গুজরাটের ডেরায় গিয়ে ‘দাদাগিরি’ দেখাল ডেভিড ওয়ার্নারের দিল্লি ক্যাপিটালস। আমেদাবাদে আজ মুখোমুখি হয়েছিল গত বারের আইপিএল চ্যাম্পিয়ন এবং এ বারের আইপিএলের পয়েন্ট টেবলের টপার গুজরাট টাইটান্স ও লিগ টেবলের লাস্ট বয় দিল্লি ক্যাপিটালস। শেষ বল অবধি গড়াল ম্যাচ। হব হব করেও এই ম্যাচ হল না গুজরাটের। চলতি আইপিএলে সর্বশেষ সাক্ষাতে অরুণ জেটলি স্টেডিয়ামে দিল্লিকে ৬ উইকেটে হারিয়েছিল গুজরাট। এ বার গুজরাটকে তাদের ঘরের মাঠে হারিয়ে বদলা নিল দিল্লি। ডেভিড ওয়ার্নারের নড়বড়ে দিল্লি ক্যাপিটালসের বিরুদ্ধে আজ ঘরের মাঠে নেমেছিল গুজরাট টাইটান্স। টস জিতে প্রথমে ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্ত নেন ওয়ার্নার। যা মোটেও ক্যাপিটালসের পক্ষে যায়নি। বড় রান খাড়া করতে পারেনি দিল্লি। পাওয়ার প্লে-র মধ্যে দিল্লির ব্যাটারদের রীতিমতো নাকানিচোবানি খাইয়ে ছাড়েন মহম্মদ সামি। দিল্লির ইনিংসে প্রথম বলেই দিল্লির ওপেনার ফিল সল্টের উইকেট তুলে নেন সামি। শুরুতেই স্কোরবোর্ড হয়ে যায় ১-০। দ্বিতীয় ওভারের প্রথম বলে আমন খান ও ডেভিড ওয়ার্নারের মধ্যে ভুল বোঝাবুঝি হয়। মাশুল হিসেবে রান আউট হয়ে মাঠ ছাড়েন ওয়ার্নার (২)। এরপর তৃতীয় ওভারের পঞ্চম বলে সামি তুলে নেন রাইলি রোসোর (৮) উইকেট। পঞ্চম ওভারে জোড়া উইকেট নেন সামি। পঞ্চম ওভারের প্রথম বলে মনীশ পান্ডে (১) এবং শেষ বলে প্রিয়ম গর্গকে (১০) ফেরান সামি। পাওয়ার প্লে-র মধ্যে ৩ ওভার বল করে ৪ উইকেট নেন মহম্মদ সামি। এরপর পাওয়ার প্লে-র পরের ওভারে ফের বোলিংয়ে আসেন তিনি। মোট ৪ ওভার বল করে মাত্র ১১ রান দেন। আইপিএলের ইতিহাসে এই প্রথম বার ৪ উইকেট নিলেন মহম্মদ সামি। পাওয়ার প্লে-র শেষে স্কোরকার্ড ছিল ২৮-৫। এটা বলার অপেক্ষা রাখে না যে, কোনও দলের জন্য এই পারফরম্যান্স রীতিমতো চাপের। এরপর দিল্লিকে টেনে তোলার কাজটা করেন আমন খান ও অক্ষর প্যাটেল। ষষ্ঠ উইকেটে আমন-অক্ষর জুটিতে ৫০ রান তোলেন। দ্রুত ৫ উইকেট তুলে নিলেও এই জুটিকে টলাতে পারছিলেন না রশিদ-নুররা। ১৪তম ওভারের শেষ বলে এসে অবশেষে মোহিত শর্মা ফেরান অক্ষরকে (২৭)। এরপর রিপল প্যাটেলের সঙ্গে জুটি বাঁধেন আমন। চাপের মুখে থেকেও দেখতে দেখতে হাফসেঞ্চুরি