‘পুরনো জিনিস বা হেরিটেজ রক্ষা করা একটা গুরুত্বপূর্ণ কাজ। ইট, কাঠ, লোহা দিয়ে ২০ তলা একটা বহুতল তো বানানো যেতেই পারে। কিন্তু তাতে লাভ কী?’ ঠিক এই ভাষাতেই ট্রাম নিয়ে বুধবার উদ্বেগ প্রকাশ করতে দেখা গেল কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি টিএস শিবজ্ঞানমকে। একইসঙ্গে যেভাবে একের পর এক ট্রামডিপো বন্ধ হয়ে গিয়েছে, তা অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক বলেও মন্তব্য করেন কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি। এরই পাশাপাশি অবিলম্বে কলকাতার ঐতিহ্য ট্রামকে ‘হেরিটেজ’ হিসেবে রক্ষা নির্দেশও দেন তিনি। একইসঙ্গে ট্রামওয়েজের যে সব জমি বা সম্পত্তি বিক্রি করার ক্ষেত্রেও বুধবার স্থগিতাদেশ দেয় হাইকোর্ট। আদালত সূত্রে খবর, এক আরটিআই-এর ভিত্তিতে ট্রাম নিয়ে মামলা করেছিলেন সুলগ্না মুখোপাধ্যায়। বুধবার সেই মামলার শুনানি ছিল হাইকোর্টে। আরটিআই করে সুলগ্নাদেবী জানতে পারেন, ট্রামওয়েজের জমি বিক্রি হয়ে যাচ্ছে। একইসঙ্গে এ তথ্যও তাঁর সামনে আসে যে ট্রাম রুটের দৈর্ঘ্য ১১৬ কিলোমিটার থেকে কমে বর্তমানে ৩৩ কিলোমিটারে এসে দাঁড়িয়েছে। আরটিআই করে পাওয়া এই তথ্য়ের ভিত্তিতেই মামলা করেন। এরপরই প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চের নির্দেশ, আদালত পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত জমি বা সম্পত্তি বিক্রি করা যাবে না। পাশাপাশি প্রধান বিচারপতি খুব স্পষ্ট ভাবে এও জানান, সরকারি কাজ বা সাধারণ মানুষের কোনও কাজে লাগবে না, এটা নিশ্চিত হওয়ার পরই সরকারি জমি বিক্রি করা উচিত। একইসঙ্গে ট্রাম রক্ষায় রাজ্যকে নতুন কমিটি গড়ারও এদিন নির্দেশ দেয় আদালত। আদালতের নির্দেশ অনুসারে এই কমিটিতে থাকবেন সরকারি আধিকারিক, বিশেষজ্ঞ ও মামলাকারীর প্রতিনিধিরা।
‘দুর্গাপুজো’র সঙ্গে যেমন কলকাতা জড়িয়ে ঠিক তেমনই ট্রামও যে কলকাতা বা বঙ্গ জীবনের সঙ্গে জড়িয়ে এদিন তাও জানান প্রধান বিচারপতি শিবজ্ঞানম। এরই রেশ টেনে তিনি বলেন, ‘হেরিটেজ রক্ষার দায়িত্ব সরকারের। দুর্গাপুজো ইউনেস্কোর তরফ থেকে হেরিটেজ তকমা পাওয়ায় রাজ্যের মানুষ যেমন গর্বিত, ট্রাম মসৃণভাবে, আধুনিকতার সঙ্গে চললেও মানুষ গর্ববোধ করবেন।’ এদিনের শুনানিতে প্রধান বিচারপতি এ প্রশ্নও তোলেন, ট্রামওয়েজের জমি যখন বেসরকারি সংস্থার কাছে বিক্রি করা হয়েছিল, তখন কেউ কেন প্রতিবাদ করেননি তা নিয়েও।
এদিকে আদালত সূত্রে খবর, মামলাকারী জানিয়েছেন, আগে ট্রাম প্রায় ১১৬ কিমি পথ চলত, এখন সেটা কমে হয়েছে প্রায় ৩৩ কিমি। আগে ২০ টি রুটে ট্রাম চলত, এখন কার্যকর রয়েছে মাত্র ৩ টি রুট। শহরে অবস্থিত ৬টি ট্রাম ডিপোর মধ্যে মাত্র ২টি চালু আছে বলেও জানান তিনি। একইসঙ্গে মামলাকারীর তরফ থেকে এদিন আদালতে এও জানানো হয়, বেলগাছিয়া ও টালিগঞ্জের ট্রামডিপো বেসরকারি সংস্থার কাছে বিক্রি করা হয়েছে, সেখানে নির্মাণকাজও শুরু হয়েছে গিয়েছে। সব শুনে ‘দুর্ভাগ্যজনক’ বলে মন্তব্য করেন প্রধান বিচারপতি।
আর এখানেই প্রধান বিচারপতির পরামর্শ, বর্তমানে ৮ টি বাতানুকুল ট্রাম চালু আছে, যা বাড়িয়ে ২০টি করা যেতে পারে। বাড়ানো যেতে পারে ভাড়াও। ট্রামে বিশেষ পরিষেবা চালু করা যেতে পারে বলেও উল্লেখ করেন তিনি। তাঁর বক্তব্য, ‘ট্রাম পর্যটকদের কাছে আকর্ষণের। এসব পদক্ষেপ করলে আরও পর্যটক আসবে।’