কোভিড-১৯ আছড়ে পড়ার পরই ২০২০-র মার্চে আন্তর্জাতিক পর্যটকদের জন্য দরজা বন্ধ করে দিয়েছিল চিনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সরকার। তবে কোভিড-পূর্ব জমানায় চিনা নববর্ষ উদ্যাপন করতে প্রত্যেক বছরই ঢল নামত বিদেশি পর্যটকদের। এর পোশাকি নাম ‘গ্রেট মাইগ্রেশন’। চিনের জ়িরো-কোভিড নীতির জেরে গত তিন বছর এই নববর্ষ উদযাপনে অংশ নিতে পারেননি বিদেশি পর্যটকেরা। এদিকে কার্যত ঘরবন্দি হয়ে থাকতে হয় চিনের বাসিন্দাদেরও। এদিকে একেবারে দুয়ারে ‘স্প্রিং ফেস্টিভ্যাল’। আর এবারে সম্পূর্ণ ভিন্ন এক ছবি ধরা পড়ছে চিনে। কারণ, কোভিড-নীতিতে অতিষ্ঠ নাগরিকদের বিক্ষোভের মুখে পড়ে গত কয়েক মাস ধরেই দেশের অভ্যন্তরে ধাপে-ধাপে নিষেধাজ্ঞা তুলতে শুরু করেছিল চিন।এবার অবাধ করে দেওয়া হল সীমান্তও। চিনা নাগরিকরাও চাইলে এবার যে কোনও দেশে যেতে পারেন।অন্তত বেজিংয়ের তরফে আর কোনও বাধা থাকছে না, এমনটাই সূত্রে খবর। ইতিমধ্যেই মেনল্যান্ড চিনের অধিবাসীদের জন্য পাসপোর্ট, ট্যুরিস্ট এবং সাধারণ ভিসা ইস্যু করতে শুরু করেছে বেজিং।
শুধু তাই নয়, সূত্রে এ খবরও মিলছে, বিদেশিদের জন্য এ বার রেসিডেন্স পারমিটও দিচ্ছে চিন।তবে কোভিড এখনও বিদায় নেয়নি। এই ইস্যুকে পাত্তা না দিয়ে বেজিংয়ের তরফ থেকে জানানো হয়েছে, আগামী ৪০ দিনে দেশি-বিদেশি মিলিয়ে অন্তত ২০০ কোটি মানুষ যাতায়াত করবেন চিনে। অনেকেরই ধারনা, চিনের এবারের এই জনসমাগম ২০১৯-এর পরিসংখ্যানকেও ছাপিয়ে যাবে।
ক্যালেন্ডার অনুযায়ী, ২২ জানুয়ারি চিনা নববর্ষ। সরকারি ছুটি এক সপ্তাহের। কিন্তু এর আগে পরে অন্তত ৪০ দিন ধরে চলবে ‘গ্রেট মাইগ্রেশন’। চিন সীমান্ত খুলে দেওয়ায় শনিবার থেকেই যার সূচনা হয়ে গিয়েছে বলে দাবি একাধিক সংবাদমাধ্যমের।শুধু আরটি-পিসিআর রিপোর্ট নেগেটিভ হলেই বিশ্বের যে কোনও প্রান্ত থেকে বেজিংয়ের বিমান ধরা যাবে বলে জানিয়ে দিয়েছে চিনা প্রশাসন। আর কোয়ারান্টাইনের ঝামেলা নেই। স্প্রিং-ফেস্টিভ্যালের সূচনায় ৮ জানুয়ারি থেকে আন্তর্জাতিক উড়ানে মোটামুটি সব নিষেধাজ্ঞাই তুলে নিয়েছে চিনের সরকার। সাধারণ মানুষের যাতায়াত সুগম করতে খুলে দেওয়া হয়েছে হংকংয়ের জন্য সীমান্তও।চিনের একাধিক সংবাদ মাধ্যম সূত্রে খবর, এ দিন সকালেই চিনের গুয়াংদং প্রদেশের গুয়াংঝাউ ও শেনঝেন বিমানবন্দরে দু’টি আন্তর্জাতিক বিমান এসে পৌঁছেছে। তাতে বিমানবন্দর আধিকারিকদের দাবি, রবিবার টরন্টো এবং সিঙ্গাপুর থেকে ৩৮৭ জন যাত্রী এসেছেন চিনে। বিমানের পাশাপাশি সমুদ্রপথেও চিনে ঢোকার যাবতীয় নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া হয়েছে।
এদিকে ক’দিন আগেও চিন থেকে খবর আসছিল, অভ্যন্তরীণ কোভিড-নিষেধাজ্ঞা তোলার পরেই ভিড় উপচে পড়ছে হাসপাতালে-হাসপাতালে। সাধারণ জ্বরের ওষুধও পাওয়া যাচ্ছে না ওষুধের দোকানে।এরপর হঠাৎ-ই দৈনিক সংক্রমণের খবর দেওয়া বন্ধ করে দেয় বেজিং। এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করতে দেখা যায় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ‘হু’-কেও। কোভিড সংক্রমণ নিয়ে চিন যে সঠিক তথ্য দিচ্ছে না তা নিয়ে সরব হয় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাও।আর এমনই এক পরিস্থিতিতে শুরু হয়ে গেল ‘গ্রেট মাইগ্রেশন’! বিশেষজ্ঞদের একাংশের দাবি, কোভিড ধাক্কায় বেসামাল অর্থনীতিকে চাঙ্গা করতে মরিয়া হয়েই এই পদক্ষেপ করল চিন।তবে সমীকরণ আদৌ ততখানি সরল নয়। একাধিক সূত্রের দাবি, দেশি-বিদেশি পর্যটকদের জন্য নিষেধাজ্ঞা তোলার দিনই চিনা সোশ্যাল মিডিয়ায় হাজারেরও বেশি অ্যাকাউন্ট বন্ধ করে দিয়েছে বেজিং। কারণ, এরা প্রত্যেকেই চিনের বর্তমান কোভিড-নীতি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন। সূত্রে এ খবরও মিলছে, গত কয়েক মাস ধরে যাঁরাই চিনের জ়িরো কোভিড-নীতির বিরুদ্ধে সুর চড়িয়েছিলেন, তাঁদের প্রত্যেককেই ট্র্যাক করা শুরু করে দিয়েছে জিনপিংয়ের প্রশাসন।