কয়লা কাণ্ডে বিরাট অঙ্কের টাকা গিয়েছে এক হেভিওয়েটের কাছে: শুভেন্দু

কলকাতা: কয়লা কাণ্ড নিয়ে ফের শাসকদলকে বিদ্ধ করতে দেখা গেল বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীকে। শুক্রবার তিনি স্পষ্টই দাবি করেন, কয়লা পাচার দুর্নীতির সঙ্গে এক প্রভাবশালী রাজনীতিকের যোগ রয়েছে। তবে এদিন তার এই বক্তব্য রাখতে গিয়ে কারও নাম উল্লেখ করেননি বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু।
শুক্রবার রাজ্য বিধানসভায় শুভেন্দু অধিকারী সাংবাদিকদের জানান, কয়লা পাচার কাণ্ড আদতে একটি চক্র। দুর্নীতির মোট অঙ্ক ২ হাজার ৪০০ কোটি টাকা। এই প্রসঙ্গে গুরুপদ মাঝির নাম যে চার্জশিটে রয়েছে তারও উল্লেখ করেন তিনি। এরই রেশ ধরে শুভেন্দু এও দাবি করেন, এই কয়ল পাচারের টাকার ১ হাজার কোটি টাকা রাজ্যের প্রভাবশালী এক রাজনীতিকের কাছে গিয়েছে। একইসঙ্গে গুরুপদ মাঝির বিরুদ্ধে সিবিআই চার্জশিটের উল্লেখ করে বলেন, কয়লা কেলেঙ্কারি মামলায় গত জুলাইয়ে প্রথম চার্জশিট দাখিল করে সিবিআই। সেখানে ৪১ জন অভিযুক্তের নাম উল্লেখ করা হয়। সেই তালিকায় বেশ কয়েকটি সংস্থার বনাম ছাড়াও অনুপ মাঝি, বিনয় মিশ্র আর ইস্টার্ন কোলফিল্ড লিমিটেডের আট প্রাক্তন আধিকারিকের নাম উল্লেখ করা হয়েছিল। এরই রেশ ধরে রাজ্যের বিরোধী দলনেতা এদিন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের নাম না উল্লেখ করে বলেন, ২৪০০ কোটির মধ্যে ১০০০ কোটি পৌঁছে দেওয়া হয়েছিল এক প্রভাবশালীর কাছে, যিনি রাজ্যের প্রশাসন, পুলিশ ও শাসকদল চালান। এই প্রসঙ্গে শুভেন্দু এও বলেন, এই মামলার শুনানি রয়েছে ১২ ডিসেম্বর। সেই কারণে তিনি এর থেকে বেশি কিছু বলছেন না। তবে শুভেন্দু অধিকারী এদিন এও অভিযোগ করেন, চার্জশিটে রয়েছে ২০১৪-১৫ আর্থিক বছর নিয়ে পরপর তিন বছর সুভাষ আগরওয়ালের কোম্পানির মাধ্যমে টাকা গিয়েছে লিপস অ্যান্ড বাউন্ডস কোম্পানিতে। প্রসঙ্গত, এই কোম্পানি দুই ডিরেক্টর বলেন লতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং অমিত বন্দ্যোপাধ্যায়। যা কাজ শুরু করে ২০১২-র ১৯ এপ্রিল। সূত্রে খবর, এই সংস্থার সর্বময় কর্তা হলেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। শুভেন্দু অধিকারী এদিন চার্জশিটের তিনটি পাতার উল্লেখও করে বলেন, ৪৪৪ নম্বর পাতায় প্রতীক দেওয়ানের ভূমিকা, ৪৪০ পাতায় এইচআর ইনফ্রাকন এবং ৬৮ নম্বর পাতায় অনুপ মাঝির বয়ান রয়েছে। এদিকে এই হেভিওয়েটের নাম না নিলেও রাজ্যের বিরোধী দলনেতা যে ঠারেঠোরে তৃণমূলের সেকেন্ড-ইন-কমান্ড অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথাই বললেন তা বুঝতে কারও অসুবিধা হওয়ার কথা নয়।
এদিকে এদিন এর পাশাপাশি শুভেন্দু এও জানান, রাজ্যভাগ কোনও সমস্যার সমাধান নয়। রাজ্য সভাপতির যা অবস্থান আমারও তাই। বরং বাংলা ভাগের এই ইস্যুকে সামনে এনে রাজ্যের শাসক দলকে বিদ্ধ করে শুভেন্দু জানান, পশ্চিমবঙ্গের রাঢ়বঙ্গ, উত্তরবঙ্গ, সুন্দরবন গ্রামীণ এলাকার মানুষেরা বঞ্চিত। রাঢ়বঙ্গের বিধায়ক যা বলেছেন, তাঁরা বঞ্চনা থেকে বলেছেন। কালীঘাটের নালার পাশে যে একটা পরিবার রাজ্যকে শোষণ করছে তার থেকে মুক্ত করতে হবে বাংলাকে। ভবানীপুর কোম্পানির হাত থেকে রাজ্যকে বাঁচাতে হবে। এরই পাশাপশি বিধানসভার শীতকালীন অধিবেশনে প্রশ্নোত্তর পর্বে আলোচনা করতে না দিলে বিরোধী দল হিসেবে নিয়ম মেনে প্রতিবাদের হুঁশিয়ারিও দেন নন্দীগ্রামের বিজেপি বিধায়ক। এদিন শুভেন্দুর আক্রমণের নিশানায় ছিলেন জেলবন্দি অনুব্রত মণ্ডল এবং পার্থ চট্টোপাধ্যায়ও। রাজ্যের বিরোধী দলনেতার এদিন প্রশ্ন ছুঁড়ে দিয়ে জানতে চান, ডিয়ার লটারি থেকে অনুব্রত পরিবার কোটি কোটি টাকার লটারি জিতছেন। অনুব্রত, মানিকের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নিয়েছেন?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

one × 4 =