আলোক শিল্পীদের হাতের ছোঁয়ায় অপূর্ব দৃশ্য দেখা যাচ্ছে হুগলির চন্দননগরে

মহেশ্বর চক্রবর্তী

ভারতবাসী তথা রাজ্যবাসীর কাছে জগদ্বাত্রী পুজো মানে হুগলির চন্দননগরের জগদ্বাত্রী পুজো। পুজোর চারটে দিন সকাল থেকেই অসংখ্য দর্শনার্থীদের ভিড় লক্ষ্য করা যায়। এই বছরও তার ব্যতিক্রম হয়নি। আলোর মালায় গোটা চন্দনগর সেজে উঠেছে। প্রাচীন কাল থেকেই আলোর সজ্জার জন্য বিখ্যাত এই প্রাচীন ফরাসিদের দ্বারা প্রতিষ্ঠিত শহরের প্রতিটি পুজো মণ্ডপে চোখ ধাঁধানো আলোর কায়দা দেখা যাচ্ছে। চন্দননগরের কেন্দ্রীয় পুজো কমিটির অধীনে প্রায় ১৭১ টি পুজো অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এর বাইরেরও বহু পুজো হয়। সারি সারি মণ্ডপের নানান থিম আর আলোর কায়দা মন ভরিয়ে তোলে দর্শনার্থীদের। চন্দননগরের যেকোনও মণ্ডপে প্রবেশ করলেই মনে হবে দেবলোকে প্রবেশ করছেন। পাশাপাশি সামাজিক দায়বদ্ধতা থেকেও পরিবেশ বান্ধব এবং মানবিক দিকের প্রতি লক্ষ্য রেখেও বহু মণ্ডপের থিম ও আলোর মালা দেখা যায়। আর এই অপূর্ব দৃশ্য দেখতে সারা ভারতবর্ষ থেকে মানুষ জগদ্বাত্রী পুজোয় চন্দননগরে আসেন। এইখানে সবচেয়ে প্রাচীন ও ঐতিহ্যময়ী জগদ্বাত্রী পুজো হল আদি মায়ের পুজো। কিভাবে এখানে পুজোর প্রচলন হয়েছিল তা নিয়ে বহু ঐতিহাসিক ঘটনা রয়েছে। তৎকালীন ফরাসি উপনিবেশের সময়ে নাকি কৃষ্ণনগরের রাজা কৃষ্ণ চন্দ্র রায়ের দেওয়ান ইন্দ্র নারায়ণ চৌধুরী স্বপ্নাদেশ পেয়ে চন্দননগরে আদি মায়ের প্রতিষ্ঠা করেন। চন্দননগর চাউলপট্টি সার্বজনীন শ্রী শ্রী জগদ্ধাত্রী পুজা কমিটি দ্বারা পরিচালিত পুজোই আদি মা হিসাবে পরিচিত। সমগ্র বিশ্বের জগদ্ধাত্রী প্রতিমার হাতি মায়ের ডান দিকে প্রতিষ্ঠিত হলেও এখানে মায়ের হাতি বাঁদিকে প্রতিষ্ঠিত। কথিত আছে, চাউলপট্টির পুজোতে প্রবেশ করতে পারত না চন্দননগর কাপড়পট্টির বাসিন্দারা। তাই একদা কাপড়পট্টিতে শুরু হয় জগদ্ধাত্রীর আরাধনা। আড়াইশো বছরেরও প্রাচীন এখানকার পুজো। চন্দননগর চাউলপট্টির বড় মায়ের পর প্রতিষ্ঠিত হয় বলে এখানকার মা, মেজো মা হিসাবে খ্যাত। ছোট মা বলতেই ভদ্রেশ্বরের তেঁতুলতলা সার্বজনীন। ছোট মা হিসাবে পরিচিত হলেও তেঁতুলতলার মানুষের কাছে এটাই মেজো মা। কারণ হিসাবে তাঁরা বলেন, কাপড়পট্টির পুজোর শুরু কতদিন আগে তা কেউ বলতে পারে না। তবে আমাদের এখানের পুজো দীর্ঘ প্রায় ২৩০ বছরের পুরনো। তাই আমরা মনে করি প্রায় কাপড়পট্টির আগেই আমাদের এই মায়ের প্রতিষ্ঠা। সেক্ষেত্রে এটাই মেজো মা। এই পুজোর মূল বৈশিষ্ট দশমীর দিন এখানে মহিলারা নয়, পুরুষরাই শাড়ি পরে মাকে বরণ করে। সবমিলিয়ে সাবেকিনার সঙ্গে থিমের বাহারে চন্দননগরে জগদ্বাত্রী পুজোর মণ্ডপগুলি সেজে উঠছে। সবমিলিয়ে আলোক শিল্পীদের হাতের ছোঁয়ায় অপূর্ব দৃশ্য দেখা যাচ্ছে হুগলির চন্দননগরে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

four × three =