সাম্প্রতিক সময়ে বাংলার ক্রিকেট প্রশাসনে বড়সড় বিতর্ক তৈরি হয়েছে সিএবির যুগ্ম সচিব দেবব্রত দাসকে কেন্দ্র করে। অ্যাপেক্স কাউন্সিল তাঁকে সাসপেন্ড করেছে এবং এই সিদ্ধান্ত নিয়েই আগামীকাল ওম্বুডসম্যানের শুনানি হবে। অভিযোগ উঠেছে, দেবব্রত দাস নিজের ক্ষমতার অপব্যবহার করে ক্রিকেটারদের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের টাকা নিয়েছেন, দলের সুযোগ করে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে তাঁদের সঙ্গে প্রতারণা করেছেন। এর পাশাপাশি বিভিন্ন ইভেন্টের টিকিট বিক্রির টাকা সিএবিকে না দেওয়ার মতো আর্থিক অনিয়মের কথাও সামনে এসেছে। ফলে বিষয়টি শুধুই ব্যক্তিগত অভিযোগে সীমাবদ্ধ নেই, বরং রাজ্যের ক্রিকেট নিয়ামক সংস্থার ভাবমূর্তিতেও ধাক্কা দিয়েছে।
সবচেয়ে আলোচিত অভিযোগ এসেছে বাংলার প্রতিভাবান পেসার সৌম্যদীপ মণ্ডলের পরিবারকে কেন্দ্র করে। সৌম্যদীপের বাবার কাছ থেকে দেবব্রত দাস প্রায় ৩ কোটি টাকা নিয়েছেন বলে দাবি। টাউন ক্লাবের সভাপতি সিএবিকে একটি চিঠিতে অভিযোগ করেন, শুধু সৌম্যদীপ নয়, গীত পুরীর মতো আরও কয়েকজন ক্রিকেটারকে টাউন ক্লাবে খেলতে বাধ্য করেছিলেন দেবব্রত। এর বিনিময়ে তাঁদের অভিভাবকদের কাছ থেকে কোটি কোটি টাকা নিয়েছিলেন। প্রতিশ্রুতি ছিল বাংলা দলে সুযোগ পাইয়ে দেওয়ার। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তিনি প্রতিশ্রুতি রাখতে ব্যর্থ হন। এমনকি ক্লাবে খেলার পরেও অনেক ক্রিকেটারকে প্রাপ্য পারিশ্রমিক দেননি বলে অভিযোগ জমা পড়ে।
অন্যদিকে, প্রশ্ন উঠছে—ঘুষ নেওয়া যেমন অপরাধ, দেওয়া তেমনই অপরাধ। তাহলে ক্রিকেটারের পরিবার যদি টাকা দিয়ে থাকে, তাঁদের দায় নেই? সিএবির অভ্যন্তরে অবশ্য পাল্টা মত দেওয়া হচ্ছে—এখানে ব্ল্যাকমেলকারী এবং ব্ল্যাকমেলড ব্যক্তি সমান অপরাধী হতে পারে না। সৌম্যদীপ নিজে কোনও টাকা দেননি, বরং নিজের যোগ্যতায় বাংলা দলে জায়গা করে নিয়েছেন। গত মরশুমে প্রথম ডিভিশনের সেরা উইকেটশিকারীদের মধ্যে প্রথম পাঁচে ছিলেন তিনি। তাই একজন প্রতিভাবান বাঙালি ক্রিকেটারের মনোবল ভাঙার চেষ্টা অযৌক্তিক বলেই মনে করছেন সিএবির কর্তারা।
এখানে আরেকটি তুলনাও টানা হচ্ছে। কোষাধ্যক্ষ প্রবীর চক্রবর্তী সম্পর্কেও অভিযোগ উঠেছিল, কিন্তু তাঁর বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। সিএবির ব্যাখ্যা—প্রবীরের বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল তাঁর নিজস্ব ক্লাব উয়াড়িকে ঘিরে। সেখানে সিএবির স্বার্থ ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি। তাই বিষয়টি আদালতের মাধ্যমে তিনি সামলাবেন। ফলে তাঁর অবস্থান দেবব্রতের মতো নয়। দেবব্রত দাস নিজের পদ ব্যবহার করে একাধিকবার প্রতারণা করেছেন, যার মধ্যে ক্লাব অনুমোদন করিয়ে দেওয়ার নাম করে টাকা নেওয়ার অভিযোগও রয়েছে।
অ্যাপেক্স কাউন্সিলে ভোটাভুটিতেও বিষয়টি স্পষ্ট হয়েছে। ১৯ জন সদস্যের মধ্যে মাত্র ৩ জন দেবব্রত দাসকে সমর্থন করেছেন। বাকি ১৬ জন তাঁর বিরুদ্ধে ভোট দেন। এর থেকেই বোঝা যায়, সংস্থার ভেতরে তাঁর প্রতি আস্থা নেই বললেই চলে। তাই তাঁকে সাসপেন্ড করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এখন চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন ওম্বুডসম্যান।
সবশেষে বলা যায়, বাংলার ক্রিকেটে যখন স্থানীয় প্রতিভাদের জায়গা করে দেওয়ার দাবি জোরদার হচ্ছে, তখন এক প্রতিভাবান বাঙালি ক্রিকেটারকে ঘিরে এমন অযথা বিতর্ক অত্যন্ত অনভিপ্রেত। দেবব্রত দাসের বিরুদ্ধে অভিযোগের সত্যতা প্রমাণ হলে কড়া শাস্তি দেওয়া জরুরি, যাতে ভবিষ্যতে আর কেউ ক্ষমতার অপব্যবহার করে খেলোয়াড়দের জীবন ও স্বপ্নের সঙ্গে ছেলেখেলা করতে না পারে।

