এগরায় নিহতের পরিবারের সদস্যদের পাশে মমতা, ইনটেলিজেন্স কাজ না করায় এই ঘটনা স্বীকারোক্তি মুখ্যমন্ত্রীর

এগরা বিস্ফোরণ কাণ্ডে এগরাবাসীর কাছে ক্ষমা চাইলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মঞ্চে দাঁড়িয়েই মাথা নত করে এই ঘটনায় ক্ষমা চাইতে দেখা যায় তাঁকে। পাশাপাশি শনিবার এগরার মঞ্চ থেকে মুখ্যমন্ত্রী এও জানান, ‘এগরার ঘটনায় আমাদের চোখ খুলে দিয়েছে। এই ঘটনায় আমরা খুবই দুঃখিত। মাথা নত করে আপনাদের কাছে ক্ষমা চাইছি।’ পাশাপাশি এও জানান, ‘পুলিশের ইনটেলিজেন্স কাজ করেনি।পুলিশের ইন্টেলিজেন্স যদি সঠিক সময় কাজ করত, তাহলে এই ঘটনা ঘটত না। এই ধরনের ঘটনা যাতে না ঘটে সেদিকে নজর রাখতে হবে। এখান থেকে বাজি বানিয়ে ওড়িশাতে পাঠানো হয়, ঝাড়খণ্ড থেকে অস্ত্র আসে। আমি সব জানি। সেই কারণে রাজ্য সীমান্তে নজর রাখতে হবে।’
প্রসঙ্গত, এগরার বিস্ফোরণ কাণ্ডের ১২ দিনের মাথায় শনিবার খাদিকুলে যান মমতা। সেখানে নিহতদের পরিবারকে আড়াই লক্ষ টাকা করে আর্থিক সহযোগিতা ও পরিবারের একজনকে হোমগার্ডের চাকরি দেন। এই প্রসঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী এদিন খাদিকুলবাসীকে এও জানান, আগেই আসার চেষ্টা করেছিলেন। তবে প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে তা সম্ভব হয়নি। একইসঙ্গে বলেন, শনিবার কলকাতা থেকে রওনা হওয়ার সময়ও বৃষ্টি হচ্ছিল। তবে সেই বাধা উপেক্ষা করেই এসেছেন। একইসঙ্গে এগরার বিস্ফোরণে মৃতদের পরিবারের সঙ্গে কথাও বলেন তিনি। পাশাপাশি মৃতদের পরিবার হাতে আড়াই লক্ষ টাকার চেক সহ একজনকে হোমগার্ডে চাকরির নিয়োগপত্র তুলে দিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রবিবাবর থেকেই কাজে যোগ দেওয়ার কথাও ঘোষণা করেন। ক্ষতিপূরণ প্রদানের পর মমতা বলেন, ‘বাজি কারখানায় মৃতদের পরিবারকে দুর্বল না হওয়ার অনুরোধ করব। আমি জানি দুঃখ কখনও শেষ হয়ে যায় না। কিন্তু দুঃখের সঙ্গে লড়াই করতে হবে। এটা আপনার হাতেও ছিল না, আমার হাতেও ছিল না। যিনি বেআইনিভাবে বাজি তৈরি করেছেন, তার জীবনও চলে গিয়েছে। পরিবারের দু’জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাকেও গ্রেপ্তার করা হয়েছিল কিন্তু সে তখন মৃতপ্রায় অবস্থায় ছিল। কটকে গিয়ে আমাদের পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করে। কিন্তু দুর্ভাগ্যের কথা কিছু বলায় আগেই সে মারা যায়।’
এদিন সভামঞ্চ থেকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এগরাবাসীকে বার্তা দেন, ‘রাজনীতি করতে এগরায় আসিনি। মানবিক কারণে সাহায্য করতে এসেছি। অবৈধ বাজি কারখানায় অনেক গরিব কাজ করেন। আমরা মুখ্যসচিবের নেতৃত্বে একটি কমিটি গড়েছি। সরকারি উদ্যোগে বেআইনি বাজি কারখানার ক্লাস্টার তৈরি করব। ফায়ার ক্র্যাকার না করে গ্রিন ক্র্যাকার তৈরির দিকে নজর রাখা হবে। তাতে চাকরিটাও বাঁচবে। এমন দুর্ঘটনা হবে না। শব্দবাজি কারখানা অবৈধ। লোভে পড়ে অনেকে এই বাজি তৈরি করতে যান। তাতে প্রাণহানি হয়।’ পাশাপাশি, ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলির ছোটোদের পড়াশোনা চালানোর অসুবিধা হলে সেটাও প্রশাসন দেখবে বলে আশ্বাস দেন মমতা। এরই পাশাপাশি বেআইনি বাজি কারখানা রুখতে সাধারাণ মানুষকেও এগিয়ে আসতে বলেন তিনি। এই প্রসঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী এও বলেন, ‘অবৈধ বাজি কারখানা দেখলেই ওসিকে রিপোর্ট করবেন। যদি ওসি কোনও ব্যবস্থা না নেন আমার উপর ছেড়ে দিন। কথা না শুনলে ওসিকে চেঞ্জ করে দেব।’
এদিকে খাদিকুলে গত ১৬ মে বেআইনি বাজি কারখানায় বিস্ফোরণে মৃত্যু হয় কারখানার মালিক ভানু বাগ-সহ মোট ১১ জনের। সিআইডি তদন্তে উঠে এসেছে, বিস্ফোরণের পর আহত ভানু পড়শি রাজ্য ওড়িশায় পালিয়ে গিয়ে সেখানকার একটি হাসপাতালে জাল আধার কার্ড দিয়ে ভর্তি হন। পরে সেখানেই তাঁর মৃত্যু হয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

5 + two =