নিজস্ব প্রতিবেদন, মেমারি: পূর্ব বর্ধমান জেলার বর্ধমান পূর্ব লোকসভা কেন্দ্রের সাংসদ সুনীল মণ্ডলের বিরুদ্ধে জাতীয় সড়কের পালশিট টোল প্লাজার এক কর্মীকে মারধরের অভিযোগ উঠল। আর সেই ঘটনার সিসি ক্যামেরার ফুটেজ প্রকাশ্যে আসতেই নিন্দার ঝড় উঠেছে বিভিন্ন মহলে। যদিও ফুটেজের সত্যতা যাচাই করেনি ‘একদিন’ পত্রিকা।
জানা গিয়েছে, বৃহস্পতিবার মঙ্গলকোটের একটি সরকারি অনুষ্ঠানে যোগ দিতে যাচ্ছিলেন সাংসদ সুনীল মণ্ডল। কলকাতা থেকে পালশিট টোল পেরিয়ে যাওয়ার সময়ে আনুমানিক বেলা সোয়া একটা নাগাদ কর্তব্যরত টোল কর্মী উজ্জ্বল সিং সর্দার নিয়ম মেনেই গাড়ি আটকান টোল নেওয়ার জন্য। সেই সময়ের ভিডিও ফুটেজে দেখা গিয়েছে, গাড়ির সামনে একটি লাল ফাইবারের স্ট্যান্ড লাগিয়ে দেন উজ্জ্বল সিং নামে ওই কর্মী। চালক সেই প্লাস্টিকের স্ট্যান্ড ফেলে গাড়ি নিয়ে এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেও, না পেরে গাড়ি পিছতে থাকেন। এরপরই গাড়ির পিছনে বাও দিকে বসে থাকা ব্যক্তি গাড়ি থেকে নেমে তেড়ে যান উজ্জ্বল সিং সর্দার নামে ওই টোল কর্মীর দিকে। তাঁর গলা টিপে ধরে তাঁকে মারধর করেন তিনি। ওই ব্যক্তি সাংসদ সুনীল মণ্ডল বলে দাবি। ঘটনার আকষ্মিকতায় হতচকিত হয়ে পড়েন উজ্জ্বল। সাংসদের সঙ্গে থাকা সরকারি নিরাপত্তারক্ষী ও গাড়ির চালকও গাড়ি থেকে নেমে গলা উঁচিয়ে কথা বলতে থাকেন বলে শোনা গিয়েছে। পরে টোলের অনান্য লোকেরা এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আনেন।
একজন সাংসদ এইভাবে গাড়ি থেকে নেমে মারধর করায় রীতিমতো আতঙ্কিত টোলের ওই কর্মী কোনও ভাবেই কোনও কথা বলতে রাজি হননি। বারবার প্রশ্ন করায় তিনি বলেন, ‘আমি শুধু আমার ডিউটি করেছি। এভাবে কেন উনি মারলেন।’ গোটা ঘটনাটি পালশিট টোলে থাকা সিসিটিভির ফুটেজে ধরা পড়ে। বিষয়টি জানাজানি হতেই সকলেই এই ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন।
প্রসঙ্গত, পালশিট টোলের কর্মীদের অনেকেই শাসকদলের সক্রিয় কর্মী। ফলে দলেরই সাংসদের বিরুদ্ধে কেউ মেমারি থানায় লিখিত অভিযোগ না জানালেও, থানায় ফোন করে বিষয়টি জানিয়েছেন তাঁরা। এক কর্মীর দাবি, ‘উনি ভদ্রভাবে বলতে পারতেন। আমাদেরও তো নিয়ম মেনে কাজ করতে হয়। আমরা জেলা সভাপতি সহ থানায় বিষয়টি জানিয়েছি। এবার যা নির্দেশ আসবে সেই মতো কাজ করব।’ তৃণমূলের জেলা সভাপতি রবীন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘সে যেই হোক, আইন কেউ নিজের হাতে তুলে নিতে পারেন না। যদি কারও দোষ থাকে, তাঁকে এভাবে মারধর করা কোনও ভাবেই বরদাস্ত করা যায় না। প্রয়োজনে সাংসদ অভিযোগ জানাতে পারতেন। কিন্তু সেটা না করে এভাবে মারধর করা খুবই অন্যায় হয়েছে। আইনগতভাবে যা হওয়ার হবে।’
তবে সাংসদ সুনীল মণ্ডল অবশ্য প্রথমে বিষয়টি মানতেই চাননি। তিনি বলেন, ‘আমি গাড়ি থেকে নেমে ছেলেটিকে আদর করেছি। ওকে বলেছি, তোর এলাকার সাংসদকে তুই চিনিস না। ওকে মারধর কেন করতে যাব।’ পরে ভিডিওর কথা শুনে অবশ্য মেনে নেন তিনি মারধর করেছেন। বলেন, ‘হ্যাঁ আমি ওকে মেরেছি। মঙ্গলকোটে একটা সরকারি অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়ার বিষয় ছিল। আমার তাড়া ছিল, সিকিউরিটি বলার পরেও উনি গাড়ি ছাড়ছিলেন না, তাই মেরেছি।’
তাঁর দাবি, ওই টোল কর্মী অশিক্ষিত। লেখাপড়া জানেন না। এই ধরনের যুবকদের টোল প্লাজায় কাজে নেওয়াও ঠিক হয়নি বলেও তিনি দাবি করেন। এই ঘটনার প্রসঙ্গে বর্ধমান সদরের বিজেপির জেলা সহ সভাপতি রমন শর্মা ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়ে বলেন, ‘বামফ্রন্টের গর্ভে জন্ম সুনীল কুমার মণ্ডলের। তারপরে তৃণমূলে গিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অনুপ্রেরণায় এই ধরনের কাজ করে যাচ্ছেন উনি। একজনেরও কোনও দিন কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা তো উনি করতে পারেননি। তারপরেও উনি কী ভাবে একটা খেটে খাওয়া টোল কর্মীকে অশিক্ষিত বলেন। সে তো নিজের কাজ ভালো মতোই করেছে। টোল প্লাজার ইউনিয়নটাও তো তৃণমূলের। দল এখন বুঝুক এই বিষয়টা।’