যখন নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় উত্তাল গোটা রাজ্য এমনই এক প্রেক্ষিতে বাম নেতা সুজন চক্রবর্তীর বিরুদ্ধে বিস্ফোরক অভিযোগ তৃণমূলের। নিয়ম বহির্ভূতভাবে চাকরি পেয়েছেন সুজন চক্রবর্তীর স্ত্রী,বুধবার এই অভিযোগ তোলেন রাজ্যের মন্ত্রী পার্থ ভৌমিক। এই প্রসঙ্গে বৃহস্পতিবার কুণাল ঘোষও জানান, ‘সুজন চক্রবর্তীর স্ত্রী দীনবন্ধু অ্যান্ড্রুজ কলেজে চাকরি করতেন। চিরকুট মারফত এই চাকরি গ্রহণ করেছেন।’ এদিকে তৃণমূলের টুইটার অ্যাকাউন্ট থেকে একটি টুইট নজরে আসে, যেখানে সুজন চক্রবর্তীর স্ত্রী মিলি ভট্টাচার্যের নাম উল্লেখ রয়েছে। ২০২১ সালে তিনি ৫৫ হাজার টাকা বেতনে অবসর নিয়েছেন এবং এখনও বেতন পাচ্ছেন, সেই প্রসঙ্গ উল্লেখ রয়েছে। সঙ্গে একটি নথিও তুলে ধরা হয় যা ১৯৮৭ সালের।
এদিকে বৃহস্পতিবার তৃণমূল ভবনে সাংবাদিক বৈঠক করে তৃণমূল মুখপাত্র কুণাল ঘোষ জানান, ‘বাম আমলে চাকরির বেশ কিছু অভিযোগ সামনে এসেছে। আমরা অভিযোগ পেয়েছি, তা খতিয়ে দেখার জন্য শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসুর কাছে পাঠানো হয়েছে। নথি খতিয়ে অভিযোগের সত্যতা যাচাই করা হোক।’ এদিনের এই সাংবাদিক বৈঠকে একটি তালিকা দেখে একাধিক সিপিএম নেতা ও তাঁদের পরিবারের সদস্যদের নাম করে নিয়োগ দুর্নীতির অভিযোগ করতে দেখা যায় কুণাল ঘোষকে। সঙ্গে তিনি এ দাবিও করেন, প্রত্যেকেই বাম আমলে নিয়ম বহির্ভূতভাবে সরকারি চাকরি পেয়েছে। মূলত বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এই চাকরিগুলি হয়েছে বলেও দাবি করেন কুণাল।
এরই পাশাপাশি বুধবার নিয়ম বহির্ভূতভাবে সুজন চক্রবর্তীর স্ত্রীর বিরুদ্ধে চাকরি পাওয়ার যে অভিযোগ করেছিলেন সেচমন্ত্রী পার্থ ভৌমিক সেই প্রসঙ্গে এদিন কুণালও জানান, ‘সুজন চক্রবর্তীর স্ত্রী গড়িয়া দীনবন্ধু অ্যান্ড্রুজ কলেজে যে চাকরি করছিলেন, তা কোন যোগ্যতা ও কী পরীক্ষা দিয়ে পেয়েছেন সেই প্রসঙ্গ তুলেছেন পার্থ। আমাদের কাছে নথি এসেছে দীনবন্ধু কলেজের তৎকালীন অধ্যক্ষ তাঁর স্ত্রীকে চাকরি দিয়েছেন। চিরকুট মারফত সেই চাকরি গ্রহণও করা হয়েছে।” নিজের বক্তব্যের সপক্ষে এদিন নথিও দেখান কুণাল। সঙ্গে তিনি এও বলেন, কোনও ব্যক্তি আক্রমণ করার উদ্দেশ্য নেই, কিন্তু পরিস্থিতির জন্য এই কাজ করতে হচ্ছে।
এরই রেশ ধরে তৃণমূল মুখপাত্র এদিন এও বলেন, ‘কোন পরীক্ষা ও কোন পদ্ধতিতে তিনি চাকরি পেলেন সেটা নিয়ে সুজন চক্রবর্তী কিছু বলেননি। কোন পদ্ধতিতে চাকরি পেয়েছেন মিসেস চক্রবর্তী, সেটাই আমাদের প্রশ্ন। নিয়োগের নীতি নিয়ে আমাদের প্রশ্ন রয়েছে। আর এই সংক্রান্ত সব নথিই আমাদের কাছে অভিযোগ হিসেবে এসেছে। উনি যে কলেজে চাকরি করতেন, সেটা সরকার অনুমোদিত। তথ্য খতিয়ে দেখার জন্য সব নথি আমার শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসুকে পাঠিয়েছি। ইডি-সিবিআইকে বলব বাম আমলের নিয়োগ থেকে তদন্ত হোক। শিক্ষামন্ত্রীকেও আমরা অনুরোধ করেছি তদন্ত করার।’
এরপরই এই অভিযোগের বিরুদ্ধে মুখ খুললেন সুজন চক্রবর্তী। বলেন, ‘এটা রেকমেন্ডেশন লেটার নয়। আমার স্ত্রীর জয়েনিং লেটার। সে তো চাকরি করতই। আর চাকরির জন্য তো জয়েনিং লেটার প্রয়োজন। বরং ৮৭ সালের জয়েনিং লেটার তৃণমূল অবিক্রিতভাবে পেয়েছে এটাকে স্বচ্ছতা বলে। এখানে বলা হয় তিনি পেনশন পান। সে তো নিয়ম অনুসারে পাওয়ারই কথা।’ এরপরই সুজন জানতে চান, চাকরি নিয়ে কী অসঙ্গতি তা বলা হোক। একইসঙ্গে সুজনের সংযোজন, ‘একেবারে ছেলেমানুষি হয়ে যাচ্ছে।’ এরপরই স্ত্রীর পেনশন পাওয়া প্রসঙ্গে সুজন এও জানান, ‘আমি যতটুকু জানি ও ক্লাস থ্রি ক্লারিকাল পদে থাকাকালীন অবসর নিয়েছে।’ এরই পাশাপাশি বাম নেতার পরামর্শ তৃণমূলের নেতারা একটু হোমওয়ার্ক করুন। একইসঙ্গে তিনি এও বলেন, অন্তত ১৯৯০ সালের পর যে সমস্ত ব্যক্তিরা শিক্ষায় নিযুক্ত হয়েছে তাঁদের নাম, ঠিকানা দিয়ে শ্বেতপত্র প্রকাশিত করুক সরকার। সঙ্গে সুজন তৃণমূলকে তোপ দেগে এও বলেন, ‘এদিক ওদিক ঘুরে লাভ নেই। বোঝা গেল বড্ড লেগেছে। তাই ভুলভাল বিষয় প্রচার করছে।’