রাজ্যে পঞ্চায়েত ভোট পরিচালনা করতে মোতায়েন করতে হবে কেন্দ্রীয় বাহিনী, রাজ্যের নির্বাচন কমিশনকে এই বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে নির্দেশ দিল হাইকোর্ট। আগামী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে এটি নিয়ে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। ইতিমধ্যে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে কেন্দ্রীয় বাহিনী গোটা রাজ্যে মোতায়েন করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
বৃহস্পতিবার শুনানি চলাকালীন হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি এইরকমই ইঙ্গিত দিয়েওছিলেন। কমিশনকে হুঁশিয়ারির সুরে বলেছিলেন, ‘পরামর্শ না মানলে সব জেলায় কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়নের নির্দেশ দেব।‘ কারণ, মনোনয়ন জমা দিতে গিয়ে যে সব অশান্তির ঘটনা সামনে আসে বৃহস্পতিবার সকালে থেকেই তাতে ক্ষুব্ধ হয়ে এমনই মন্তব্য করতে দেখা গেল কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতিকে। প্রসঙ্গত, মঙ্গলবার পঞ্চায়েত নির্বাচন নিয়ে মামলায় নির্বাচন কমিশনকে পরামর্শ দিয়েছিল কলকাতা হাইকোর্ট। তবে সে পরামর্শ সম্ভবত নির্বাচন কমিশন শুনতে রাজি নয়। তারই প্রমাণ মিলেছে বুধ এবং বৃহস্পতিবারের মনোনয়ন জমা দেওয়া নিয়ে যে সব সংঘর্ষের ঘটনা সামনে এসেছে তার থেকেই। আর তাতেই রাজ্য নির্বাচন কমিশনের ওপর প্রচণ্ড ক্ষুব্ধ হয় প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চ। এরই রেশ ধরে কমিশনের নিষ্ক্রিয়তা নিয়ে প্রশ্নও তুলতে দেখা যায় কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতিকে। এরপরই রীতিমতো ভর্ৎসনার সুরে হুঁশিয়ারি দিয়ে জানানো হয় সব জেলায় কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়নের।
এদিকে স্পর্শকাতর এলাকায় কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়নের পরামর্শ পুনর্বিবেচনার আর্জি নিয়ে বুধবারই আদালতের দ্বারস্থ হন রাজ্য নির্বাচন কমিশনার রাজীব সিনহা। কমিশনের আর্জি শুনেই ক্ষুব্ধ প্রধান বিচারপতি টি এস শিবজ্ঞানম। এই ঘটনায় ক্ষুব্ধ হয়ে প্রধান বিচারপতি জানান, ‘আমি কমিশনকে উপদেশ দেওয়ার জন্য বসে নেই যে আপনারা উচ্চ আদালতে যান। আপনাদের হাতে উচ্চ আদালতে যাওয়ার সুযোগ রয়েছে। কিন্তু আপনারা যদি আমাদের নির্দেশকে কার্যকর না করার মত পরিস্থিতি তৈরি করেন তাহলে আমরা নিশ্চুপ দর্শক হয়ে বসে থাকব না।’ একইসঙ্গে এও মনে করিয়ে দেন, দুদিন আগে আদালতের দেওয়া নির্দেশকে উপেক্ষা করার ঘটনাও।
এখানেই শেষ নয়, নির্বাচন কমিশনকে তীব্র ভর্ৎসনা করেন প্রধান বিচারপতি। বলেন, ‘আমাদের প্রাথমিক মত নির্বাচন কমিশন আমাদের নির্দেশকে কার্যকর না করার মত পরিস্থিতি তৈরি করেছেন।’ এই শুনে রাজ্যের তরফে সওয়ালে জানানো হয়, ‘মঙ্গলবার আইএসএফ-এর তরফ থেকে ১৫,০০০ সমর্থক নিয়ে মনোনয়ন পেশ করতে যাওয়া হয়। সঙ্গে মনোনয়ন কেন্দ্রে ভাঙচুরও চালানো হয়। এদিকে বিজেপির দুই নেতা দুই জেলায় অশান্তি তৈরি করেছে। গোটা রাজ্য জুড়ে বিজেপি সহ বিরোধীরা অশান্তি তৈরি করছে।’
তবে রাজ্যের বক্তব্য শুনে বিস্মিত হয়ে প্রধান বিচারপতি জানান, ‘১৪৪ ধারা জারি রয়েছে। পুলিশ পদক্ষেপ করুক। নয়তো আমি সব জেলায় কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন করার নির্দেশ দেব।’ এদিকে চোপড়ায় সিপিআইএম এবং কংগ্রেস কর্মীর গুলিবিদ্ধ হয়ে মৃত্যুর ঘটনায় প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চে দৃষ্টি আকর্ষণ করে কংগ্রেস। একইসঙ্গে আর্জি জানানো হয়, অবিলম্বে সব জেলায় কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়নের নির্দেশ দেওয়ার পাশাপাশি অবিলম্বে উত্তর দিনাজপুর চোপড়ার সিসিটিভি ফুটেজ চাওয়া হোক।