পূর্ণ করে ফেলেন আমন। তবে অর্ধশতরান পূর্ণ করার পর বেশিক্ষণ ক্রিজে থাকতে পারেননি আমন। ১৯তম ওভারের তৃতীয় বলে রশিদ খান তুলে নেন আমনের (৫১) উইকেট। শেষ ওভারে মোহিত শর্মার হাতে বল তুলে দেন হার্দিক। ২০তম ওভারের পঞ্চম বলে রিপল প্যাটেলকে ফিরিয়ে মোহিত তুলে নেন তাঁর আইপিএল কেরিয়ারের একশোতম উইকেট। নির্ধারিত ২০ ওভারে ৮ উইকেট হারিয়ে ১৩০ রান করে দিল্লি। লো স্কোরিং ম্যাচে যে দল রান তাড়া করে তারা চায় দ্রুত টার্গেট পূরণ করে জয়ের পাশাপাশি নেট রানরেটে উন্নতি করতে। অপরদিকে প্রতিপক্ষ দল চায় পাওয়ার প্লে-র মধ্যে রান তাড়া করা দলের টপ অর্ডার ভেঙে দিতে। ঠিক সেই ছবিটাই আজ আমেদাবাদে দেখা গেল। তাসের ঘরের মতো ভেঙে পড়ল গুজরাটের টপ অর্ডার। দুই ওপেনার তো আজ চরম ব্যর্থ হয়। দিল্লির ক্রিকেটারদের তিনটি ক্যাচ নিয়ে আইপিএলে ক্যাচের সেঞ্চুরি করেছে ঋদ্ধিমান সাহা। দিল্লির মতো ইনিংসের প্রথম বলে না হলেও, প্রথম ওভারের শেষ বলে ঋদ্ধিমান সাহাকে (০) ফেরান খলিল আহমেদ। দিল্লির মতো গুজরাটের স্কোরকার্ডও প্রথম ওভারের পর হয় ১-০। চতুর্থ ওভারের প্রথম বলে শুভমনকে (৬) ফেরান অনরিখ নর্টজে। পঞ্চম ওভারের শেষ বলে নাকল বল করে বিজয় শঙ্করকে ফাঁসান ইশান্ত শর্মা। পাওয়ার প্লে-র মধ্যে ৩ উইকেট হারিয়ে ফেলে গুজরাট। স্কোরবোর্ডে ওঠে মাত্র ৩১ রান। সপ্তম ওভারে ডেভিড মিলারের (০) স্টাম্প ছিটকে দেন কুলদীপ যাদব। এরপর অধিনায়ক হার্দিক পান্ডিয়ার সঙ্গে জুটি বাঁধেন অভিনব মনোহর। ১৮তম ওভারের প্রথম বলে অভিনবের উইকেট তুলে নেন খলিল। এরপর ক্রিজে আসেন রাহুল তেওয়াটিয়া। ১৯তম ওভারে ছক্কার হ্যাটট্রিক করে গুজরাটকে জয়ের দিয়ে এগিয়ে নিয়ে যান রাহুল। কিন্তু কে জানত শেষ ওভারে ইশান্ত শর্মা তাঁর উইকেট তুলে নেবেন। শুধু তাই নয়, জয়ের জন্য যেখানে শেষ ওভারে প্রয়োজন ছিল ১২ রান, সেখানে মাত্র ৬ রান দিয়ে ১ উইকেট নিয়ে দিল্লিকে ম্যাচ জেতালেন ইশান্ত। শেষ অবধি ৫ রানে হেরে গেল গুজরাট। ৫৯ রানে অপরাজিত থেকে মাঠ ছাড়েন ক্যাপ্টেন হার্দিক। ৩ রানে নট আউট থাকেন রশিদ খান। লিগ টেবলের টপারদেরও যে লাস্টবয়রা হারাতে পারে, তা কেউ ভাবেই। আর এটাই তো আইপিএল। যা ভাবা হয় না ঠিক তেমনটাই হয়। আগামীদিনেও হয়তো তেমনটাই হবে।