পুরসভা নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় শীর্ষ আদালতে মুখ পুড়ল রাজ্যের। কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশে সিবিআই তদন্তের বিরুদ্ধে রাজ্য সরকারের তরফ থেকে যে আবেদন জানানো হয়েছিল তা সোমবার খারিজ করে দিয়ে সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতির বেঞ্চ কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশই বহাল রাখে। অর্থাৎ পুর-নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় তদন্ত চালিয়ে যাবে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা সিবিআই-ই। সোমবার এই মামলার শুনানিতে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার পক্ষে অ্যাডিশনাল সলিসিটর জেনারেল এ এস ভি রাজু জানান, শিক্ষক দুর্নীতি মামলা ও পুরসভা নিয়োগ দুর্নীতি মামলা- দুটি ক্ষেত্রেই একাধিক সাধারণ অভিযুক্ত রয়েছেন। এই সওয়ালকে মান্যতা দিয়েছে প্রধান বিচারপতির বেঞ্চ।
এদিকে স্কুলে শিক্ষক ও পুরসভার নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় একে অপরের সঙ্গে সম্পর্ক রয়েছে কি না তা নিয়েও উঠেছে প্রশ্ন। এই মামলার কে তদন্ত করবে সিবিআই না রাজ্য পুলিশ তা নিয়েও মামলা চলেছে কলকাতা হাইকোর্টে। এদিকে এই মামলায় হাইকোর্টের নির্দেশেই সমান্তরালভাবে তদন্ত করছে সিবিআই-ইডি। সেই বিষয়টিকে চ্যালেঞ্জ করেই সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয় রাজ্য।
সোমবারের শুনানিতে দেশে শীর্ষ আদালতে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার পক্ষে অ্যাডিশনাল সলিসিটর জেনারেল এ এস ভি রাজু সওয়াল করতে গিয়ে জানান, শিক্ষা দুর্নীতি মামলা তদন্ত করতে গিয়ে অয়ন শীলের হদিশ পাওয়া যায়। তাঁর বাড়িতে তল্লাশি করতে গিয়ে গুরুত্বপূর্ণ নথি মিলেছে। এই নথি থেকেই পুরসভা দুর্নীতির কথা জানা গিয়েছে। ২০১৪ সাল থেকে এখনও বাংলার একাধিক পুরসভায় ১৮০০ নিয়োগ হয়েছে। ১৬টা পুরসভায় দুর্নীতির প্রমাণ মিলেছে। একই ব্যক্তি স্কুলে ও পুরসভার নিয়োগ দুর্নীতিতে জড়িত। আর এই ঘটনা যে সত্য তার বড় প্রমাণ অয়ন শীল। এই অয়ন শীল ‘ইন্টারমেলিংয়ের’ কাজ করেছেন। পাশাপাশি কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার আইনজীবী আরও সওয়াল করেন, দুটি ক্ষেত্রেই নিয়োগে দুর্নীতিতে প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী, বিধায়কের ভূমিকাও থাকতে পারে। সেক্ষেত্রে এই তদন্ত অত্যন্ত জরুরি।
এরপরই রাজ্যের তরফে আইনজীবী কপিল সিব্বল দুটি যুক্তি সামনে আনেন। প্রথম যুক্তি, এক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার হাতে পুরসভায় নিয়োগ দুর্নীতি সংক্রান্ত কোনও জোরাল তথ্য প্রমাণ নেই। সেখানে এই তদন্তের কোনও প্রয়োজনীয়তাই নেই। দ্বিতীয় যুক্তি, কেন রাজ্য পুলিশকে এক্ষেত্রে যুক্ত করা হচ্ছে না তা নিয়েই। পুলিশকে এড়িয়ে কেন তদন্ত করছে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা এ প্রশ্নও তোলা হয়। যদিও সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চ স্পষ্ট করে দেয়, সিবিআই সুনির্দিষ্ট এফআইআর দায়ের করে তদন্ত শুরু করেছে। সেক্ষেত্রে রাজ্যের বলা ‘তথ্য প্রমাণ নেই’ সংক্রান্ত যুক্তি আদালতে গ্রাহ্য হচ্ছে না।