আসানসোলে শুক্রবার সন্ধ্যায় ব্যবসায়ী অরবিন্দ ভগতের খুনের পর থেকে অধরা দুই বন্দুকবাজ। প্রাথমিক তদন্তে খুনের কোনও সূত্র পায়নি পুলিশ। এবার এই দুই বন্দুকবাজের ছবি আঁকানোর জন্য এক শিল্পীকে হোটেলে ডেকে পাঠালেন সিআইডি আধিকারিকেরা। সূত্রে খবর, ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শীদের বিবরণ মতো তিনি ছবি আঁকবেন। যদিও, দুই বন্দুকবাজের এক জনের মাথায় হেলমেট ও অন্য জনের মাথায় ছিল হনুমান টুপি। ফলে খুব স্পষ্টভাবে মুখ দেখতে পাওয়ার কথা নয় কারও পক্ষেই। এদিকে তদন্ত চলাকালীন আসানসোলের ডিসিপি(পশ্চিম) অভিষেক মোদি তদন্তকারী অফিসারদের সঙ্গে কথা বলেছেন বলেও খবর। তবে কী নিয়ে কথা হয়েছে সে ব্যাপরে তদন্তের স্বার্থে মুখ খুলতে নারাজ তদন্তকারী আধিকারিক থেকে ডিসিপিও এদিকে শনিবারই বেলা একটার পরে আসানসোল জেলা হাসপাতালে নিহত হোটেল মালিক অরবিন্দ ভগতের ময়না-তদন্ত শুরু হয়। তবে প্রথমে তাঁর শরীর থেকে কোনও গুলি না মেলায় দেহ এক্স-রে করে ফের আর একদফা ময়না-তদন্ত হয়। শেষ পর্যন্ত পেট ও মুখ থেকে পাওয়া যায় পিস্তলের দু’টি গুলি। এদিকে হোটেল থেকেই সিআইডি-র তদন্তকারীরা পান একটি গুলির খোল।
প্রাথমিক তদন্তে পুলিশ নিশ্চিত, খুনের ঘটনায় জড়িত পেশাদার খুনিরাই। প্রত্যক্ষদর্শীদের বিবরণে পুলিশ জানতে পেরেছে, প্রথম দু’টি গুলি চালানোর পর দুষ্কৃতীরা হোটেল মালিকের নাকের কাছে হাত নিয়ে নিঃশ্বাস-প্রশ্বাসের গতি বোঝার চেষ্টা করে। কিছু পরে তারা ফের গুলি চালিয়ে বেরিয়ে যায়। কিন্তু ওই পেশাদার খুনিদের সঙ্গে কে বা কারা যোগাযোগ করেছে, কেন যোগাযোগ করেছে তা জানার চেষ্টা চলছে।
খুনের সম্ভাব্য কারণ হিসেবে উঠে এসেছে জমি সংক্রান্ত কারবার, প্রোমোটিং ও সুদের ব্যবসা। এই কারবারগুলির সঙ্গে নিহত অরবিন্দ জড়িত ছিলেন বলে স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে। এরই কোনও ব্যবসায় আক্রোশ থেকে খুনের ঘটনা ঘটতে পারে বলে অনুমান। খুনের ঠিক আগে জমি সংক্রান্ত বিষয়ে দুই ব্যক্তির সঙ্গে অরবিন্দ কথা বলছিলেন বলে জেরায় জানতে পেরেছে পুলিশ। একইসঙ্গে এ খবরও মিলছে কয়েক বছর আগে প্রথম স্ত্রীর মৃত্যুর পর জুলি ভগত নামে এক মহিলাকে বিয়ে করেছিলেন অরবিন্দ। স্ত্রীকে নিয়ে তিনি থাকতেন হোটেল সংলগ্ন আবাসনে। দুই পক্ষ মিলিয়ে তাঁর দুই ছেলে, দুই মেয়ে। ছোট মেয়ে আনু ও বড় ছেলে অভিষেক বাবার সঙ্গেই থাকতেন। বড় মেয়ে আস্তি ও ছোট ছেলে অনুভব থাকেন বেঙ্গালুরুতে। ঘটনার খবর পেয়ে শনিবার দুপুরেই তাঁরা আসানসোলে চলে আসেন।
প্রসঙ্গত, শুক্রবার সন্ধ্যায় দুই বন্দুকবাজ আচমকা ওই হোটেলে ঢুকে সোফায় বসে থাকা অরবিন্দকে খুব কাছ থেকে নাইনএমএম পিস্তল থেকে পর পর গুলি করে। গুলির শব্দে ছুটে আসেন হোটেলের নিরাপত্তারক্ষী কালীপদ বাউড়ি।তাঁর দিকেও বন্দুক তাক করে বন্দুকবাজরা। এরপর কাজ শেষ হলে হেঁটে হোটেল ছেড়ে বেরিয়ে যায় ওই দুই বন্দুকবাজ। স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, হোটেলে ঢোকার আগে রাস্তায় দাঁড়িয়ে ফুচকা খান। এরপর অরবিন্দকে গুলি করে দুই দুষ্কৃতী।সিসিটিভি ফুটেজে দেখা গিয়েছে, হোটেলের পাশের রাস্তা দিয়ে বেরিয়ে দুষ্কৃতীরা আপকার গার্ডেনের ভিতর দিয়ে যেতে থাকে। কিন্ত জিটি রোডের পর থেকে তাদের আর তাঁদের ট্র্যাক করা যায়নি। এদিকে এই ঘনটার পর শুক্রবার রাতেই হোটেলে এসেছিলেন আসানসোল-দুর্গাপুরের পুলিশ কমিশনার সুধীর কুমার নীলকান্তম।এদিকে এই ঘটনার তদন্তে কলকাতা থেকেও গিয়ে পৌঁছেছে রাজ্য গোয়েন্দা বিভাগের ৬ সদস্যের একটি দল।