দেউচা পাঁচামির আদিবাসী আন্দোলনে পুলিশি হুমকি! গণতান্ত্রিক অধিকারের ওপর সরাসরি আঘাত- কটাক্ষ শুভেন্দুর।
পশ্চিমবঙ্গের বীরভূম জেলার দেউচা পাঁচামি কয়লাখনি প্রকল্পের বিরুদ্ধে দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন স্থানীয় আদিবাসী সম্প্রদায়ের মানুষ। তাঁদের মূল দাবি, জল-জঙ্গল-জমি রক্ষা করা এবং নিজেদের ঐতিহ্যগত বাসভূমি থেকে উচ্ছেদের বিরুদ্ধে লড়াই। কিন্তু বারবার এই আন্দোলনকে দমন করার চেষ্টা করা হয়েছে, কখনও প্রশাসনিক চাপ দিয়ে, কখনও পুলিশি নিপীড়নের মাধ্যমে।
সাম্প্রতিক ঘটনায় পুলিশের ভূমিকা আরও একবার প্রশ্নের মুখে পড়েছে। শুক্রবার নিজের সোশ্যাল মিডিয়ায় সরাসরি জেলার ডেপুটি পুলিশ সুপারের বিরুদ্ধে অভিযোগ তোলেন রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। তিনি তার সোশ্যাল মিডিয়াতে লেখেন, বীরভূম জেলার ডেপুটি সুপারিন্টেন্ডেন্ট অফ পুলিশ (D&T) অয়ন সাধু সরাসরি আন্দোলনকারীদের হুমকি দিচ্ছেন। তিনি এক আন্দোলনকারীকে স্পষ্ট ভাষায় বলেছেন, “আগে যখন সমস্যা (আন্দোলন) হয়েছিল, তখন সাদি হাঁসদার ভাইয়ের জীবন গেছিলো, তুমি খুব ভালো করে জানো।”
বিরোধী দলনেতা আরও লেখেন এই বক্তব্যের অর্থ সুস্পষ্ট, ২০২২ সালের আন্দোলনের সময় পুলিশের গুলিতে প্রাণ হারানো ধনা হাঁসদার ঘটনা স্মরণ করিয়ে দেওয়া হচ্ছে, এবং বর্তমান আন্দোলনকারীদের একই পরিণতির হুমকি দেওয়া হচ্ছে। একজন উচ্চপদস্থ পুলিশ আধিকারিকের মুখে এমন মন্তব্য শুধু অগণতান্ত্রিক নয়, এটি ভয়ঙ্কর ও ন্যক্কারজনক।
রাজ্যের প্রশাসনের ভূমিকা ও রাজ্য সরকারের নীরবতা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন শুভেন্দু। তিনি আরও লেখেন দেউচা পাঁচামি কয়লাখনি প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য রাজ্য সরকার শুরু থেকেই আদিবাসীদের আন্দোলনকে দমন করার চেষ্টা চালিয়ে আসছে। এর আগে বহুবার পুলিশি নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে। ২০২২ সালের আন্দোলনে পুলিশ গুলি চালিয়েছিল, যার ফলে ধনা হাঁসদার মৃত্যু হয়। অথচ প্রশাসন সেই ঘটনার কোনও সঠিক তদন্ত করেনি। এখন আবার নতুন করে আন্দোলনকারীদের ভয় দেখানো হচ্ছে।
এমনকি পুলিশের এই হুমকির বিরুদ্ধে রাজ্য সরকার সম্পূর্ণ নীরব। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এই প্রকল্পকে বাস্তবায়ন করতে মরিয়া, এবং তার জন্য প্রশাসনকে ব্যবহার করে আদিবাসীদের ওপর দমননীতি প্রয়োগ করা হচ্ছে। পুলিশকে “দলদাস বাহিনী” হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে, যারা সাধারণ মানুষের কণ্ঠ রোধ করতে চায়।
ওই সোশ্যাল মিডিয়ার অ্যাকাউন্টের পোস্টেই তিনি জানান গণতান্ত্রিক লড়াই চলবেই।জল-জঙ্গল-জমির অধিকারের লড়াই কেবল দেউচা পাঁচামির নয়, এটি গোটা বাংলার এবং দেশের আন্দোলন। রাজ্য সরকার ও তার অনুগত পুলিশ প্রশাসন যতই ভয় দেখাক, আদিবাসী সম্প্রদায়ের মানুষ তাঁদের অধিকার ছেড়ে দেবেন না। ইতিহাস সাক্ষী, ভূমিপুত্রদের উপর জোরজবরদস্তি কখনও টেকেনি, টিকবেও না।
আমরা এই পুলিশি হুমকির তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই। এছাড়া, অয়ন সাধুর বিরুদ্ধে কঠোর প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি। দেউচা পাঁচামির আন্দোলনকারীদের পাশে আমরা আছি, থাকব। এই লড়াই মানুষের, আর মানুষই জয়ী হবে!