মমতাকে চ্যালেঞ্জ ছুড়লেও, ‘উত্তাপহীন’ ২৩ মিনিটের ভাষণে সমর্থকদের হতাশ করলেন শাহ

যেমন গর্জে ছিল রাজ্য বিজেপি, শাহি সফরে তেমন বর্ষণ হল না। অমিত শাহ এলেন, দেখলেন কিন্তু জনতার মন জয় করতে পারলেন না। এমনকী, তৃণমূলকে মোক্ষম জবাব দিতে যে আগুন ঝড়ানো বত্তৃ«তার মহড়া দিয়েছিলেন শুভেন্দু, সুকান্তরা, বিজেপির সমর্থকরা তেমন কোনও উত্তেজনাই অনুভব করতে পারেননি বললে খুব একটা ভুল হবে না।  শহর কিংবা গাঁ-গঞ্জ থেকে আসা বিজেপির জমায়েতকে হতাশা নিয়েই বাড়ি ফিরতে হয়েছে।

ভিড়ের বহর এবং স্বতঃস্ফূর্ততার অভাবে শাহকে কি খানিকটা আশাহত দেখিয়েছে? রাজ্য বিজেপি নেতারা অবশ্য এমনটা মানতে রাজি হননি। কিন্তু এটা গোটা ধর্মতলা দেখেছে যে, শাহ প্রকাশ্যেই বিস্ময় প্রকাশ করেছেন তাঁর সঙ্গে গলা মিলিয়ে ভিড়ের গর্জন শুনতে না-পেয়ে। বলেও ফেলেছেন, ‘বাংলার লোকেদের গলার জোর কোথায় গেল?’

তবে ‘গলার জোর’-এর চেয়েও এই সভায় দরকার ছিল ‘সংগঠনের জোর’-এর। যে জোর খাটিয়ে লোক জোগাড় করে গোটা মধ্য কলকাতা অচল করে দেওয়া যায়। মনে করা হয়, যে কোনও রাজনৈতিক কর্মসূচির সাফল্যের সূচক হল ‘আমজনতার ভোগান্তি’। যে ভাবে রাজ্য বিজেপি হুঙ্কার দিয়েছিল, তাতে অনেকেই মনে করেছিলেন, যানজটে, মিছিলে, জনসমাগমে দুর্ভোগ হবে চূড়ান্ত। বুধবার মধ্য কলকাতার অনেক স্কুলে অঘোষিত ছুটিও দিয়ে দেওয়া হয়েছিল। বাস্তবে দেখা গিয়েছে, ভিক্টোরিয়া হাউসের সামনেটুকু বাদ দিলে প্রায় অন্যান্য দিনের মতোই চেহারা থেকেছে ধর্মতলার চেহারা। শাহের বক্তৃতা শুরুর মিনিট দশেক আগেও লেনিন সরণি দিয়ে প্রায় নির্বিঘ্নেই যান চলাচল করেছে।

উপরন্তু কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এদিন যা বলেন, তার বেশিটাই বহুবার শোনা গিয়েছে। বাংলায় এর আগে অনেক সভাতেই এই সব কথা বলে গিয়েছেন অমিত। ‘নতুন’ বলতে শুধু দুর্নীতি অভিযোগে গ্রেপ্তার হওয়া তৃণমূলের তিন নেতা পার্থ চট্টোপাধ্যায়, অনুব্রত মণ্ডল, জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকদের নামোচ্চারণ। সেই প্রেক্ষিতে তৃণমূল তথা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে কিছুটা চ্যালেঞ্জের সুরে বার্তা দেওয়া। ফলে শীত বিকেলের বিষণ্ণতার সঙ্গে মিশে রইল অনেক আশা নিয়ে আসা মানুষের হতাশাও। সাধারণ ভাবে শাহের সভায় যে জোশ দেখা যায়, বুধবার সেটা দেখতে পেল না ধর্মতলা। নেতা-মন্ত্রীর ঘর থেকে নোটের বান্ডিল উদ্ধার নিয়েও খোঁচা দিলেন তিনি। নাম না করে মহুয়া মৈত্রকেও নিশানা করেন শাহ।

আর কয়েক মাস বাদেই লোকসভা ভোট। তার আগে ধর্মতলার সভা থেকে ফের সিএএ ইস্যু উস্কে দিলেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। তাঁর চ্যালেঞ্জ, সিএএ অর্থাৎ সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন গোটা দেশের আইন। বাংলার সরকার এই আইন রুখতে পারবে না। তাঁর দাবি, পাশের রাজ্য অসম যেখানে অনুপ্রবেশ কার্যত শূন্য করে ফেলেছে, সেখানে বাংলার সরকার অনুপ্রবেশকারীদের উৎসাহ দিচ্ছে। এমনকী, কাটমানির বদলে আধার কার্ড, ভোটার কার্ডও বিলি করা হচ্ছে।

বুধবার লক্ষ মানুষের জমায়েত হবে জেনেই তো সদ্য পাঁচ রাজ্যের প্রচার শেষ-করা শাহ কলকাতায় আসার বিষয়ে রাজি হয়েছিলেন। কিন্তু কোথায় কী! সামনের দিকে চেনামুখের ভিড় বাদ দিলে পিছনের দিকটা অনেকটাই ফাঁকা ছিল। রাজ্য বিজেপির নেতারা সমাগমের সংখ্যা নিয়ে যে দাবিই করুন না কেন, শাহের চোখকে ফাঁকি দেওয়া সম্ভব হয়নি।

কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সফরসূচিতে বলা ছিল, তিনি বেলা পৌনে ২টো নাগাদ মঞ্চে উঠবেন। মঞ্চ ছাড়বেন দুপুর সওয়া ৩টে নাগাদ। বাস্তবে দেখা গেল, তার অন্তত ৪৫ মিনিট আগে মঞ্চ থেকে নেমে গেলেন শাহ। ভাষণ শেষও করলেন খানিকটা আচমকাই। রাজ্য বিজেপির একটি সূত্রে দাবি করা হয়েছিল, অন্তত আধঘণ্টা বত্তৃ«তা করবেন শাহ। সেখানে সাকুল্যে ২৩ মিনিট ভাষণ দিয়েছেন শাহ। বেলা আড়াইটে নাগাদ সভাস্থল ছেড়ে তিনি রেসকোর্স হেলিপ্যাড হয়ে বিমানবন্দরের উদ্দেশ্যে রওনা হয়ে যান।

রাজ্য বিজেপি নেতাদের একাংশের ব্যাখ্যা, একাধিক নির্বাচনী সভা করে শাহ ক্লান্ত ছিলেন। দিল্লিতে তাঁর জরুরি কাজও ছিল। তাই তিনি একটু আগে-আগেই সভাস্থল ছেড়ে গিয়েছেন। কিন্তু এই সভার মূল আকর্ষণ ছিলেন শাহ স্বয়ং। যে কারণেই হোক, তাঁর মধ্যে এমন ‘গা-আলগা’ ভাব দেখা যাওয়াটা যে বাঞ্ছনীয় নয়, তা একান্ত আলোচনায় অনেকেই মেনে নিচ্ছেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

ten + seven =