মেয়র ফিরহাদকে পার্কিং- ফি বৃদ্ধির নির্দেশ প্রত্যাহারের নির্দেশ মুখ্যমন্ত্রীর

কয়েকদিন আগেই শহরে পার্কিং-ফি বৃদ্ধি করার ঘোষণা করেছেন কলকাতা পুরসভার মেয়র ফিরহাদ হাকিম। আর এই পার্কিং-ফি বৃদ্ধি প্রত্যাহার করার নির্দেশ খোদ মেয়রকে জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী এমনটাই দাবি তৃণমূল মুখপাত্র কুণাল ঘোষের। আর এতেই তৃণমূল মুখপাত্রের ওপর ক্ষুব্ধ মেয়র ফিরহাদ হাকিম। স্পষ্ট জানান, ‘এমন কোনও নির্দেশিকা মুখ্যমন্ত্রীর তরফ থেকে আসেনি। এলে নিশ্চয়ই প্রত্যাহার করবো।‘
প্রসঙ্গত, গত ১ এপ্রিল থেকে যে পার্কিং-ফি বৃদ্ধির কথা ঘোষণা করেন মেয়র ফিরহাদ তাতে এটাও নজরে আসছে যে, কোনও কোনও ক্ষেত্রে সেটা বেড়ে প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে। আর এই প্রসঙ্গেই তৃণমূল মুখপাত্র কুণাল ঘোষের দাবি, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে কথা না বলেই এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছেন মেয়র ফিরহাদ হাকিম। পাশাপাশি কুণাল এও জানান, এই খরচ বাড়ার বিষয়টি মুখ্যমন্ত্রীর নজরে আসে তৃণমূলের সর্বভারতীয় সভাপতি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সূত্রেই। এরপরই এই ঘটনায় তৎপর হন মুখ্যমন্ত্রী। একইসঙ্গে কুণাল এও জানান, এই খরচ বৃদ্ধি মুখ্যমন্ত্রী তথা সরকারের নীতির বিরোধী। এই প্রসঙ্গে কুণাল শুক্রবার সাংবাদিক বৈঠক থেকে এও দাবি করেন, ‘এই সরকারের নীতি হল, সাধারণ মানুষের ওপর চাপ তৈরি না করা। ২০১১ থেকে এমন কোনও কাজ মুখ্যমন্ত্রী করেননি, যাতে চাপ তৈরি হয়। আর সেই কারণেই এই পার্কিং ফি বাড়ানোর বিষয়টি মুখ্যমন্ত্রীর অনুমতি বা অনুমোদন হয়নি। একইসঙ্গে কুণালের সংযোজন, ‘মুখ্যমন্ত্রী জানতেন না যে, মানুষের ওপর চাপ পড়তে পারে, এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে। যে স্তরেই সিদ্ধান্তটা নেওয়া হোক, সেটা সরকার বা দল অনুমোদন করে না। আর মুখ্যমন্ত্রী মেয়র ফিরহাদ হাকিমকে এও জানিয়ে দিয়েছেন, যে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল, তা প্রত্যাহার করতে হবে। আর তা নিতে হবে শুক্রবারের মধ্যেই।’
প্রসঙ্গত, গত ১ এপ্রিল পার্কিং-এর খরচ বাড়ানোর কথা ঘোষণা করেন কলকাতা পুরসভার মেয়র ফিরহাদ হাকিম। চার চাকার গাড়ির ক্ষেত্রে যেখানে প্রতি ঘণ্টায় দিতে হত ১০ টাকা, ১ এপ্রিল থেকে সেটা বেড়ে হয়েছে ২০ টাকা। এভাবেই অন্যান্য গাড়ির ক্ষেত্রেও পার্কিং ফি বৃদ্ধি হয়েছে। এরপরই শুক্রবার এই ইস্যুতে সাংবাদিক বৈঠক করেন তৃণমূল মুখপাত্র কুণাল ঘোষ।
তবে শুক্রবার কুণাল ঘোষের বক্তব্যের পর একটা প্রশ্ন ঘোরাফেরা করছে বঙ্গের রাজনৈতিক মহলে। তা হল, তবে কি মমতাকে না জানিয়েই সিদ্ধান্ত নিয়ে নিয়েছিলেন ফিরহাদ? শুধু তাই নয়, এ বিষয়ে অভিষেক বন্দ্য়োপাধ্যায়ের ভূমিকাও তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করছেন অনেকেই। কারণ, পার্কিং-ফি হঠাৎ-ই অনেকটা বৃদ্ধি করে আমজনতার ওপর চাপ সৃষ্টি করার সিদ্ধান্তও নিশ্চয়ই ভালো চোখে দেখেননি তৃণমূলের সেকেন্ড-ইন-কমান্ডও।
এদিকে কুণাল ঘোষের এমন দাবিতে রীতিমতো ক্ষোভ প্রকাশ করতে দেখা যায় কলকাতা পুরসভার মেয়র ফিরহাদ হাকিমকে। তিনি স্পষ্ট জানান, সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের এমন কোনও নির্দেশ আসেনি। শুধু তাই নয়, এমন একটি প্রশাসনিক বিষয় কেন এভাবে সামনে আনা হল, তা নিয়ে দলের মুখপাত্র কুণাল ঘোষের বিরুদ্ধে সরাসরি ক্ষোভ প্রকাশ করেন তিনি। বলেন, ‘আমি বিষয়টিতে যথেষ্ট ক্ষুব্ধ। আমাকে মুখ্যমন্ত্রী ব্যক্তিগতভাবে কোনও বিজ্ঞপ্তি প্রত্যাহারের জন্য নির্দেশ দেননি। তাহলে আমি কেন প্রত্যাহার করব? এটা আমার সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রীর ব্যাপার। অন্য কেউ কেন সাংবাদিকদের সামনে বিষয়টিকে নিয়ে আসবেন? এটা আমাদের প্রশাসনের ব্যাপার প্রশাসনিক ভাবে বুঝে নেব।’ অর্থাৎ, মেয়রের তরফ থেকে স্পষ্ট বার্তা, তাঁর ও মুখ্যমন্ত্রীর ব্যাপারে ‘অন্য কার’ও কথা বলা পছন্দ করেননি তিনি। সঙ্গে এও জানান, ‘মুখ্যমন্ত্রী বললে নিশ্চয়ই সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করব।’
এদিকে আবার শুক্রবার সন্ধ্যা ৬ টা ৫ মিনিটে টুইট করা হয় তৃণমূলের তরফ থেকে। তাতে যা বলা হয়েছে তার বাংলা তর্জমা করলে হয়, ‘পার্কিং ফি বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের জন্য আমরা পুরনিগমকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি।’ এদিকে পার্কিং-ফি নিয়ে সিদ্ধান্ত আদৌ প্রত্যাহার করা হয়েছে কি না, সে ব্যাপারে পুরনিগমের তরফে কিছুই জানানো হয়নি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

3 + seven =