কোহলির বিদেশে ফিটনেস টেস্টে বিতর্ক, ছেত্রীর মন্তব্যে মিললো প্রলেপ

সম্প্রতি ভারতীয় ক্রিকেটে ফিটনেস টেস্ট নিয়ে শুরু হয়েছে তুমুল বিতর্ক। ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের নিয়ম অনুযায়ী, দেশের সব ক্রিকেটারকেই বেঙ্গালুরুর ন্যাশনাল ক্রিকেট অ্যাকাডেমিতে ফিটনেস টেস্ট দিতে হয়। সেই অনুযায়ী রোহিত শর্মা, শুভমান গিল, জশপ্রীত বুমরাহ-সহ প্রায় সব তারকাই সেন্টার অফ এক্সেলেন্সে হাজির হয়ে পরীক্ষা দিয়েছেন। কিন্তু অনুপস্থিত ছিলেন একমাত্র বিরাট কোহলি। কারণ, তিনি এই মুহূর্তে পরিবারের সঙ্গে ইংল্যান্ডে রয়েছেন। সেখানে বসেই ফিটনেস পরীক্ষা দেন এবং তার রিপোর্ট বোর্ডে পাঠান। এখানেই শুরু হয় বিতর্ক—কোহলির জন্য কি আলাদা নিয়ম? প্রশ্ন ওঠে, যখন দেশের সব ক্রিকেটারকে বেঙ্গালুরুতে গিয়ে টেস্ট দিতে হচ্ছে, তখন কোহলি কেন বিদেশে বসে সেই সুবিধা পাবেন? একই পরিস্থিতি তো রোহিত শর্মারও ছিল। তিনি ব্যক্তিগত কারণে ব্যস্ত থাকলেও নিয়ম মেনে হাজির হয়েছেন অ্যাকাডেমিতে। তাহলে এক জনের জন্য আলাদা ব্যবস্থা কেন করা হলো? বোর্ডের তরফে দাবি করা হয়, কোহলি বিদেশে থাকার কারণে আগে থেকেই অনুমতি নিয়েছিলেন। কিন্তু এই যুক্তি অনেকের কাছে গ্রহণযোগ্য হয়নি। এর ফলে বোর্ডের সিদ্ধান্তের নিরপেক্ষতা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। এই উত্তপ্ত বিতর্কের মধ্যেই হঠাৎই এক ভিন্ন দিক এনে দেন ভারতীয় ফুটবলের কিংবদন্তি সুনীল ছেত্রী। এক সাক্ষাৎকারে তিনি জানান, কোহলি সম্প্রতি লন্ডনে কিছু ফিটনেস পরীক্ষা করিয়েছিলেন এবং তার ফলাফল নিজে হাতে তাঁকে পাঠিয়েছেন। ছেত্রীর মতে, এটা শুধু কোহলির সঙ্গে তাঁর বন্ধুত্বের প্রমাণ নয়, বরং একজন ক্রীড়াবিদের আত্মনিষ্ঠার দৃষ্টান্তও। তিনি বলেন, “সবাই কোহলি বা রোনাল্ডো হতে চায়। কিন্তু এই দু’জনের মধ্যে মিল হলো—ওরা ইতিমধ্যেই অনেক কিছু পেয়েও সন্তুষ্ট নয়। নতুন কিছু অর্জনের নেশাই ওদের এগিয়ে রাখে।” ছেত্রীর এই বক্তব্য শুধু বিতর্কের আঁচ কিছুটা কমায়নি, বরং কোহলির ফিটনেস নিয়ে জোরালো বার্তাও দিয়েছে। আসলে, বিরাট কোহলি দীর্ঘদিন ধরে ভারতের সবচেয়ে ফিট ক্রিকেটার হিসেবে পরিচিত। তাঁর জীবনযাপন, ডায়েট, ট্রেনিং রুটিন—সব কিছুই অনুপ্রেরণার জায়গা তৈরি করেছে নতুন প্রজন্মের খেলোয়াড়দের কাছে। রোনাল্ডোর সঙ্গে তাঁর তুলনা এখানেই প্রাসঙ্গিক, কারণ দু’জনের ক্ষেত্রেই দেখা যায় অদম্য শৃঙ্খলা এবং সাফল্যের ক্ষুধা। যদিও প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে—বোর্ড কি এক জনের জন্য বিশেষ ছাড় দিতে পারে? খেলোয়াড়দের মধ্যে সমান নিয়ম না থাকলে তা দলগত পরিবেশে প্রভাব ফেলতে বাধ্য। তবে এটা অস্বীকার করার উপায় নেই, কোহলি দেশের অন্যতম সেরা ফিটনেস আইকন। ছেত্রীর বক্তব্যে তা আরও স্পষ্ট হয়েছে। সব মিলিয়ে বলা যায়, এই বিতর্ক হয়তো এখনও পুরোপুরি মেটেনি, কিন্তু সুনীল ছেত্রীর মন্তব্য অন্তত একটা ইতিবাচক দিক সামনে এনেছে। তিনি যেন মনে করিয়ে দিলেন, কোহলির মতো খেলোয়াড়রা শুধু মাঠে নয়, মাঠের বাইরেও নিজেদের আলাদা করে রাখেন কঠোর শৃঙ্খলা আর আত্মনিষ্ঠার কারণে। আর সেটাই তাদের দীর্ঘস্থায়ী সাফল্যের মূল চাবিকাঠি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

11 + 8 =