চন্দন গ্রেপ্তারের পর সামনে নাম এল আরও এক এজেন্ট খালেক-এর

চন্দন মণ্ডল ওরফে রঞ্জনকে জেরা করতে আরও নানা তথ্য সামনে আসল সিবিআই আধিকারিকদের। সিবিআই সূত্রে খবর, স্কুল সার্ভিস কমিশনের উপদেষ্টা কমিশনের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ ছিল রঞ্জনের। তিন সদস্যকে হাতে লিখে চাকরির সুপারিশও করেছিলেন তিনি। উপদেষ্টা কমিটির সদস্যদের সঙ্গে কার মাধ্যমে এই যোগাযোগ তৈরি হয়েছিল জানতে লাগাতার এবার জেরা করা হচ্ছে রঞ্জনকে। সূত্রের খবর, এসএসসি-র গ্রুপ-সি পদে শতাধিক চাকরি প্রার্থীদের থেকে টাকা নিয়েছিলেন তিনি। এদিকে চন্দনকে জেরা করে উঠে আসছে খালেক নামে আরও এক ব্যক্তির নাম। এই খালেক চন্দন মণ্ডলের ঘনিষ্ঠ বলেই সূত্রে খবর। চন্দন-খালেকদের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ ছিল শান্তিপ্রসাদদের, এমনটাই সন্দেহ সিবিআইয়ের আধিকারিকদের। শুধু তাই নয়, হাই-পাওয়ার কমিটিকে হাতে রেখে চলত চাকরির রফা। ফলে এবার কুন্তল যোগে শুক্রবার ৬ জন মিডলম্যানকে গ্রেপ্তারের পরও আরও এক এজেন্টের খোঁজে এবার সিবিআই আধিকারিকেরা। শুধু তাই নয়, রঞ্জনের এই গ্রেপ্তারির পরই ফের সংবাদ শিরোনামে শিরোনামে ফের প্রসন্ন রায়ও। চাকরি প্রার্থীদের টাকা সরাসরি প্রসন্ন রায়ের অ্যাকাউন্টে ঢুকত বলে জানতে পেরেছেন তদন্তকারীরা। তাঁর হাতে যেত নগদ টাকাও। আর সেই কারণে প্রসন্নর পরিবারের সদস্যদের অ্যাকাউন্টও ইতিমধ্যেই ভেরিফাই করার কাজ শুরু করা হয়েছে বলেও জানানো হয় তদন্তকারী সংস্থার তরফ থেকে। কারণ, কেন্দ্রীয় সংস্থার আধিকারিকেরা প্রায় নিশ্চিত, এই সব অ্যাাকউন্টেও ঢুকেছে টাকা। একইসঙ্গে তাঁর সঙ্গে কোন কোন এজেন্টের সঙ্গে তাঁর যোগাযোগ ছিল তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

এদি্কে সিবিআইয়ের চন্দন মণ্ডলকে টানা জেরার পর এও জানা যাচ্ছে, এসপি সিনহার নেতৃত্বে যে উপদেষ্টা কমিটি ছিল সেই কমিটির তিন সদস্যের সঙ্গেই সরাসরি যোগাযোগ ছিল এই চন্দন মণ্ডলের। সে লিখিতভাবে কিছু নাম পাঠাতো উপদেষ্টা কমিটির কাছে। এরপর এই সুপারিশ হওয়া ব্যক্তিদের সুপারিশ করে দিত শান্তিপ্রসাদ সিনহার কমিটি। এরপরই এসএসসি-র তরফ থেকে দেওয়া হতো ‘রেকমেন্ডেশন লেটার’। আর এই রেকমেন্ড করা লেটারেই  ব্যবহার করা হত তৎকালীন চেয়ারম্যান সুবীরেশ ভট্টাচার্যের ডিজিটাল সই। পরবর্তীকালে সেই রেকমেন্ডশনের ভিত্তিতে মধ্যশিক্ষা পর্ষদ নিয়োগপত্র দিত। প্রকাশ হত তালিকা। তাতে সই করতেন কল্যাণময় গঙ্গোপাধ্যায়।

শুধু এসএসসি নয়,  প্রাইমারি-আপার প্রাইমারির ক্ষেত্রেও হত ব্যাপক দুর্নীতি। প্রাইমারির ক্ষেত্রে তার দাম ছিল ১০ থেকে ১৫ লক্ষ টাকা। আপার প্রাইমারির ক্ষেত্রে তার দাম ছিল ২০ থেকে ২৫ লক্ষ টাকা। কখনও কখনও তা ৩০ লক্ষের গণ্ডিও পার করে যেত। এসএসসি-র গ্রুপ-সি, গ্রুপ-ডি সহ সব ধরণের চাকরির ক্ষেত্রেই চলত এই দুর্নীতি। তদন্তে নেবে এসব তথ্যই উঠে এসেছে সিবিআইয়ের হাতে। কার্যত সব চাকরির টেন্ডার কার্যত নিয়ে রেখেছিল রঞ্জন। তাঁর সঙ্গে মন্ত্রী পর্যায়ের কারও যোগাযোগের কথা শোনা যাচ্ছে সিবিআইয়ের আধিকারিকদের মুখে। সূত্রের খবর, শুধুমাত্র বাগদা এলাকা থেকেই ২০০ থেকে ৩০০ জনের কাছ থেকে টাকা তুলেছিল রঞ্জন। বিভিন্ন জেলায় ছড়িয়ে ছিল তাঁর নেটওয়ার্ক। এরই সঙ্গে নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় গ্রেপ্তার হওয়া এপর এক মিডলম্যান প্রসন্ন রায়ের যোগাযোগেরও একটা স্পষ্ট ইঙ্গিত পাচ্ছেন সিবিআই আধিকারিকেরা তাও জানানো হয়েছে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার তরফ থেকে। এরই পাশাপাশি কেন্দ্রীয় এই তদন্তকারী সংস্থার আধিকারিকদের হাতে এ তথ্যও এসেছে যে, রঞ্জন নিজের হাতে প্রায় একশোজনের চাকরি করে দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। তবে কোন প্রভাবশালীর হাত এই চন্দন মণ্ডলের মাথার উপর ছিল তা জানার চেষ্টা চলছে সিবিআইয়ের তরফ থেকে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

fourteen + thirteen =