শনিবার বিকেলেই রাজ্য়ে পা রেখেছেন বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি জগৎ প্রকাশ নাড্ডা। কারণ, দোরগোড়ায় পঞ্চায়েত নির্বাচন। আর ২০২৪-এ লোকসভা নির্বাচনের আগে এই নির্বাচনকেই পাখির চোখ করেছে বিজেপি। আর এই পঞ্চায়েত নির্বাচনের ফলই বুঝিয়ে দেবে বিজেপির সংগঠন কতটা মজবুত হয়েছে এ রাজ্যে। সেই সঙ্গে মানুষ কতটা বিজেপিকে চাইছেন তারও একটা স্পষ্ট আভাস মিলবে। এই ফল থেকেই এটাও প্রমাণ পাওয়া যাবে ২০২৪-এর লোকসভা নির্বাচনের সাম্ভাব্য ফল কী হতে পারে পশ্চিমবঙ্গে। আর সেই কারণে রবিবার তাঁকে দাপিয়ে বেড়াতে দেখা গেল দক্ষিণবঙ্গ জুড়ে। পশ্চিমবঙ্গে জোড়া সভা এদিন করেন বিজেপির এই সর্বভাীরতীয় সভাপতি। প্রথমেই পূর্বস্থলী সভা থেকে তৃণমূলের নতুন সংজ্ঞা বোঝালেন বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি। তাঁর চোখে টিএমসি -র অর্থ ‘টি’ হল তোলাবাজি, টেট, ‘এম’ হল মাফিয়া আর ‘সি’ হল করাপশন ও কমিশন। শুধু তাই নয়, পূর্ব বর্ধমানের সভা থেকে বঙ্গে নারী নির্যাতনের পরিসংখ্যানও এদিন তুলে ধরেন তিনি। এদিনের সভা থেকে নাড্ডা বর্ধমানবাসী তথা রাজ্যবাসীর উদ্দেশে বার্তা দেন, ‘বাংলা গোটা দেশকে দিশা দেখায়।’ তৃণমূলকে আক্রমণ করে বিজেপির সর্বভাবতীয় সভাপতির হুঁশিয়ারি, ‘এই জনসভার ভিড় বলে দিচ্ছে বাংলায় পরিবর্তন আসতে চলেছে। বাংলাকে অশান্ত করার চেষ্টা করছে তৃণমূল। অপশাসন, অত্যাচার থেকে মুক্তি চায় বাংলা।’
এদিনের এই সভা থেকে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ‘সুশাসনের’ খতিয়ানও তুলে ধরেন বিজেপির সর্ভারতীয় সভাপতি জগৎপ্রকাশ নাড্ডা। একইসঙ্গে তাঁর সংযোজন, ‘দেশের যুবকদের আশা, আকাক্ষা পূরণ করতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি একেরা পর পদক্ষেপ করেছেন। এদিন উঠে আসে বর্তমানে ভারতের কোভিড অবস্থাও। এরই রেশ টেনে বলেন, ‘আমেরিকার প্রেসিডেন্টও মাস্ক পরছেন। কিন্তু, জনসভায় এত লোকজন পাশাপাশি বসে রয়েছেন। কিন্তু, কারও মুখে মাস্ক নেই। আর তা সম্ভব হয়েছে কারণ প্রধানমন্ত্রী কোটি কোটি ভ্যাকসিন ডোজ দিয়েছেন। কলকাতার মেট্রো প্রকল্পের জন্য ১ হাজার কোটি টাকা রেখেছে কেন্দ্র। সুশাসনই প্রধানমন্ত্রী মোদির লক্ষ্য।’ একইসঙ্গে এও মনে করিয়ে দেন,মায়ের শেষকৃত্য সম্পন্ন করার মাত্র ঘণ্টাখানেকের মধ্যেই দেশের সেবায় যোগ দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী। উদ্বোধন করেন হাওড়া-জলপাইগুড়ি বন্দে ভারত ট্রেনের।
জেপি নাড্ডা এদিন এও জানান, লেন, ‘জল জীবন মিশন-এর উদ্যোগ নিয়েছে। কিন্তু, এই রাজ্যে সেই প্রকল্পও ঠিক মতো করা হচ্ছে না। মোদীজির স্বপ্ন কেউ ঝুপড়িতে থাকবে না। সেই জন্য প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনা শুরু করেছেন মোদি। তাও বাংলা আবাস যোজনা বানিয়ে দিয়েছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেখানে কোনও অর্থ না দিয়ে কেন্দ্রের প্রকল্প চুরি করছে।’ একইসঙ্গে নাড্ডার সংযোজন, ‘বাংলায় ৭৪ লাখ শৌচালয় তৈরি করা হয়েছে।’
এর পাশাপাশি তৃণমূল সুপ্রিমো তথা রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কেও বেনজির আক্রমণ করতে দেখা যায় বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতিকে। বাংলায় এসে বাংলা ভাষাতেই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায়ের বিরুদ্ধে আক্রমণ শানান নাড্ডা। ভাঙা ভাঙা বাংলা উচ্চারণে বলেন, ‘ও দিদি আপনার নাম তো মমতা, আপনি কবে থেকে নির্মমতা হয়ে গেলেন?’ এখানেই শেষ নয়, এরপরেই, এ রাজ্যে নারী নির্যাতনের ঘটনার একের পর এক পরিসংখ্যান তুলে ধরেন তিনি। নাড্ডার দাবি, অ্যাসিড হামলার ঘটনার প্রেক্ষিতে দেশের মধ্যে প্রথম স্থানে রয়েছে পশ্চিমবঙ্গ। নারী নির্যাতনের ঘটনায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাংলা চতুর্থ বলে উল্লেখ করেন তিনি। প্রশ্ন তোলেন, যে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মহিলা, সেখানে নারীরা এমন অসুরক্ষিত কেন তা নিয়েও। তোলেন কার্টুন প্রসঙ্গও। বলেন, ‘কার্টুন পছন্দ হল না বলে একজনকে জেলে পাঠিয়ে দিলেন?’ এরই রেশ ধরে এদিনের সভা থেকে তৃণমূলকে আক্রমণ করে বাংলায় বিশেষ স্লোগানও তুলতে শোনা যায় নাড্ডাকে। বলেন, ‘শেষ হবে, শেষ হবে, হিংসার খেলা শেষ হবে/ শেষ হবে, শেষ হবে কাটমানির খেলা শেষ হবে/ শেষ হবে, শেষ হবে সিন্ডিকেটের খেলা শেষ হবে/ শেষ হবে, শেষ হবে টিএমসি-র খেলা শেষ হবে।’
এদিকে নাড্ডার মন্তব্য নিয়ে তৃণমূল মুখপাত্র কুণাল ঘোষের অবশ্য মন্তব্য, ‘নিজের রাজ্য হিমাচল প্রদেশে জিততে পারেন না। নিজের সরকার ধরে রাখতে পারে না৷ জ্ঞান দিচ্ছেন তারপর আবার। আইন শৃঙ্খলা নিয়ে কথা বলে সস্তার রাজনীতি করছেন৷ পঞ্চায়েতে প্রার্থী পাবে না বলে সন্ত্রাসের গল্প শোনাচ্ছে।’