি পরিবারের বাস। গ্রামের মাঝখানে একটি ছোট্ট কুঁড়েঘরে নিজের মেয়েকে নিয়ে বসবাস করেন বছর ৮০-র এক বৃদ্ধা, নাম নন্দরানি বাউরি। বহু বছর আগে শারীরিক অসুস্থতার কারণে স্বামী মারা গিয়েছেন। তারপর থেকেই একমাত্র মেয়েকে নিয়ে ভাঙাচোরা কুঁড়ে ঘরে বসবাস করেন নন্দরানি বাউরি। এমনকি বৃষ্টির সময় ঘরে বসবাস করা অযোগ্য হয়ে পড়ে। বাধ্য হয়েই অন্যের ঘরে রাত কাটাতে হয় বলে জানা গিয়েছে। খুব বড় সমস্যায় পড়লে বৃদ্ধার পাশে দাঁড়ান গ্রামবাসীরা।
নন্দরানি বাউরি এবং গ্রামবাসীদের দাবি, একটি বাড়ির জন্য বারংবার প্রশাসনের দ্বারস্থ হয়েছেন তিনি। এ দুয়ার থেকে ও দুয়ারে কড়া নেড়েছেন। সবাই প্রতিশ্রুতি দিলেও, দিনের শেষে তাঁকে সেই ভাঙাচোরা জরাজীর্ণ কুঁড়েঘরেই বসবাস করতে হত এতদিন। তবে ওই বৃদ্ধার কষ্ট গ্রামবাসীরা সহ্য না করতে পেরে, সবাই একজোট হয়ে টাকা™য়সা জোগাড় করে অসহায় বৃদ্ধার ভাঙাচোরা বসত বাড়িটি মেরামত করে দিলেন। শুধু এখানেই শেষ নয়, গ্রামের সকলেই ওই বাড়ি তৈরির কাজে হাতও লাগিয়েছেন। স্থানীয় দোকানদার থেকে শুরু করে এলাকার সকলেই বিনা পয়সায় বাড়ি তৈরির সমস্ত সামগ্রী দিয়েছেন।
গ্রামবাসীরা জানান, একটা দিন নিজেদের কাজ না করলেও, চলবে ওই অসহায় বৃদ্ধারû বাড়িটি তৈরি করে দেওয়া জরুরি ছিল। তাই তাঁরা এদিন গ্রামের কেউ নিজেদের গন্তব্যে না গিয়ে বৃদ্ধার বাড়ি তৈরি করতে হাত লাগান। এমনকি সবাই চাঁদা তুলে নিজেদের দুপুরের খাবারেরও ব্যবস্থা করেন তাঁর বাড়িতেই। পিকনিকের মুডে উৎসবের আমেজে গ্রামবাসীরা সকলেই একজোট হয়ে অসহায় বৃদ্ধার বাড়ি তৈরি করে দিলেন।
কিন্তু প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে, রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী যেখানে বারংবার বলছেন, রাজ্যে ১০০ শতাংশ উন্নয়ন হয়েছে, তারপরও এই দৃশ্য কেন। তাছাড়া, এলাকায় রয়েছে তৃণমূল পরিচালিত পঞ্চায়েত, এবারও বোর্ড গঠন করতে চলেছে তৃণমূল কংগ্রেস, রয়েছেন বিজেপির সাংসদ, তাঁরও মেয়াদ প্রায় পাঁচ বছর হতে চলল। তবে আজও কেন এই অসহায় বৃদ্ধার এই দুর্দশা? কেন মহিলার আবাস যোজনার বাড়ি পেলেন না?
অবশ্য উলিয়ারা গ্রাম পঞ্চায়েতের বিদায়ী প্রধান তাসমিনা খাতুন জানান, ওই মহিলা তাঁর কাছে কোনও রকম লিখিত দরখাস্ত করেননি। তাঁর নজরে থাকলে সমস্যার সমাধান হত। তবে এলাকায় সার্ভে হয়েছে, যাঁদের বাড়ির প্রয়োজন তাঁদেরটা হবে। এলাকার মানুষের সমস্যার সমাধান হবে শীঘ্রই। তবে এই পরিস্থিতিতে শাসকদলকে আক্রমণ করতে ছাড়েনি বিজেপি। বিষ্ণুপুর সাংগঠনিক জেলা বিজেপির সহ-সভাপতি দেবপ্রিয় বিশ্বাস বলেন, ‘ধন্যবাদ জানাই গ্রামের মানুষকে, কারণ তাঁদের চোখ খুলে গিয়েছে আর যারা বলে উন্নয়নের কথা সেই তৃণমূলের এবং প্রশাসনের এখনও চোখ খোলেনি। এরপরেও কি তাদের চোখ খুলবে না? তারা উন্নয়ন করতে আসেনি, তারা টাকা লুঠতে এসেছে।’ অন্যদিকে, বিজেপি সাংসদকে এলাকায় কাজ করতে দেওয়া হচ্ছে না বলেও দাবি গেরুয়া বাহিনীর।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

ten − 4 =