অতিরিক্ত উপার্জনের আশায় চেন্নাইয়ে যাওয়া, ফেরা হল না চাঁচলের মাশরেকুলের

চেন্নাইয়ে কাজ করতে গিয়ে আর বাড়ি ফেরা হল না মালদার চাঁচল মহকুমার ধানগাড়া বিষানপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের বালুয়াঘাটের বাসিন্দা মাশরেকুলের (২৪)। শুক্রবার সন্ধ্যা রাতে ওডিশার বালেশ্বরে করমণ্ডল এক্সপ্রেস ট্রেনের দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয়েছে মালদার ওই দিনমজুরের। এখনো মালদার চারজন দিনমজুর নিখোঁজ রয়েছে বলে প্রশাসন সূত্রে খবর। শনিবার সকালে ট্রেন দুর্ঘটনায় চাঁচলের ওই দিনমজুরের মৃত্যুর খবর শুনে তার পরিবারের সঙ্গে দেখা করেন মালতিপুরের বিধায়ক আধুর রহিম বক্সী, উত্তর মালদার সাংসদ খাবেন মুর্মু সহ জেলা পুলিশ ও প্রশাসনের কর্তারা। পরিবারের একমাত্র উপার্জন কর্তা হিসেবে ছিলেন মাশরেকুল। তার এই মর্মান্তিক মৃত্যুতে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। দুই নাবালক ছেলেমেয়েকে নিয়ে শোকাহত স্ত্রী সহ গোটা পরিবার। মৃত মাশরেকুলের মা হেরেনা বিবি জানিয়েছেন, গ্রামে দিনমজুরি করেই ছেলে সংসার চালাত। তবে বছর খানেক আগে ইটের আঘাত লাগায় ছেলে দুর্বল হয়ে পড়ে। ঠিকঠাক কাজও পাচ্ছিল না। কাজ পেলে যা উপার্জন হত তা দিয়ে সঠিক ভাবে চলতো না সংসার। সংসার চালানোর জন্য সিদ্ধান্ত নিয়েছিল চেন্নাইতে গিয়ে কাজ করবে।
বৃহস্পতিবার বিকেলে এক বছরের ছোট্ট মেয়ে হালিমাকে কোলে নিয়ে আদর করে বাড়ি থেকে বেরয় মাশরেকুল। সেই ছবি এখনো জ্বলজ্বল করছে স্ত্রী রুকসানার ফোনে। শুক্রবার দুপুরবেলায় মাশরেকুলের সঙ্গে শেষ বারের মতো কথা হয়েছিল রুকসানার। তখনো ভাবতে পারিনি এটাই শেষ কথা।
মৃতের স্ত্রী রুকসানা খাতুন বলেন, এরকম ঘটনা ঘটবে ভাবতেও পারিনি। এলাকায় কাজ ছিল না বলেই বাইরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। এখন ছোট ছেলেমেয়েদের নিয়ে কি করব ভেবে পাচ্ছি না। প্রশাসন আমাদের পাশে দাঁড়াক এটাই আবেদন করব।
খবর পাওয়া মাত্রই পরিবারের সঙ্গে দেখা করতে আসেন মালতিপুরের বিধায়ক তথা জেলা তৃণমূলের সভাপতি আধুর রহিম বক্সী। সব রকমভাবে পরিবারের পাশে থাকার আশ্বাস দিয়েছেন তিনি।
বিধায়ক আধুর রহিম বক্সী বলেন, মৃতদেহ আনার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। আমরা পরিবারের পাশে রয়েছি। তবে কেন্দ্রের উচিত অন্তত ২০ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ এবং একটা চাকরি দেওয়া পরিবারের লোককে। কারণ এই দায় কেন্দ্রের। পরিবারের সঙ্গে দেখা করতে আসেন উত্তর মালদার সাংসদ খগেন মুর্মু। তিনিও পরিবারের পাশে থাকার আশ্বাস দিয়েছেন।
এদিকে স্থানীয় ব্লক প্রশাসনের পক্ষ থেকেও মৃতের পরিবারকে প্রাথমিকভাবে ত্রাণ সামগ্রী দেওয়া হয়েছে। চাঁচল-২ ব্লকের বিডিও দিব্যজ্যোতি দাস ও চাঁচল থানার আইসি পুর্ণেন্দু কুমার কুণ্ডু মৃতের পরিবারকে সমবেদনা জানান ও পাশে থাকার আশ্বাস দেন। তাঁরা জানিয়েছেন মৃতদেহ আনার প্রক্রিয়া চলছে।
এদিকে প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, মৃত ওই শ্রমিকের গ্রাম থেকে তিন কিলোমিটার অদূরে বিষানপুরের চার শ্রমিকও চেন্নাইয়ের উদ্দেশে কাজের জন্য ট্রেন সফর করছিলেন। খবর অনুযায়ী সুস্থ রয়েছে আধুল মাতিন এবং আশঙ্কাজনক অবস্থায় মিফতাহুল আলম ও জামিরুল ইসলাম কটকের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে। তবে নুরুল ইসলামের খোঁজ মেলেনি।
জেলা প্রশাসনের একটি সূত্র থেকে জানা গিয়েছে, দুর্ঘটনাগ্রস্ত ট্রেনে মালদার ভিন্ন এলাকার আটজন রয়েছে। এদের মধ্যে পাঁচজন চাঁচলের, দুইজন বৈষ্ণবনগরের এবং একজন বামনগোলা থানা এলাকার বাসিন্দা। তবে এখনো পর্যন্ত চাঁচলেরই একজন শ্রমিকের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেছে প্রশাসন বাকিদের সম্পর্কে এখনো বিশদভাবে জানাতে পারেনি প্রশাসনের কর্তারা।
জেলাশাসক নীতিন সিংহানিয়া জানিয়েছেন, দুর্ঘটনায় এখনও পর্যন্ত মালদার একজনের মৃত্যু, আহত আরও চারজন, বাকি তিনজনের খোঁজ মিলেছে। হতাহতদের অন্যান্য সব ধরনের সহযোগিতা করবে প্রশাসন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

16 − two =